ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক শুরুর আগেই ধোঁকা খেয়েছেন। তার ধারণা ছিল জহুর আহমেদ চেšধুরীর উইকেট প্রথম দু’দিন থাকবে ব্যাটসম্যানদের বন্ধু হয়ে। তারপরও হয়ত স্লো বোলারদের দিকে ঝুঁকবে। টেস্ট শুরুর ২৪ ঘন্টা আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে উইকেট সম্পর্কে বলতে গিয়ে কুক বলে বসেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছে এ উইকেট প্রথম দুদিন ব্যাটিং স্বর্গ হয়ে থাকবে। তারপর হয়ত স্লো বোলারদের দিকে ঝুঁকবে।’ তাই টস জিতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট বেছে নেয়া কুকের।কিন্তু গতকাল খেলা শুরুর আধ ঘন্টা না যেতেই ইংলিশ ক্যাপ্টেনের সে ধারণা ভুল বলে প্রমাণ হয়। ব্যাটিং স্বর্গ তো নয়ই, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যে উইকেটে খেলা হচ্ছে তা ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমত বিভীষিকা। ১৩৩ টেস্টে যার শতরান ২৯টি। যে ব্যাটসম্যান ৫১বার পঞ্চাশের ঘরে পা রেখে নিজের টেস্ট স্কোরকে ১০ হাজারের ওপর (১০৫৯৯) নিয়ে গেছেন, সেই অ্যালিস্টার কুকও এক মুহুর্তের জন্য স্বস্তিতে খেলতে পারেননি। বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হবার পর খানিক হতচকিত মনে হচ্ছিল বিশ্বমানের এ ব্যাটসম্যানকেও। এ টেস্টে অভিষেক হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের বল ঘুরেছে সাপের মত। তার টার্নে পরাস্ত ছয় ইংলিশ। একইভাবে আজ সারা দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও যে খুব স্বস্তিতে খেলেছেন এমন নয়।সবাইকে উইকেটে থাকতে কষ্ট করতে হয়েছে। প্রত্যেকে রান করেছেন যথেষ্ট ঘাম ঝরিয়ে। যে পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন, তার একজনও বাজে শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেননি। মুমিনুল ছাড়া সবাই সেট হয়েও এক সময় ফিওে আসতে বাধ্য হয়েছেন।সেটা যতটা নিজের ব্যর্থতায়, তার চেয়ে অনেক বেশি বলের কারুকাজে। সেটা কখনো বড় টার্নে। একটু বাড়তি বাউন্সে। আবার কোন সময় মুভমেন্টের কাছে পরাস্ত হয়ে। মোদ্দা কথা, উইকেট এখন পর্যন্ত বোলারদের পক্ষে। স্পিনাররা টার্ন পাচ্ছেন। কিছু কিছু ডেলিভারি শার্প টার্ন নেবার পাশাপাশি বিপজ্জনকভাবে লাফিয়েও উঠছে। অফস্পিনার মঈন আলির তেমনি এক শার্প টার্নিং ও স্বাভাবিকের চেয়ে লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েছেন মুমিনুল হক। একই ভাবে একদম উইকেটে নিজেকে মানিয়ে নিয়েও লেগস্পিনার আদিল রশিদের অফস্ট্যাম্প সোজা পরে স্পিন করে বাইরে বেরিয়ে যাবার সময় একটু লাফিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট চুমে চলে যায় প্রথম স্লিপে। মোদ্দা কথা, কাল প্রথম দিন যেমন ছিল, আজ দ্বিতীয় দিনও তেমনি আছে উইকেচের চরিত্র। স্পিনাররা স্বাভাবিকের চেয়ে টার্ন বেশি পাচ্ছেন। কিছু ডেলভারি লাফিয়ে উঠছে। পেসারদের বল বাড়তি ও বিপজ্জনকভাবে লাফিয়ে না উঠলেও সুইং হচ্ছে। আর তাই তামিম ইকবালের ধারণা, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ বেশ কঠিন। জটিল ও রহস্যময়। উইকেটের চরিত্র ও আচরণ নিয়ে আজ খেলা শেষে মিডিয়ার সাথে আলাপে তামিম বলেন, ‘এটা মোটেই সহজ উইকেট নয়। এখানে ব্যাট করা বেশ কঠিন।’ কেমন কঠিন? বল কি একটু বেশি মুভ ও টার্ন করছে? পাশাপাশি বিপজ্জনকভাবে লাফিয়েও উঠছে, কিংবা বাউন্সও কি আনইভেন? তামিমের ব্যাখা, স্পিন ও টার্ন বেশি হচ্ছে। তবে বাউন্স মোটামুটি ঠিকই আছে। তেমন আনইভেন নয়।’ উইকেটের সঠিক মূল্যায়ণ করতে বলা হলে তামিম যা বলেন, তার সারমর্ম হলো, এখানে কেউ সেট নয়। সাধারনতঃ কেউ ৭০, ৮০ কিংবা ১০০ রান করার অর্থ পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে পুরোপুরি ধাতস্ত হয়ে যাওয়া; কিন্তু এ উইকেটে নাকি সে অবস্থাও নেই। তাই তো তামিমের এমন বক্তব্য, এ উইকেটে কেউ নিজেকে সেট ভাবতে পারবেন না। যদি মনে করেন, যে আপনি সেট হয়ে গেছেন, তাহলেই সমস্যা। কারণ প্রতি ওভারে একটা-দুটা বলে কিছু না কিছু হচ্ছে। মোটা দাগে বলতে হলে বলবো, এ পিচে কোন ব্যাটসম্যানই সেট না। এক সময় সেট হয়ে গেলে অনেক কিছু করতে চায়। যখন সেট হয়ে কিছু করতে যায় তখন খুব ভালো একটা বল হয়ে যায়। এ কারণে বললাম যদি উইকেটে নিজেকে সেট মনে করেন তাহলে ভুল হবে। এআরবি/আইএইচএস/এমএস
Advertisement