বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবেই সমাদৃত অমিতাভ রেজা চৌধুরী। প্রথমবারের মতো তিনি নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র। ‘আয়নাবাজি’ নামের সেই ছবিটি দিয়ে মন্দার বাজারে তিনি রাতারাতি বনে গেছেন চলচ্চিত্রের সফল নির্মাতা। তার ছবিটি দিয়ে দর্শক হলে ফিরেছে বহুদিন পর, দারুণভাবে। মুক্তির চার সপ্তাহ পেরিয়ে ছবিটি চলছে ৭৮টি সিনেমা হলে। সবখানেই দর্শকদের ভিড় আশা জাগিয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পে। স্বাভাবিকভাবেই ‘আয়নাবাজি’ এখন ‘টক অব দ্য বাংলা ফিল্ম’। কোন অনুপ্রেরণায় আয়নাবাজির মতো গল্প নিয়ে কাজ করলেন অমিতাভ? কেমন ছিলো এর নির্মাণ ও মুক্তি পরবর্তী অভিজ্ঞতা? সেই পেছনের গল্প নিজেই জানালেন অমিতাভ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় মুভিয়্যানা ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত চলচ্চিত্রের লাইভ আলাপে অতিথি ছিলেন আয়নাবাজির পরিচালক অমিতাভ রেজা। তিনি বলেন, ‘দু-তিন বছর আগে একটা দৈনিক সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল আসামির পরিবর্তে অন্য এক লোক ভাড়ায় জেল খেটেছে। এই বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিলো ঘটনাটি। এই ঘটনাটিই আয়নাবাজি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’অমিতাভ আরো বলেন, একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে আমি বিশ্বাস করি চলচ্চিত্রের রসদ নিতে হয় সমাজ থেকে, জীবন থেকে। তবেই সেই ছবি মানুষের হয়ে ওঠে, মানুষকে সিনেমা হলে নিয়ে আসে। আর অনেকেই বলছেন, ‘আয়নাবাজি’র গল্প কোনো একটি ছবির নকল। এটা ঠিক নয়। সিনেমা দেখে দেখে সিনেমা বানানো যায় না। যদি তাই হতো তাহলে যে যতো বেশি সিনেমা দেখে সে ততো ভালো সিনেমা বানাতো। ব্যাপারটি তো এমন নয়। তাই না? আয়নাবাজি একটি সংবাদ থেকে অনুপ্রাণীত।ছবি নির্মাণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে অমিতাভ বললেন, ‘চিত্রনাট্য তৈরি হবার পর আমি দুই মাস পুরান ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থেকেছি। পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমি চলচ্চিত্রের গল্পটিকে আত্মস্থ করার জন্য এ কাজটি করেছি। অভিনয় শিল্পীদের মধ্যেও এই ভাবনা ছড়িয়ে দিয়েছি। এটা আমার সৌভাগ্য যে, এই ছবিটিতে প্রত্যেকেই তাদের সেরা অভিনয়টা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আর আয়না চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় নিয়ে বলার মতো কিছুই নেই। ছবিজুড়েই দর্শক আয়নাকে খুঁজেছে। কখন সে হাজির হবে। এটা নির্মাতা হিসেবে আমার জন্য আনন্দের।’তবে ছবিটি পাইরেসিতে আক্রান্ত হওয়ায় কিছুটা বিমর্ষ এই পরিচালক। খানিকটা অভিমানীও। তিনি বলেন, ‘রবির সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিলো ছবির গান নিয়ে। আর কথা ছিলো ছবিটিও তারা আপলোড করবে মুক্তির চার সপ্তাহ পর। সেটি হবে ডাউনলোডের কোনো অপশন থাকবে না এমন চুক্তিতে। মোবাইলের চেয়ে বড় স্কিনে চালানো যাবে না। তারা সেই শর্ত ভঙ্গ করায় এটা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে হল মালিকদের কাছে অপরাধী করে তুলেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই কষ্ট পেয়েছি। এ কারণে পরবর্তীতে চলচ্চিত্র বানানোর আগ্রহ কমে গেছে।’অমিতাভ আরো বলেন, একটি ছবি দিয়ে সাফল্য পাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু নিজের সন্তুষ্টি কিংবা পুরো চলচ্চিত্রের সামগ্রিক অবস্থা বদলে যায় না। তবে এটুকু বিশ্বাস জন্মেছে, ভালো ছবি হলে দর্শক হলে আসবেই।অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মুভিয়্যানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুনসহ তরুণ নির্মাতারা। আলোচনা শেষে ৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র প্রদর্শিত হয়। সেগুলো ছিলো মাসুম বিল্লাহর কমরেড, ভিকি জাহেদের মোমেন্টস ও মাইনুল শাহিদের ফেরা।এলএ/এবিএস
Advertisement