স্কুল বন্ধ রেখে গরুর হাট বসিয়ে ঐক্য গড়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতারা। সপ্তাহের প্রতি রোববার ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়া উপজেলার পাগলা বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামনের মাঠে নিয়মিত বসছে গরু-ছাগলের বিশাল হাট। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।শনিবার সারাদেশের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারলেও পাগলা বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না। বিদ্যালয়টি বন্ধ রেখে প্রতি রোববার বসানো হচ্ছে গরু-ছাগলের হাট। এ কারণে ময়লা আর্বজনার দুর্গন্ধে ক্লাশ করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের। এলাকাবাসী ও স্কুলের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে এই গরুর হাট অন্যত্র বসলেও গত দুই বছর হলো নিয়মিত হাট বসছে স্কুল মাঠে। হাটবারে স্কুলের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রেখে পাগলা বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস রুমসহ বারান্দায় শত মানুষ জটলা করে। স্কুলের অফিস রুমটি ইজারাদারের লোকজন ব্যবহার করছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এই হাটের তদারকি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। গরুর হাটের কারণে বছরে প্রায় ৫২ দিন স্কুল বন্ধ থাকছে। এই স্কুলের পাশে একটি মাদরাসা ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাগলা বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠ দখল করে বসেছে বিশাল গরুর হাট। উত্তরাঞ্চলে বড় হাটের মধ্যে এটি একটি। দেশের দূর-দূরন্ত জেলা থেকে গরুর পাইকাররা এখানে আসেন গরু কিনতে। ঢাকা-নগরবাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়া উপজেলার পাগলা বোয়ালিয়া স্কুল মাঠের গরুর হাটের ইজারাদার উপজেলার বড়হর ইউনিয়ন জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক সোবহান ফকির। হাটের ইাজারার দরপত্রে হাটের স্থান উল্লেখ করা হয়েছে পাগলা মৌজায়। অথচ হাট বসানো হচ্ছে স্কুল মাঠে বোয়ালিয়া মৌজায়। তার সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতা ও পার্টনার হিসেবে রয়েছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল ইসলাম নান্নু এবং উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতিকুল ইসলাম তোতা। আর তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।এ ব্যাপারে পাগলা বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ফোন করা হলে তিনি বলেন, হাটের কারণে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্কুল খোলা রাখা হয়। আমি সিরাজগঞ্জে আছি বলে তিনি ফোন কেটে দেন। হাটের সাবেক ইজারাদার হীরম্ভ সাহা জানান, হাটটি এখানে ছিল না। আমি যখন ইজারাদার ছিলাম তখন হটটি অন্যত্র ছিল। নতুন যারা হাটটি ইজারা নিয়েছেন তারাই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে স্কুল মাঠে হাট বসিয়েছেন। ইজারার দরপত্রে হাট এখানে বসার কথা নয়। দরপত্রের উল্লেখিত স্থানেই হাট না বসিয়ে স্কুল মাঠে বসানো হয়েছে যা দুঃখজনক। এ বিষয়ে পাগলা বোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল ইসলাম নান্নু জানান, হাটের দিন স্কুল বন্ধ রাখা হয় না। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে হাটের দিন স্কুলে সকাল বেলায় ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি রেজুলেশন করে শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে।উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জীব কুমার সরকার জানান, সাময়িকভাবে হাটটি স্কুল মাঠে বসেছে। হাটের জন্য জমি ক্রয় করার চেষ্টা চলছে। জমিটি পেলেই স্কুল মাঠে হাট বসানো বন্ধ হবে। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এসএস/এমএস
Advertisement