ভারতের প্রভাবশালী কর্পোরেট গোষ্ঠী টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জেআর ডি টাটা ২৩ বছর আগে নিহত হয়েছেন। দেশটিতে ব্যবসা খাতে সর্ববৃহৎ এই গোষ্ঠীর মালিকানায় রয়েছে টিসিএস, টাটা মোটরস ও এয়ার ইন্ডিয়া। তার উত্তরসূরিরা বিশাল এই গোষ্ঠীর ব্যবসা ধরে রাখবেন বলে সেই সময় প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে জেআর ডি টাটা পদত্যাগের পর রতন টাটা দেখাশোনার দায়িত্ব পান টাটা এন্টারপ্রাইজের। ২০১২ সালে ভারতীয় এই বিজনেস টাইকুন টাটা গ্রুপের সব দায়দায়িত্ব তুলে দেন সাইরাস পি মিস্ত্রির হাতে। সম্প্রতি টাটা ট্রাস্ট অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে রতন টাটাকে নিযুক্ত করেছে। একই সঙ্গে গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান খুঁজছে টাটা ট্রাস্ট। মিস্ত্রির অদক্ষতার কারণে টাটা গ্রুপের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রতন টাটা চার মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। রতন টাটা শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নন; তার কাজের ধরন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতার কারণে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে তিনি।বর্তমান প্রজন্মের জন্য ভারতীয় এই বিজনেস টাইকুন একজন সত্যিকারের অনুকরণীয় উদ্যোক্তা ও নেতা। বিশ্বের ছয়টি মহাদেশে টাটা গ্রুপের শতাধিক কোম্পানি রয়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রতন টাটা এই গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অনন্য নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে গত ২৪ অক্টোবর থেকে আবারো তাকে কোম্পানির অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান করা হয়েছে। ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকও পেয়েছেন এই ধনকুবের। দেশটির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রিও পেয়েছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে ব্যবসা পরিচালনাকারী টাটা গ্রুপ দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে এই বিজনেস টাইকুনের অনন্য নেতৃত্ব গুণে। শুধু ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার চেয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিশ্বাস করেন রতন টাটা। একমাত্র তার সংকল্পের কারণেই টাটা গ্রুপ বিভিন্ন সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সম্প্রতি টাটা গ্রুপ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান অবন্তি ক্যাপিটালে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একেবারেই নামমাত্র সুদে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া হবে। রতন টাটা একজন স্বপ্নদর্শী নেতা। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টাটা গ্রুপ উন্নয়ন করছে। ভারতীয় এই বিজনেস টাইকুন সব সময় কোম্পানির পুনর্গঠনে প্রস্তুত থাকেন এবং বেশ ভালো করেই তা করেন। বিখ্যাত হোটেল তাজকে ভারতের সবচেয়ে সুন্দর হোটেল হিসেবে মনে করা হয়। এর পুরো কৃতিত্ব রতন টাটার। বৈচিত্র্যময় একটি প্রতিষ্ঠানে কৌশলগত নেতৃত্ব দেয়া সহজ কথা নয়। এই গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে দায়-দায়িত্ব পালনের পরও রতন টাটা কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতাকেও নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য মুম্বাইয়ে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে কলকাতায়ও একই ধরনের সেবা দিতে একটি হাসপাতাল চালু করেছে টাটা গ্রুপ। শিক্ষা, পুষ্টি দারিদ্র্য দূরীকরণে কয়েক দশক ধরে কাজ করে আসছে এই গোষ্ঠী। জনগণের সেবায়ও পিছিয়ে নেই রতন টাটা। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতে সুনামির আঘাতের পর নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গ্রুপের সব নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। সুনামিতে বিধ্বস্ত নাগাপাত্তিনাম, তামিলনাড়ু ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেয় টাটা। এসঅাইএস/পিআর
Advertisement