তিনিই ডুবিয়েছেন। আবার তার হাত ধরেই ভেসে উঠলো স্বপ্ন। ভিলেন না হিরো, চট্টগ্রাম টেস্টে শেষ পর্যন্ত কী হবেন সাকিব আল হাসান? হয়তো বা আগামীকাল রোববারই মিলবে এর উত্তর। তবে এটা ঠিক যে, সাকিবের আত্মঘাতী শটে বাংলাদেশের লিড নেবার স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে ম্যাচ হাতছাড়ার উপক্রম হয়েছিল, তার স্পিন জাদুতেই আবার সে খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। গাণিতিক হিসাব-নিকেশ ও ক্রিকেটীয় সমীকরণে এখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা খানিক কম বলেই ভাবা হচ্ছে; কিন্তু এটাও সত্য, আজ তৃতীয় দিন সাকিবই টাইগারদের ম্যাচে ফিরিয়েছেন। একই দিন সাকিবের দুই রূপ- প্রথমটা হতাশার, নিন্দার, সমালোচনার। পরেরটা বীরোচিত। প্রশংসিত।তারপরও দিন শেষে সাকিবের প্রথম ভুলটাই বড় হয়ে উঠল। কারণ, সাকিব যেখানে থেমেছেন, তার চেয়ে আর ২৫/৩০টি রান করে দিয়ে গেলেও হয়তো আর পিছিয়ে পড়তে হতো না। ইংলিশদের সমান্তরাল থাকা যেত। তখন আর ৩০০ রান তাড়া করার চিন্তা মাথায় এসে বাসা বাঁধতো না। তাই দিন শেষে সাকিবের ব্যাটিং নিয়েই উঠলো নানা কথা। তীর্যক সমালোচনা। ইস! কেন যে সাকিব তেমন শটটা খেলতে গেলেন? আর ঘন্টা খানেক ক্রিজে কাটিয়ে দিতে পারলেই তো হিসেব অন্যরকম হতে পারতো। তার সামর্থ্য নিয়ে এতটুকু সংশয়-সন্দেহ নেই কারো মধ্যে। অতিবড় সাকিব বিরোধীও মানছেন, তিনি পারেন। পৃথিবীর যে কোনো বোলারের বিপক্ষে লং অন-লং অফ ও ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে অবলীলায় ছক্কা হাঁকানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তার। হোক টেস্ট কিংবা একদিনের সিমিত ওভারের ক্রিকেট- উইকেটে থিতু হওয়া সাকিব সব সময়ই অন্যরকম। তখন তার ব্যাট যেন খোলা তরবারি। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান জানাবে, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, রঙ্গনা হেরাথ, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও সাইদ আজমল- কেউ বাদ নেই। এসব বিশ্ব মানের স্পিনারদের ইচ্ছেমত উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে বিশ্বের যে কোন মাঠে যে কোন কঠিন উইকেটে ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড আছে এ অসাধারণ মেধাবি অলরাউন্ডারের। কিন্তু আজ সকালে দিনের প্রথম ওভারে সেই সাকিব অসময়ে ও অপ্রয়োজনে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে যেভাবে উইকেট বিষর্জন দিলেন- তা চোখে দেখেও বিশ্বাস করা কঠিন! সাকিবের অন্ধ ভক্তও যারা, তারাও হতাশ।সবার একটাই প্রশ্ন, একি করলেন সাকিব? কি দরকার ছিল মঈন আলিকে ছক্কা হাঁকানোর? ধরা যাক, বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করছে, জয় থেকে ৩০/৪০ রান দূরে। দিনের শেষ ঘণ্টার খেলা চলছে। সঙ্গে একজন ব্যাটসম্যানও নেই যে ধরে খেলবেন। এসব পরিস্থিতিতে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হলে মনকে প্রবোধ দেয়া যেত। কিংবা পরিবে কিংবা প্রেক্ষাপট একদম অনুকূলে। উইকেটে ওয়েল সেট। