দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছরের সেই শিশুটি এখন মানুষ দেখলেই ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠছে। চিকিৎসকরা বলছেন, নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশুটি শুধু শারীরিকভাবেই নয় মানসিকভাবেও বড় ধরনের আঘাত (ট্রমা) পেয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, দু’দিন ধরে মধ্যরাতেও ওসিসি থেকে এক শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন তারা। ওসিসির সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে জানান, শিশুটির গোপনাঙ্গ থেকে শুরু করে সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ও পোড়া দাগ রয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত শিশুটি এখন ওসিসির অন্যান্য রোগী এমনকি চিকিৎসক ও নার্সদের দেখলেও ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠছে। বেশিরভাগ সময়ই তাকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শিশুটির সুচিকিৎসার্থে গাইনি ও অবসট্রেটিকস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি আক্তার লিপিকে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা আজ সকাল আনুমানিক ৯টায় ওসিসিতে এসে শিশুটির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। এ কমিটির সদস্য ওসিসি সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস জানান, ভর্তির পর থেকেই শিশুটির চিকিৎসা চলছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ শেষে কিছু ওষুধ পরিবর্তন করে দিয়েছেন। বোর্ড সদস্যরা আবার এক সপ্তাহ পর ফলোআপ চিকিৎসা প্রদান করবেন।ডা. বিলকিস আরো জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে অন্য রোগীদের কাছ থেকেও আলাদা করে রাখা হয়েছে। তার বেডের পাশে একটি পর্দা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওসিসিতে রোগীর স্বজনদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে আরো যারা রয়েছেন তারা হলেন- শিশু সার্জারি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজল, ইউরোলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আমানুর রসুল, নিউরোসার্জারি বিভাগীয় প্রধান জিল্লুর রহমান, শিশু বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, মানসিক রোগ বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন।উল্লেখ্য, ৫ বছরের এই শিশুকে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ভর্তি করা হয়। শিশুটির মাথা, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া শরীরে কামড়ের দাগ এবং উরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়ার ক্ষত রয়েছে।দিনাজপুরের এই শিশুটি সম্প্রতি তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পরদিন ভোরে বাড়ির কাছে একটি হলুদ ক্ষেত থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শিশুটি এখন ঢামেক ওসিসিতে।ওই ঘটনার পর ২০ অক্টোবর শিশুটির বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- সাইফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন কবিরাজ। মামলার পর ২৪ অক্টোবর (সোমবার) রাতে দিনাজপুর শহর থেকে আসামি সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।এমইউ/এনএফ/এবিএস
Advertisement