মতামত

বিষফোড়া থেকে কবে মুক্তি?

নগরবাসীর পথ চলাচল নিশ্চিত ও রাজধানীর দুঃসহ যানজট থেকে রক্ষা পেতে হলে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে হবে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করা নিয়ে নানা সময় অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হয়েছে তা তো ফুটপাথের করুণ অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গুলিস্তানে ফুটপাথে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ সময় গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ঢাকা ট্রেড সেন্টার উত্তর, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের চারপাশ থেকে পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের মাত্র ১৬ ঘণ্টা পর ফুটপাথে আবার অবৈধভাবে দোকানপাট বসেছে৷ফলে এই অভিযান আখেরে কোনো কাজ দেয়নি। এ ধরনের অভিযান এই প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার উচ্ছেদ কার্যক্রম চলেছে। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু যে লাউ সেই কদু। কদিন পরই অবস্থা আবারো তথৈবচ। কিন্তু এভাবে চলতেই থাকবে?রাজধানীর ফুটপাথে অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর মোট দুই হাজার ২৮৯ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অনেকাংশই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দখলে। বিশেষ করে ঢাকার ফুটপাথগুলো দখলে থাকায় যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষজন। যানজটের নিগড়ে পিষ্ট মানুষের কাছে এ যেন গোদের ওপর বিষফোড়া। সাধারণত হকাররাই ফুটপাথগুলো দখল করে রাখে। এজন্য ফুটপাথগুলো হকারমুক্ত রাখা প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহায় সম্বলহীন এসব মানুষ ঢাকা শহরে কাজের সন্ধানে এসে হকার পেশায় যুক্ত হয়ে পড়ে। আসলে ঢাকায় যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ ভাগ রাস্তা দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ ভাগ। মেইন রোড আছে ৩ ভাগ। এই ৩ ভাগের ৩০ ভাগ দখল করে অবৈধ দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকাররা। রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাথ প্রাইভেট গাড়ি দখল করে রেখেছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তার পাশেই যেসব দোকান ও আবাসিক ভবন রয়েছে তাদের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তার অর্ধেকটা তারা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। দিনের পর দিন এ প্রকাশ্যে এ ধরনের কার্যক্রম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, ‘হকারদের উচ্ছেদ করতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। হকারদেরও জীবন আছে। এই আয়ে তাদের সংসার চলে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হকারদের উচ্ছেদ করা যাবে না।’ হকার উচ্ছেদের এই মানবিক দিকটি অবশ্যই বিবেচ্য। কিন্তু দিনের পর দিন তো এভাবে চলতে পারে না। এ জন্য চাই সুস্পষ্ট নীতিমালা। কারা প্রকৃত হকার তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। এরপর তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। হকারদের ফুটপাথের ব্যবসা যতোটা না তাদের জন্য তারচেয়ে বেশি যারা হকারদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা নিয়ে থাকেন তাদের জন্য। এ কারণেই সমস্যাটি জিইয়ে রাখা হয়। কিন্তু মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন এবং নগরবাসীকে যানজট মুক্ত রাখতে হলে ফুটপাথ দখলমুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। আসলে ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে হলে উভয়পক্ষ থেকেই দায়িত্বশীল কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। স্রোতের মতো হকাররা আসতে থাকবে আর তারা ফুটপাথ দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য করবে তারপর পুনর্বাসনের দাবি তুলবে এটি কখনও বাস্তবসম্মত নয়। এজন্য সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এ লক্ষ্যে একটি সুসমন্বিত পন্থায় এগিয়ে যেতে হবে।এইচআর/এবিএস

Advertisement