জাগো উপকূল

ইলিশের প্রজনন মৌসুম : উপকূলে কঠোর অভিযান চায় জেলেরা

মা -ইলিশ সংরক্ষণ চলাকালীন উপকূলে কঠোর অভিযান চান জেলেরা। বিগত বছরগুলোয় প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ ধরায় তারা পথে বসতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত দুই বছর একই সময় নদী-উপকূলে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতার ফলে কেউ মা-ইলিশ নিধন করতে পারেনি। ফলে এ বছর সাগর ও নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। গত ১২ অক্টোবর থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত উপকূলের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ সারা দেশে ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন, মজুদ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মাছঘাট, মৎস্য আড়ত, হাট-বাজার, চেইনশপে চলছে বিশেষ অভিযান।উপকূলের জেলেরা জানান, গত কয়েক দিনে নদীতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ ও বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য অধিদফতরের কঠোর অভিযান চলছে। অভিযানের সময় তারা মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন। কাটাচ্ছেন অলস সময়। কেউ কেউ জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন অভিযান শেষে আবারো মাছ ধরার। এ লক্ষ্যে জাল ও নৌকা মেরামত সেরে নিচ্ছেন সবাই। উপকূলের জেলেপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, মূলত এখন তাদের অলস সময় কাটলেও বসে নেই কেউ। তীব্র রোদের মাঝে খোলা আকাশের নিচে বসে ঠিক করে নিচ্ছেন আয়ের একমাত্র সম্বল জাল ও নৌকা। কেউ কেউ নতুন করে নৌকা তৈরিও করছেন। চলমান এ অভিযানে জেলেরা কিছুটা কষ্টে দিনাতিপাত করলেও তাদের মুখে হাসি রয়েছে। তারা জানান, সরকারের এ উদ্যোগ (অভিযান) তাদেরই স্বার্থে।  কথা হয় নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচরের জেলে আব্দুল জলিলের সঙ্গে। ‘নিষিদ্ধ’ এ সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কেমন কাটছে, জানতে চাইলে তিনি মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন, ‘কেমন চলবো আর? মাছ ধরোন (ধরা) নিষেধ। মাছেরা অন (এখন) ডিম ছাইবো (ছাড়বে)। হিয়াল্লাই (সে জন্য) সরকার আঙ্গোরে (আমাদের) মাছ ধরতো (ধরতে) নিষেধ কইচ্ছে (করছে)। আন্ডাও (আমরাও) মাছ ধইত্তাম (ধরতে) জাই না। অন (এখন) কিরুম (কি করবো)? কুলে বই (বসে) জাল-টাল তুনি (সেলাই করি)। নৌকা-টোকা ঠিক করি।’একই উপজেলার বাংলাবাজারের জেলে আকরাম মাঝি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন কেউ মাছ ধরতে যাই না। আগে এই সময়ে আমরা সবাই সমানে মাছ ধরতে চলে যেতাম। কোস্টগার্ডকে কিছু টাকা দিয়ে আসলে তারা আমাদের মাছ ধরতে দিতো। কোনো সমস্যা হতো না। পরের বছরগুলোতে আর মাছ পাওয়া যেতো না। তখন মাছ ধরা না পড়ায় অনেক জেলে নৌকা-জাল বিক্রি করে দিয়েছে। অনেকেই আবার ধার-দেনায় পড়ে গোপনে পালিয়ে ভারত চলে গেছে। এখন দেখি তখন মূলত আমরাই আমাদের ক্ষতি করেছি। সেজন্য আমরা এবার একতাবদ্ধ। কেউ নদীতে যাবো না। কেউ যদি যায় তাকে কোস্টগার্ডকে ধরিয়ে দেব। আমরা চাই কোস্টগার্ড কঠোর অভিযান করুক।’শুধু আব্দুল জলিল কিংবা আকরাম মাঝি নন, তার মতো এই উপজেলার শত শত জেলে চান এখন কঠোর অভিযান। কারণ, মা-ইলিশ নিধনের ফলে বিগত বছরগুলোতে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতির মুখোমুখি তারা আর হতে চান না । ওই এলাকার একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছর ইলিশের ভরা প্রজনন মৌসুমে কোস্টগার্ড অনেক সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করায় এ বছর তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রির টাকায় বিগত বছরগুলোতে এলাকার মহাজনদের থেকে নেয়া ধারদেনা পরিশোধ করে তারা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বপ্ন বুনছেন খড়ের ঘর থেকে দালানের, আরো বড় বড় দু-একটি মাছ ধরা ট্রলারের মালিক হওয়ার।এমএসএস/এমএমজেড/এমএস

Advertisement