ধর্ম

আত্মীয়-স্বজনকে দান করায় দ্বিগুণ সওয়াব

মানুষের মাঝে ধন-সম্পদের প্রতি মোহ ও আকর্ষণ অত্যন্ত বেশি। দুনিয়ার জীবনে ধন-সম্পদের প্রয়োজনীয়তাই এ আকর্ষণ তৈরি করে দেয়। অর্থের জন্যই মানুষের মনে কামনা-বাসনা জাগ্রত থাকে। অর্থ থাকলেই মানুষ নিজের জন্য, প্রিয় মানুষদের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য খরচ করে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় সম্পদের মালিকদের তাদের অসহায় আত্মীয়-স্বজনদের অর্থ-সম্পদ দিয়ে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন।আল্লাহ তাআলা তাঁর দেয়া জীবিকা হতে অসহায়দের জন্য খরচ করার বা দান-সাদকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাস মুক্তির জন্য দান করবে।’আল্লাহর এ হুকুমের মধ্যে ইসলামের নির্দেশিত সুষম ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উত্তম ক্ষেত্রসমূহের শ্রেণী বিন্যাস লক্ষণীয়। তাঁর হুকুমের মধ্যে সামাজিক ব্যবস্থাপনার একটি সংক্ষিপ্ত এবং সুন্দর রূপ ফুটে ওঠেছে।আর্থিক সহায়তার সূচনা করতে আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম দানের নির্দেশ দিয়েছেন নিজের আত্মীয়-স্বজনদেরকে। অতপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের দান-সাদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ করণেই যারা সম্পদের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর বিধানের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে আত্মীয়-স্বজনদের দান বা আর্থিক সহযোগিতা করবে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করেন।প্রথমেই আত্মীয়-স্বজনকে দানের হুকুমের কারণসমাজ জীবনের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, একই বাবা-মার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও একজন অত্যাধিক ধনী আর অন্যজন আর্থিক দৈন্য দশায় জীবন অতিবাহিত করে। ভাই আকাশচুম্বী প্রসাদ নির্মাণ করে আর বোন সামান্য কুঁড়ে ঘর তৈরি করতে হিমশিম খায়; সামান্য এ ঘর তৈরিতে সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয়।চাচা ব্যক্তিগত অত্যাধুনিক গাড়ি হাঁকিয়ে চলবেন আর ভাতিজা অর্থাভাবে ন্যূনতম রিকশায় চলাচল করতে পারে না। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা সমাজের প্রত্যেককেই তাদের অসহায় আত্মীয়, জ্ঞাতি, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগ্নে-ভাগ্নি এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে দান বা সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন।আত্মীয়-স্বজনের পর…আত্মীয়-স্বজনকে সহযোগিতার পর পর্যায়ক্রমে নিজের পাড়া-মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন বা নিজের শহরের ইয়াতিম ছেলেমেয়ে, যাদের কোনো অভিভাবক নেই, কোনো সম্পদশালী পূর্বপুরুষ বা কোনো তত্ত্বাবধায়ক নেই।অতপর সম্পদশালীদের উচিত, উম্মতের নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও সাধারণ গরিবদের দান করা; এটা তাদের অধিকার।নিঃস্ব ও অসহায় লোকদের পর যারা মুসাফির, প্রবাসী, পথচারী ও ফুটপাতের বাসিন্দা; যারা পথ চলার খরচ ও পাথেয় হতে বঞ্চিত বা সফর সম্পাদনে অপরাগ। যাদের সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে আসে না তাদের সহযোগিতা করা।কুরআনে ঘোষিত দানের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর কোথাও অভাব-অনটন থাকতো না। দারিদ্র্যের কষাঘাতে মানুষের জীবন জর্জরিত হতো না। সমাজ থেকে অভাব-অনটন-দারিদ্র্য, জীবনধারনের সংকট দূর করতে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে ধারাবাহিকভাবে দান সহযোগিতায় ধনী ও সম্পদশালীদের এগিয়ে আসা একান্ত কর্তব্য।পরিশেষে…দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বলেছেন, ‘তোমরা সুস্থ অবস্থায় এবং সম্পদের প্রতি চাহিদা থাকা অবস্থায় দারিদ্রকে ভয় কর এবং ধনী হওয়ার ইচ্ছা রেখে দান করবে।’ তবে সম্ভব অধিক সম্পদের মালিক হওয়া।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের প্রতি লক্ষ্য রেখে কুরআনে বর্ণিত পন্থা অবলম্বন করে দান-সাদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি

Advertisement