রাজধানীর গুলিস্তানে অবৈধ হকার উচ্ছেদ অভিযানে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ও ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি-সোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনায় মেয়র সাঈদ খোকনকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নগরীর সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি এর কঠোর সমালোচনা করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও। তারা বলছেন, একজন নির্বাচিত নগরপিতার এভাবে নাগরিকের ওপরে চড়াও হওয়া মেনে নেয়া যায় না। এটি আইনসিদ্ধও নয়। তবে নগরবাসীর চলাচলের পথ সুগম রাখতে হকার উচ্ছেদ যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাও তার দায়িত্ব।গতকাল বৃহস্পতিবার গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট ও তার আশপাশের ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সময় হকারদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মচারী-মার্কেট সমিতি এবং হকারদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। উচ্ছেদের বাধা দেয়ায় মার্কেট সমিতির এক নেতাকে আটকের পর বিক্ষুদ্ধ হকাররা দলবল নিয়ে নগর ভবনে যায়। এদের কয়েকজন মেয়রের দফতরে ঢুকে পড়ে। পরে মেয়রের নেতৃত্বে নগর ভবনের কর্মচারী এবং মহানগর ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হকারদের ধাওয়া করে। শুক্রবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের অভিযান চলাকালে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুই যুবক হকারদের ধাওয়া করেন। এদের একজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন। অন্যজন ওয়ারী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান। তাদের দুজনের হাতে পিস্তল ও রিভলবার দেখা যায়। কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন তারা। এছাড়া অভিযানকালে হকিস্টিক, লাঠি ও বাঁশ হাতে নিয়ে অবস্থান করে নগরভবনের মহানগর ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ ও নগরভবনের কর্মচারীরা।এমন পরিস্থিতিতে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো গুলিস্তানে। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করতে থাকে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে গণপরিবহনে আটকা পড়েন পথচারীরা। এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন সাঈদ খোকন। প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এটা কাম্য না। সংগঠনের কর্মীদের হাতে অস্ত্র আসলে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়বে। প্রজ্ঞা দিয়ে এসব বিষয় মোকাবেলা করা উচিত।তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদের বিষয়টি খুবই জটিল। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। এতে অনেকেই সুযোগ নেয় এবং নিচ্ছে। মেয়রের কাছ থেকে এক দিকে হকার উচ্ছেদে জোরালোভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ব্যবহার হচ্ছেন। এটা আসলে আইনের শাসনের বড় অন্তরায়। যাদের ওপর দায়িত্ব আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ঠিক তাদের দ্বারাই আবার আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হকার উচ্ছেদের বিষয়টি ইতিবাচক। তবে ইতিবাচক কাজ নেতিবাচক পন্থা দিয়ে হয় না। যে লক্ষে সে পৌঁছতে চায়, তা অর্জন যেভাবেই ইচ্ছে সেভাবে নয়। পদ্ধতিটাও মহৎ হতে হবে। তাকে প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে কেউ সুযোগ নিতে না পারে। উচ্ছেদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনিহা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা তো (পুলিশ) ওদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায়। সেজন্যই উচ্ছেদে যেতে যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, এটা আসলেই কোনোভাবে ঠিক হয়নি। আমরা তাকে (সাব্বির হোসেন) নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি শুনেননি। মেয়র নিজে চাইলে প্রশাসন দিয়ে এটা ঠিক করে নিতে পারবেন। না করেও কি করবেন? পুলিশ তো কথা শুনে না।একই মত ব্যক্ত করেন ডিএসসিসির একজন জ্যেষ্ঠ ওয়ার্ড কমিশনার। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, মেয়রের উচিত ছিলো এ ধরনের পরিস্থিতি প্রজ্ঞা দিয়েই মোকাবেলা করা। এর জন্য নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তিনি বর্তমানে ঢাকার মেয়র। সরকার দলের নেতা। প্রশাসন যদি কথা না শোনে তিনি চাইলে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিতে পারেন। এভাবে দলবল নিয়ে হকারদের ওপর ছড়াও হওয়া মেয়রের পক্ষে শোভ পায় না। গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, খোকন সাহেবের পারদর্শীতার অভাব রয়েছে। তিনি চাইলে এ সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারেন। যেমনটা তার বাবা করতো। কিন্তু তিনি কখনো আমাদের নিয়ে বসেন না। আলোচনা করেন না। জোর প্রয়োগ করে কিছু করা যায় সমাজে এমন নজির কম। এমএসএস/জেএইচ/এএইচ/এমএস
Advertisement