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেটা জটিল ও রহস্যময় নয়- তাহলেও একটা কথা ছিল। যে ফ্ল্যাট পিচ, তার গতি- প্রকৃতি একদম জানা হয়ে গেছে। সব বল ব্যাটের মাঝখান দিয়ে খেলতে পারছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। দলের অবস্থাও ভালো। এমন পরিস্থিতিতে টেস্টেও অনেক ব্যাটসম্যানই উইকেট ছেড়ে এক-দুই পা বেরিয়ে এসে বল হাওয়ায় ভাসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এ ম্যাচে তো আর তেমন অবস্থা ছিল না। সাকিব আগের দিন অনেকটা সময় ব্যাট করলেও খুব যে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছেন তা নয়। তামিম ইকবালের মত ড্যাশিং ব্যাটসম্যান, শটস খেলা ও ফ্রি স্ট্রোক প্লে যার অভ্যাস, সেই তামিম যখন স্বীকার করেন, ‘উইকেট সহজ নয়। বেশ কঠিন। রান করা আরও কঠিন। আমি নিজে অনেক কষ্টে রান পেয়েছি’- যেখানে তার ওপরই সব কিছু নির্ভর করছিল। বাংলাদেশ মাঠে নামলো ৭২ রানে পিছিয়ে। আগের দিনের ৩১ রানে নটআউট সাকিব একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি রানের চাকা সচল রাখবেন আর দুই তরুণ সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ সাপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশকে লিড এনে দেবেন- এমন স্বপ্নই দেখছিল গোটা বাংলাদেশ। কিন্তু হায়! সে স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটল দিনের দ্বিতীয় বলে সাকিব আউট হবার সঙ্গে সঙ্গে। যে কঠিন পিচ, যেখানে টিকে থাকাই দায়, সেখানে এমন উচ্চাভিলাসী শট যে আত্মঘাতী! কেন, কী কারণে এমন শট খেলা? সাকিব নিজে আর স্রষ্টা ছাড়া হয়তো কেউ এর সঠিক কারণ ব্যাখা করতে পারবেন না। সাকিব ফেরার পর বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে পড়ল ইনিংসের শেষ অংশ। মাত্র ২৭ রানে পতন ঘটল শেষ ৬ উইকেটের। ইনিংসের শেষাংশের এর চেয়ে খারাপ ও করুণ পরিণতি আর কিই বা হতে পারে? সাকিব আউটের পর অভিষেক হওয়া সাব্বির ও মিরাজ পড়লেন ইংলিশ বোলিং তোপের মুখে। টেস্টে প্রথম ব্যাট হাতে নিয়ে ইংলিশ ফাস্ট বোলার বেন স্টোকসের রিভার্স সুইং বুঝে ওঠার আগেই সাজঘরে ওই দুই তরুণ। লিড নেবার বদলে ৪৫ রানে পিছিয়ে থাকা। অসময়ে অপ্রয়োজনীয় শট খেলে দলকে চরম বেকায়দায় ফেলে আর গোটা দেশকে হতাশায় নিমজ্জিত করা সাকিব পরক্ষণে বল হাতে দুর্বার, দুর্মনীয়। এবার আর পরিবর্তিত বোলার হিসেবে নয়, নতুন বলে বোলিং শুরু করে ৭১ রানে ৫ ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে আবার প্রায় নিভু নিভু জয়ের প্রদীপকে সলতের মত জ্বালিয়েছেন সাকিব। দেখা যাক রোববার সকালে প্রথমে বল ও পরে ব্যাট হাতে কি করেন সাকিব? ম্যাচের এ পর্যায়ে দরকার তার মত ‘চ্যাম্পিয়ন’ অলরাউন্ডারের চৌকষ নৈপুণ্য। সাকিব কি তা পারবেন? বলের পর ব্যাট হাতে অবিস্মরণীয় সাফল্যে দলকে সাফল্যের তীরে ভেড়াতে? আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement