মতামত

এই পাশবিকতার শেষ কোথায়?

পাঁচ বছরের এক শিশুর ওপর যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা দেখে শিউরে উঠছেন চিকিৎসকরাও। কোনো মানুষ একটি শিশুর ওপর এই ধরনের পাশবিকতা চালাতে পারে এটা ভাবনারও অতীত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এবং তা আর্থ-সামাজিক অবস্থার এক ক্ষয়িষ্ণু দিককেই তুলে ধরছে। নির্যাতিত শিশুটির বয়স মাত্র পাঁচ বছর। শিশুটির গাল, গলা, হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। শরীরে কামড়ের দাগ। ঊরুতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়ার ক্ষত। চিকিৎসকরা নানা ধরনের রোগী দেখেন। বলা যায় পেশাগত কারণে তারা অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। এরপরও  দিনাজপুরে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির ওপর যে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে তা দেখে স্বাভাবিক থাকতে পারছেন না চিকিৎসকরাও। সহজেই অনুমেয় কী নির্দয় নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতার শিকার হয়েছে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি। কিন্তু এভাবে কি চলতেই থাকবে?গত মঙ্গলবার শিশুটি বাড়িতে থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর মাইকিং, মসজিদে ঘোষণা দেওয়াসহ নানাভাবে শিশুটির খোঁজ করে পরিবার। কিন্তু শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন ভোরে শিশুটিকে তার বাড়ির কাছে একটি হলুদখেতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল, তারপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শিশুটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে চিকিৎসাধীন। এই পাশবিক ঘটনার পর শিশুটির বাবা ২০ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন কবিরাজ। মামলার প্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর রাতে দিনাজপুর শহর থেকে আসামি সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি জেলহাজতে আছেন। নানা ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে। কমেছে শিশুর মৃত্যুহারও। প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। এসব উন্নতির প্রশংসা এখন বিশ্বব্যাপী। একদিকে উন্নয়ন চলবে অন্যদিকে নারী ও শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতন চলবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। উন্নয়নের সুফল পেতে হলে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এখন অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় রোধেও কাজ করতে হবে।  শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয় মানবিকতার উন্মেষ ঘটিয়ে একটি আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়েও কাজ করতে হবে।  যেখানে নারী শিশুসহ সকলেই থাকবে নিরাপদে। এইচআর/পিআর

Advertisement