খেলাধুলা

আবারো ইংলিশ লেট অর্ডারদের হাতে ভাঙলো টাইগারদের লিডের স্বপ্ন

আচ্ছা বলুনতো ইংল্যান্ডের সঙ্গে এ সিরিজে মুশফিক বাহিনীর পার্থক্যের আসল জায়গাটা কোথায়? ঠিক কোন ডিপার্টমেন্টে মুশফিকের দল পিছিয়ে আর এগিয়ে অ্যালিস্টার কুকের দল? কেউ কেউ হয়তো বলবেন মঈন আলির অফস্পিন। পুরো সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে নিরন্তর সমীহ আদায় করে নিয়েছেন। আবার উইকেটও পেয়েছেন ১০টি। আবার কারো কারো মতে সিরিজে ইংলিশ পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টটাই রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যারা চট্টগ্রামে ভাইটাল ব্রেক থ্রু দিয়ে নিজেদের দলকে এগিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছেন। পুরো সিরিজে স্টোকস, ব্রড ও ওকসদের রিভার্স সুইংয়ের সত্যিকার জবাব দিতে পারেননি বাংলাদেশ মিডল ও লেট অর্ডার। এই টেস্টে সেই না পারার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। অফস্পিনার মঈন আলি একা ৫ উইকেটের পতন ঘটালেও আসল সর্বনাশ হয়েছে ওকসের (তিন উইকেট) ও স্টোকসের রিভার্স সুইংয়ে। আর তাদের সাঁড়াশি বোলিংয়েই শেষ ৮ উইকেটের পতন ঘটেছে ৩০ রানে। এর বাইরে আরো একটা জায়গা আছে। যেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে। তাহলো মিডল ও লেট অর্ডার ব্যাটিং। যে জায়গায় ইংলিশরা এগিয়েই ছিল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসের শুরুতে বিপদে ছিল ইংলিশরা।  প্রথবার ১০৬ রানে ইনিংসের প্রথম অর্ধেক শেষ হবার পর মনে হচ্ছিল সব শেষ। তা হয়নি। তারপর বেয়ারস্টো (৫২), ওকস (৩৬) আর আদিল রশিদের চেষ্টায় সেখান থেকে ২৯৩ পর্যন্ত যাওয়া। এর মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটে ওকস ও আদিল রশিদের জুড়ে দেয়া ৮৮ রানে খাদের কিনারা থেকে ওঠা। পরের ইনিংসে আরও খারাপ অবস্থা থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো। সাকিব-মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে ৬২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে স্টোকস (৮৫) ও বেয়ারস্টো (৪৭) সব দায়দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে খেললে বাংলাদেশকে বড় টার্গেট তাড়া করতে হয়। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানের জুটি গড়লে সঙ্কট কাটিয়ে মুশফিক বাহিনীকে ২৮৬ রানের টার্গেট দেয় অ্যালিস্টার কুকের দল।  চট্টগ্রামের পর ঢাকা টেস্টেও মিডল ও লেট অর্ডার ব্যাটিংই টেনে তুললো ইংলিশদের। বাংলাদেশের ২২০ রানের জবাবে আজ লাঞ্চের আগেই ১৪৪ রানে আট উইকেট হারিয়ে ধুকছিল ইংল্যান্ড। তখন বাংলাদেশের ভক্ত ও সমর্থকদের আনন্দ আর দেখে কে? অনিবার্য লিডের আশায় পুরো জাতি উন্মুখ। সে আশাটা আরও বেশি প্রবল হয়েছিল একটি বিশেষ কারণে। পুরো সিরিজে ইংলিশ লেট অর্ডার ব্যাটিংকে চাঙ্গা রেখেছেন উইকেটরক্ষক বেয়ারস্টো ও স্টোকস।  