তার যখন টেস্ট অভিষেক হয়, তখন দলের চার ক্রিকেটার জাভেদ ওমর, মোহাম্মদ রফিক, হাবিবুল বাশার ও খালেদ মাসুদ পাইলট ৩০-এর ঘরে। এছাড়া বাকি সদস্য নাফীস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, শাহাদাত হোসেন রাজীব ও আনোয়ার হোসেন মনিরও তখন মুশফিকুর রহীমের চেয়ে কয়েক বছরের বড়। ঐ দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে ১১ বছর ৫ মাস আগে যখন লর্ডসে অভিষেক হলো, তখন মুশফিক সবে কৈশোর পার করা এক তরুণ। তার ছোট-খাটো গড়ন আর নিষ্পাপ মুখায়ব দেখে অবাক হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। বিশেষ করে ছয় ফুট চার ইঞ্চির স্টিভ হারমিসন, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটপ আর ছয় ফুট ২ ইঞ্চির ম্যাথিউ হগার্ডের সামনে মুশফিককে রিতিমতো এক কিশোর মনে হয়েছে। ঐ ম্যাচে যিনি মুশফিক তথা টিম বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন, সেই হাবিবুল বাশার ২০০৫ সালে ২৫ মে-এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়েও বলেছেন, ‘বিশ্বাস করুন মুশফিক তখন একদমই ছোট্ট একটি ছেলে।’ রোববার পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সঙ্গে মুশফিকের অভিষেক টেস্ট নিয়ে আলাপে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার অনেক কথার ভিড়ে একটা কথা জানাতে ভুল করেননি। তাহলো- সাড়ে ১১ বছর আগে ১৭ বছর ৩৫১ দিনের সবে কৈশোর পার করা মুশফিক তখনো ব্যাটিং টেকনিকে ছিলেন সবার সেরা। বাশারের মূল্যায়ন, বয়স নিতান্তই কম। দেখতেও ছোট-খাটো। মুখশ্রীও নিষ্পাপ। সব মিলে তাকে খুবই ছোট দেখাতো। কিন্তু তাতে কি? তার ব্যাটিং টেকনিক সম্পর্কে তিনি একা নন, পুরো দল নাকি অন্যরকম শ্রদ্ধাশীল ছিল। টেকনিকের দিক থেকে তখনই নাকি মুশফিককে দলের সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হতো। এসব কথা জানাতে গিয়ে বাশার বলেন, ‘মুশফিক যখন শুরু করছিল তখন সে রিতিমতো একটি বাচ্চা ছেলে। তার কচি ও নিষ্পাপ মুখায়ব- আমরা সবাই তার সাথে খুনসুুটি করতাম। মজা করেছি প্রচুর। দুষ্টুুমিও হয়েছে যথেষ্ঠ।’ কিন্তু তার টেকনিক নিয়ে কারো মনেই সন্দেহ ছিল না। আমরা তখনই তাকে মানে, ব্যাটসম্যান মুশফিককে বেশি হাই-রেইট করতাম। সবার মধ্যেই একটা অন্যরকম উচ্চ ধারণা ছিল। তার টেকনিক ও সামর্থ নিয়ে সবার আলাদা সমীহ ছিল। টেকনিক্যালি তখনই মুশফিক অনেক এগিয়ে। তার মতো পরিপাটি ব্যাটিং টেকনিক তখন ঐ দলের আর কারোরই ছিল না।’ কিন্তু তার শুরু তো ভালো হয়নি। প্রথম ইনিংসে ১৯ আর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩ রানেই ফিরে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যানের শুরু তার চেয়ে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়। শুরু দেখে কি মনে হয়েছিল? এমন প্রশ্নর জবাবে হাবিুল বাশার বলেন, ‘সেটা পরিসংখ্যানের খাতায়। হ্যাঁ, এটা সত্য শুরুতে মুশফিক বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। সমালোচকদের দৃষ্টিতে তার শুরু ভালো হয়নি। বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যানই মুশফিকের চেয়ে উজ্জ্বল শুরু করেছিলেন। অনেকেই আছেন যাদের শুরু দেখে মনে হয়েছিল অনেক দূর যাবে। কিন্তু তাদের বড় অংশ ততদূর যেতে পারেনি।’সাবেক অধিনায়ক আরো যোগ করেন, ‘মুশফিকের ক্ষেত্রে আমার তা মনে হয়নি। আমি জানতাম, সে বড় ব্যাটসম্যান- ভালো করবে। অনেক দূর যাবে। আজ এই ভেবে আরো বেশি লাগে যে, আমার সে ধারণা সত্য হয়েছে। আমি খুশি, মুশফিককে যেমন ভেবেছিলাম, তেমনই হয়েছে।’ মুশফিককে এক ব্যতিক্রমী ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যা দিয়ে বাশার বলেন, ‘সে আসলেই একটা ব্যতিক্রমী চরিত্র। অনেকের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রমী। হি ইজ এ অনেষ্ট ক্রিকেটার। তার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা তার সামর্থ্য আছে।’ বাশারের মূল্যায়ন, বাংলাদেশ অনেক কম টেস্ট খেলে বলেই মুশফিকের ম্যাচ কম। না হয়, তার ১০০+ টেস্ট খেলা উচিৎ ছিল। ব্যাটসম্যান ও ক্রিকেটার মুশফিকের প্রশংনায় পঞ্চমুখ হলেও কিপার মুশফিককে নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি বাশার। তার ধারণা, কিপিংয়ের প্রতি নজর কমিয়ে ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগী হলে ভালো করবেন মুশফিক। তাইতো কণ্ঠে এমন সংলাপ, ‘আমি চাইবো এক থেকে দুই বছর পর তার কিপিং নিয়ে সে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আমার মনে হয়, সে যদি ছয়ে না নেমে টেস্টে চারে ব্যাট করে তাহলে আরো বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্র পাবে।’এখন মুশফিকের টেস্ট গড় ৩২+। কিন্তু বাশারের ধারণা সেটা তার সত্যিকার মানের সাথে মানানসই না। ‘মুশফিকের এখন যা গড়, সে ঐ মানের নয়। তার চেয়ে অনেক বড় প্লেয়ার। গড় ৪০-এর ওপরে থাকার কথা।’ অনুজপ্রতিম মুশফিকের ৫০তম টেস্টে হাবিবুল বাশারের শুভাশীষ, ‘ওর ক্যারিয়ার লম্বা হোক। ও জেনুইন অলরাউন্ডার। আমি চাই সে ১০০ টেস্ট খেলুক।’এআরবি/এনইউ/পিআর
Advertisement