জন্মগতভাবেই রিমন মিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই হাতের কজ্বি না থাকলেও মনবল ঠিক রয়েছে তার। থেমে থাকেনি তার শিক্ষার্জন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কৌশল অবলম্বন করে পড়াশুনায় অবিচল রয়েছেন তিনি। সব কিছু জয় করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন রিমন। আগামী দিনের আলোর পথে এগিয়ে যাওয়া রিমন মিয়া গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি গ্রামের ফুটপাত ব্যবসায়ী গোলাম হোসেনের ছেলে। রিমন সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। রিমনের বাবা গোলাম হোসেন জানান, জন্মগতভাবে রিমনের দু’হাত অকেজো। ছেলের দুটি হাত স্বাভাবিক না হলেও লেখাপড়ার প্রতি তার প্রচণ্ড ইচ্ছা। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল সাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন। দু’হাতের মাঝে কলম চেপে ধরে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে প্রাইমারি শেষ করনি। তারপর বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় রিমন। অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে পায়ে হেটেই স্কুলে গিয়ে ক্লাস করেছেন তিনি। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বাবা গোলাম হোসেনের সংসার। ছেলে-মেয়ের মধ্যে রিমন সবার বড়। ছোট ছেলে নাসিরুল্লাহ সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর সবার ছোট মেয়ে পিংকি সাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। গোলাম হোসেন আরও জনান, সাঘাটা হাটে ফুটপাতে জুতার দোকান দিয়ে কোনো রকমে সংসার টিকিয়ে রেখেছি। নিজের সামান্য জমি ছাড়া আর কোনো পূঁজি নেই। যেটুকু জমি ছিল তা ৫ বছর আগে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবুও সংসারে শত অভাব থাকলেও রিমনসহ দুই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার ব্যয়ভার তাকেই বহন করতে হয়।রিমনের মা নার্গিস বেগম দুঃখ করে জগোনিউজকে বলেন, এত কষ্ট করে সংসার করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি শুধু মানুষ করার জন্য। আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও প্রতিবন্ধী ছেলে রিমনসহ দুই ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার পিছনে সাধ্য মতো খরচ করছেন দরিদ্র বাবা-মা। শুক্রবার সাঘাটা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, রিমন অন্য দশজনের মতো বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। বিকলাঙ্গ দুই হাতের অংশের মাঝে কলম চেপে ধরে লেখার কাজ দ্রুত চালায় রিমন। অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু তার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখে চলেছে। রিমন শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও পরীক্ষার হলে তার মনোযোগ ও মনোবল সবার দৃষ্টি কেড়েছে।জাগোনিউজকে রিমন জানায়, এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে সুযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ব। তবে পরিবারের দারিদ্রতার কারণে তা সম্ভাব হবে কি না সে বিষয়ে ভয় আর অনিশ্চিয়তায় আছি। সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক আকন্দ জাগোনিউজকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী রিমন মিয়া তার বিদ্যালয়ের একজন ভালো ছাত্র। তার হাতের লেখাও অনেক সুন্দর। রিমন লেখাপড়া শেষে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চায়। বিএ/পিআর
Advertisement