ধর্ম

নামাজে বিশ্বনবির রুকুর পদ্ধতি ও দোয়া

নামাজ মুমিনের জন্য মিরাজস্বরূপ। নামাজের প্রতিটি কাজ হতে হবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মানুযায়ী। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সেভাবে নামাজ আদায় কর; যেভাবে আমাকে পড়তে দেখেছো।’ সুতরাং নামাজের প্রতিটি রুকনই আদায় করতে হবে সঠিক নিয়মে। বান্দা যখন একনিষ্ঠভাবে বিশ্বনবির শিখানো পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করে তখন এ নামাজ নিঃসন্দেহে আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।মাগরিব ও ইশা নামাজে বিশ্বনবির ক্বিরাআতনামাজে রুকু করা ফরজ কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে রুকু করেছেন আমাদের সেভাবে রুকু আদায় করা আবশ্যক। আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের রুকুতে একাধিক দোয়া পড়তেন। যা তুলে ধরা হলো-রুকুর পদ্ধতিরুকু করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাতের তালু তাঁর উভয় হাঁটুর উপর রাখতেন। মনে হত যেন, তিনি উভয় বাহুকে খুঁটির মত শক্ত করে উভয় হাত দিয়ে উভয় হাঁটু ধরে আছেন।রুকুর বাহুদ্বয়কে পার্শ্বদেশ হতে পৃথক করে রাখতেন এবং পিঠকে সোজাভাবে লম্বা করে রাখতেন।অর্ধনমিত অবস্থায় মাথা উপরের দিকে বেশি উঠিয়েও রাখতেন না এবং নীচু করেও রাখতেন না; বরং পিঠ বরাবর সোজা করে রাখতেন।রুকুর দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুতে বলতেন-উচ্চারণ : সুব্‌হানা রাব্বিয়াল আ’জিম।অর্থ : আমি প্রশংসার সাথে মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ননা করছি।হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রুকু ও সিজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়তেন-উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি।’ (বুখারি ও মুসলিম)অর্থ : আপনার  প্রশংসা হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রভু! আপনার প্রশংসার সহিত আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রুকু ও সিজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়তেন-উচ্চারণ : ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’ (মুসলিম)অর্থ : ‘সকল ফেরেশতা এবং জিবরিলের প্রতিপালক অতিপবিত্র।’আবার কখনো তিনি বলতেন-উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু খাশাআ’ লাকা সাময়ি’ ওয়া বাসারি ওয়া মুখ্খি ওয়া আ’জমি ওয়া আ’সাবি।’অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার জন্যই রুকু করছি। একমাত্র তোমার প্রতিই ঈমান এনেছি এবং তোমার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। তোমার ভয়ে ও শ্রদ্ধায় আমার কান, আমার চোখ, আমার মন-মগজ, আমার হাড় ও আমার পেশী বিনীত হয়েছে। এ দোয়াটির ব্যাপারে বিশেষ কথা হলো তিনি এটি রাতের নামাজের রুকুতে পাঠ করতেন।রুকুতে অবস্থানরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত রুকুতে এতটুক সময় অবস্থান করতেন যে, যাতে স্বাভাবিকভাবে দশবার ‘সুব্‌হানা রাব্বিয়াল আ’জিম’ পড়া যেত। সিজদাতেও তিনি অনুরূপ সময় অবস্থান করতেন। অর্থাৎ তিনি রুকু ও সিজদাতে সমান পরিমাণ সময়ই অবস্থান করতেন। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র রাতের নামাজেই কখনো কখনো একটু সামান্য সময় বেশি অবস্থান করতেন।সতর্কতারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু এবং সিজদার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তিনি সব সময় রুকু হতে ওঠে পিঠ সোজা করে দাঁড়াতেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। হাদিসে এসেছে- ‘ঐ ব্যক্তির নামাজ বিশুদ্ধ হবে না যে রুকু ও সিজদায় পিঠ সোজা করে না।’আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজে বিশ্বনবির নিয়মে রুকু করার এবং তাঁর পঠিত দোয়াগুলো যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস

Advertisement