আউট হওয়া আটজনের মধ্যে ছিলেন তারাও। তখন মনে হচ্ছিল এবার আর লিড নেয়া আর আটকায় কে? কিন্তু হায় শেষ পর্যন্ত সেই কাঙ্ক্ষিত লিড হলো না এবারও। চট্টগ্রাম টেস্টে দুবার যারা টেনে তুলেছিলেন সেই বেয়ারস্টো আর স্টোকস দুজন ফিরে যাবার পর মনে হচ্ছিল বাকিরা হতোদ্যম হয়ে পড়বেন। কিন্তু না। ওকস আর আদিল রশিদ এতটুকু বিচলিত না হয়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়ালেন। তাদের হাত ধরেই শেষ অবধী বাংলাদেশকে পিছনে ফেলা। নবম উইকেটে ওয়েক্স আর স্টোক্সের জুড়ে দেয়া অবিচ্ছিন্ন ৯৯ রানেই ইংল্যান্ড টপকে গেল বাংলাদেশের স্কোর। এই পিছিয়ে পড়া থেকে আর সামনে আসা সম্ভব হবে কি? লাঞ্চের এক ঘণ্টা ২০ মিনিট পর ইংলিশরা যখন মুশফিকদের রান টপকে গেলো আশা ভঙ্গের বেদনায় তখন নীল ভক্ত সমর্থকরা। ইংলিশ লেট অর্ডারে খালি চোখে লেট অর্ডার মনে হলেও ওকস ও আদিল রশিদ কারোই ব্যাটিং ক্যারিয়ার ফেলনা নয়।  দুজনেরই ইংলিশ কাউন্টিতে সেঞ্চুরি আছে। ওকস করেছেন ৯টি শতরান। আর ১৯ বার পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছেছেন। আর লেগস্পিনার আদিল রশিদ ১৫৩ টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে সেঞ্চুরি আছে ১০টি। হাফ-সেঞ্চুরি ৩৫টি। টেস্টে না হলেও ইংলিশ কাউন্টিতে আজকের এমন খাদের কিনারায় পড়ে বহুবার দলকে টেনে তোলার রেকর্ড আছে তাদের। শেরেবাংলায় সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই বাংলাদেশকে আশা ভঙ্গের বেদনায় ঠেলে দেয়া। ওকস ও আদিল রশিদের দৃঢ়তা এবং দলের বিপর্যয়ে নিজের মত করে না খেলে পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠাউরে ব্যাট চালনার প্রশংসা না করার উপায় নেই। তারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলের বিপর্যয় এড়াতে সামর্থ্যের শেষ বিন্দু ঢেলে দিয়ে চেষ্টা করেছেন। বিপরীতে বাংলাদেশ শিবিরের রক্ষণাত্মক মানসিকতাও তাদের খেলাকে সহজ করে দিয়েছে। তখনো ইংলিশদের দরকার ছিল ৭৬ রান। দরকার ছিল দুটি মাত্র উইকেট। সোজাসুজি শতভাগ আক্রমণাত্মক হতে পারতেন মুশফিক। একদম পুরো আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে ব্যাটসম্যানের আশপাশে কিপারসহ ৪/৫ জন ফিল্ডার রেখে সাকিব-তাইজুল ও মিরাজকে ব্যবহার করলেই হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু মুশফিত সে পথে হাঁটলেন না। অষ্টম উইকেট পতনের পরও ওকস আর আদিল রশিদকে ঠাণ্ডা মাথায় চাপমুক্ত হয়ে খেলার সুযোগ করে দিলেন উল্টো ফিল্ডারদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে। আর অভিজ্ঞ ও চতুর ওকস-আদিল রশিদ যখনই টের পেলেন স্বাগতিকরা ডিফেন্সিভ, তখন তারা সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলে শুধু আলগা বলের অপেক্ষায় থাকলেন। তাদের আলগা বলের খোরাক দিলেন কামরুল ইসলাম রাব্বি আর শুভগত হোম। মিরাজ, তাইজুল ও সাকিবকে সতর্ক ও সাবধানে খেলে খেলে দুশ’র আশপাশে গিয়ে রাব্বি ও শুভগতর বলে হাত খুলে খেলেই বাংলাদেশের রান টপকে গেলেন ওকস ও আদিল। এআরবি/এমআর/এমএস

Advertisement