চরম অভাবে পড়ে ২২ দিন বয়সী দুধের শিশু মোরশেদা আক্তার বন্যাকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া মা রেবী খাতুনকে জমি কিনে দিলেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। রোববার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে জমির দলিল হস্তান্তর করেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো:. শাহাবুদ্দিন খান। সংসারে চরম অভাবের কারণে গত ২২ আগস্ট কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা উত্তর বারবান্দা গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী রেবী খাতুন নিজের দুধের শিশুকে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। সন্তান বিক্রির টাকায় অন্যের জমিতে ঘর তোলেন সেই মা। আর দুধের শিশু মোরশেদা আক্তার বন্যাকে কিনে নেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাথরেরচর ইউনিয়নের চেংটিমারী গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী পানফুল বেগম। গত ২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভাবের তাড়নায় শিশু বিক্রির সংবাদটি প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে জামালপুরের জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিশুটিকে তার প্রকৃত মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে ২ সেপ্টেম্বর রাতেই জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান, দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুকন্ত হাজং, রৌমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার, রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম সাজেদুল ইসলাম রৌমারীর কাঁঠালবাড়ি খাঁ পাড়ায় শিশুটির ক্রেতা পানফুল বেগমের বাড়ি যান। শিশুটির বিক্রির কারণ জানার পর তার প্রকৃত মা রেবী খাতুনকে ডেকে এনে গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে দুধের শিশু মোরশেদা আক্তার বন্যাকে মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। ওই সময় জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান শিশু বিক্রির ৩৫ হাজার টাকা মা পানফুল বেগমকে ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি অভাবগ্রস্ত শিশু বন্যার মা রেবী খাতুনকে ব্যক্তিগতভাবে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এছাড়া জামালপুরের জেলা প্রশাসক প্রতিমাসে শিশুটির পরিবারকে খাবারের জন্য চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।জামালপুরের জেলা প্রশাসক শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার পর একখণ্ড জমি কিনে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় একজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় জামালপুরের জেলা প্রশাসক রৌমারী উপজেলায় ৬ শতাংশ জমি কিনে দেন বন্যার মা রেবী খাতুনকে। রোববার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে রেবী খাতুনের হাতে কিনে দেওয়া জমির দলিল হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মো: শাহাবুদ্দিন খান। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল সাবরিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম, জামালপুরের জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিক জামান, সাংবাদিক এম.এ জলিল, কালের কণ্ঠের রৌমারী উপজেলা প্রতিনিধি কুদ্দুস বিশ্বাসসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জমির দলিল ছাড়াও জেলা প্রশাসক এক বস্তা চাল, কাপড়, টাকা রেবী খাতুনের কাছে তুলে দেন। বন্যার মা রেবী খাতুন জানান, কষ্ট হচ্ছিলো তারপরও অভাবে পড়ে সন্তানকে বিক্রি করে ছিলেন। কিন্তু জামালপুরের জেলা প্রশাসকের সহায়তায় শিশুসহ মাথা গোজার জমি পেয়ে সে এখন অনেক খুশি। সেসহ তার পরিবারের সবাই জেলা প্রশাসকের দীর্ঘায়ু কামনা করছেন। এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ঘটনাটি অত্যান্ত হৃদয় বিদারক ছিলো। তারপরও শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পেয়ে ভালো লেগেছে। সম্প্রতি একজন দানশীল ব্যক্তির সহায়তায় শিশুর মা রেবী খাতুনকে ৬ শতাংশ জমি কিনে দিতে পেয়ে ভালো লাগছে। দানকৃত জমিতে ঘর তৈরির জন্য একজন প্রবাসী ৫০ হাজার টাকা দান করেছেন সেই টাকা দিয়ে খুব শিগগিরই ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। শুভ্র মেহেদী/এমএএস/এবিএস
Advertisement