বিনোদন

বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ভাবনা

দীপ্ত টিভির তুর্কি সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’ এখন বেশ জনপ্রিয়। বলা যায়, চ্যানেলটিকে অল্প সময়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে এটি। এর ধারাবাহিকতায় একুশে টিভি, মাছরাঙা টিভি ‘আলিফ লায়লা’, ‘টিপু সুলতান’সহ বিদেশি পুরনো সিরিয়াল আমদানি করছে বাংলায় ডাবিং করে প্রচারের জন্য। দিন দিন বাড়ছে বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের সংখ্যা। এই বিষয়টিকে দেশীয় নির্মাণের জন্য হুমকি বলে মনে করেন দেশীয় নির্মাতা-প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে তারা সবাই একত্রে আন্দোলনে নামার কথাও ভাবছেন। তবে চ্যানেলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখানে দেশপ্রেমহীনতার কিছু নেই, দেশীয় নির্মাণের হুমকিরও কিছু নেই। দেশের সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে এবং দেশীয় নির্মাণগুলোর প্রচারের ব্যবস্থা রেখেই বিদেশি সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, যে দর্শকদের জন্য চ্যানেল ব্যবসা তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই সিরিয়ালগুলো আমদানি করা হচ্ছে। বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে চ্যানেলের ভাবনা প্রসঙ্গে জাগো নিউজের সঙ্গে বেশ কিছু চ্যানেলের কর্মকর্তারা কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে মাছরাঙা টিভির প্রোগ্রাম ম্যানেজার আরিফ রহমান বলেন, ‘যে ক্ষোভ নির্মাতারা প্রকাশ করছে বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে আমার ধারণা মাছরাঙা টেলিভিশন এর আওতাভুক্ত নয়। কেননা, আমরা সিরিয়াল প্রচার করলেও দেশীয় নাটক-সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার কমিয়ে দেইনি। বিদেশি সিরিয়াল আসার আগে সিডিউল যেমন ছিলো মাছরাঙায় এখনো তাই আছে। এখনো দেশে সর্বাধিক খণ্ড নাটক প্রচার করি আমরা। প্রতি সপ্তাহে চারটি ধারাবাহিক ও অসংখ্য খণ্ড নাটক-টেলিছবি প্রচার করে থাকি আমরা। সুতরাং বিদেশি সিরিয়াল দেশীয় নির্মাণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে আমি মনে করি না। এটুকু হচ্ছে দেশীয় চ্যানেল হিসেবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে বলা। আর যদি বাণিজ্যিক দিক থেকে বলি তবে বলবো দর্শক যা চাইবে তাই দেখাবে চ্যানেল। দর্শকের কাছে দেশীয় নাটকগুলোর চেয়ে বিদেশি সিরিয়ালগুলোর আবেদন অনেক বেশি। বাধ্য হয়েই চ্যানেল মালিকরা সেদিকে ঝুঁকছেন। তবে ভালো গল্প দিয়ে, ভালো শিল্পী দিয়ে নির্মাণের মুন্সিয়ারা থাকলে সেই দেশীয় নাটকগুলো দর্শক গ্রহণ করবেই। আমরা অনেক আগে শিশুদের জন্য ‌মটু পাতলুর মতো সিরিয়াল চালিয়েছি। তখন কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেননি। এখন কেন করছেন? তারপরও যদি মাছরাঙার অনুষ্ঠানমালা নিয়ে কোনো নির্মাতার আপত্তি বা প্রতিবাদ থাকে তবে তাদের বলবো- আসুন বসি। সবাই মিলে এক হয়ে কথা বললে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়।’দীপ্ত টিভির সিইও উরফি আহমেদ বলেন, ‘আমিও শুনেছি বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে নির্মাতারা অনেক কিছু বলছেন। তবে যেহেতু আমার কাছে নির্দিষ্ট করে কোনো অভিযোগ আসেনি তাই এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। শুধু বলবো, দর্শকদের ভালো বিনোদন দিতেই আমাদের যাত্রা। শুরু থেকেই আমরা চেয়েছি এদেশের দর্শক যেনো বিদেশের চ্যানেল না দেখে। ওইসব চ্যানেলে যা প্রচার হয় তা আমরা নির্মাণ করে দেখাবো। দীপ্ত টিভি আসার পর স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলার দর্শক অনেক কমেছে। এই সাফল্যকে সমালোচনা করে এমন নির্মাণ নিয়ে দেশীয় পরিচালককে এগিয়ে আসতে বলবো আমি। আমরা অনুষ্ঠান করার আগে দর্শকের চাহিদাকে প্রাধান্য দেই। চাহিদাসম্পন্ন অনুষ্ঠান, নাটক-টেলিছবি বানিয়ে বা বানাতে যে কেউ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। আমরাও চাই, দেশীয় নির্মাতারা দীপ্ত টিভিতে কাজ করুন। সমালোচনায় না মেতে সুলতান সুলেমানের মতো কিছু নির্মাণে মনোযোগী হওয়া উচিত।’জিটিভি থেকে অনুষ্ঠান কর্মকর্তা আদিত্য রাসেল দাবি করেন, ‘চ্যানেলে কী চলবে না চলবে সেটি নির্ভর করে ওই চ্যানেলটির দর্শক কী চায় তার ওপর। দর্শকরা বিদেশি সিরিয়াল পছন্দ করে বলেই আমরা সেগুলো প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করলে দেশীয় নির্মাণ কমে যাবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। বরং বলবো এই অনুষ্ঠানগুলো থেকে আমাদের নির্মাতারা উৎসাহ পেতে পারে ভালো নির্মাণে। বিদেশি সিরিয়ালের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে লাভ নেই। তারা নিজেরাই নিজেদের মেধা, যোগ্যতা ও সাফল্যকে ব্যর্থ করেছে। আগে যখন বিটিভি ছিলো বা গুটি কয়েক চ্যানেল এলো দেশে, তখন দেখতাম বরেণ্য আর নামী দামী নির্মাতারা নাটকের গল্প নিয়ে চ্যানেলে আসতেন। অনুষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে বসতেন। আলোচনা হতো, গল্পের কারেকশান হতো, প্লাস-মাইনাস হতো। তারপর বাজেটের আলাপ সেরে নাটক নির্মাণ হতো। কিংবা জনপ্রিয় কোনো নির্মাতা নাটক তৈরি করে সেটি চ্যানেলে জমা দিতেন। কিন্তু হুট করেই সবকিছু হারিয়ে গেছে এজেন্সির রাজত্বে। এখন এজেন্সি ঠিক করে দিচ্ছে কী গল্প হবে, কেমন শিল্পী হবে, কোন চ্যানেলে প্রচার হবে। নির্মাণের যে মুন্সিয়ানা সেটা থাকছে না। এজেন্সি থেকে তৈরি নাটক জমা পড়ে আমাদের কাছে। আমরা হয়তো কিছু কারেকশন দেই। কিন্তু সেটি সংশোধিত হয় না। মিউজিক, সাউন্ড ও দৃশ্য ধারাবাহিকতার সমস্যা থাকে। ঘুরে ফিরে মানহীন সৃষ্টিটাই দর্শকের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে। এতে দর্শক বিরক্ত হচ্ছে। তবুও আমরা সেসব নাটক চালাই কেবল নির্মাতা-কলাকুশলীদের জন্যই। কেননা, সবাই মিলেই তো এই ইন্ডাস্ট্রিটা দাঁড়িয়ে আছে।’তিনি আরো বলেন, ‘শুধু তাই নয়, এজেন্সি যাকে তাকে ধরে নাট্যকার বানাচ্ছে, নাট্য নির্মাতা বানাচ্ছে। ফলে গুণী মানুষরা নির্মাণ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। এজেন্সিগুলো বিজ্ঞাপনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এভাবেই মানহীন কাজগুলোকে উৎসাহিত করে চলেছে। আর বিরক্ত হয়ে দর্শক চ্যানেলবিমুখ হচ্ছে। দু-একটা বিদেশি সিরিয়াল চালিয়ে যদি চ্যানেলগুলো তাদের টিকিয়ে রাখতে পারে তবে কেন তার প্রতিবাদ করা? চ্যানেল না টিকলে কোথায় দেখাবেন আপনাদের নির্মাণ? পাশাপাশি আমি চাইবো এন্সির যে রাজত্ব চলছে, মানহীন কাজের যে দুঃসময় আমার পার করছি এসব কিছু নিয়ে ডিরেক্টর গিল্ডের মতো সংগঠনগুলো কাজ করুক। চ্যানেলগুলোরও অনেক ভুল আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। একসঙ্গে বসলে সেসব আলোচনায় আসবে, সমাধানের পথও বের হবে।’এলএ/এনই/এবিএস

Advertisement