ফিচার

রাত পোহালেই বসন্ত

আজ ৩০ মাঘ। ১৪২১ বঙ্গাব্দের শীত ঋতুর শেষ দিন। রাত পোহালেই বসন্তের প্রথম দিন—পহেলা ফাল্গুন। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ কেড়ে নেয়ার বসন্তের প্রথম দিন। ফুল ফোটানোর পুলকিত সময়। বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের সুবাসে মন আনচান করার প্রথম দিন। মাতাল হাওয়া, উড়াল মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, গাছের কচিপাতা আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়—‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/আজ বসন্ত...।’ তবে এবারও ফুল ফুটেছে। দখিন হাওয়ার গুঞ্জরণও লেগেছে ফাগুন আসার দু-একদিন আগে থেকেই।বসন্ত` মানেই ফুলের স্ফুরণ। চোখ-ধাঁধানো ফুলের সমাহার। ফুলের সৌন্দর্য দেখে রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন `আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে...`। শুধু কি তাই, নজরুলও অশোক-কিংশুকে বিমোহিত হয়ে লিখেছিলেন `এল খুলমাখা তূণ নিয়ে/খুনেরা ফাগুন...`।আগুনরাঙা এই ফাল্গুনে অশোক-পলাশ-শিমুলের রঙ শুধু প্রকৃতিতেই উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, ছড়ায় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্ত-রঙিন স্মৃতির ওপরও। বায়ান্নর ৮ ফাল্গুনের তথা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার মিলেমিশে একাকার। তাই ফাগুন এলেই আগুন জ্বলে মনে; ফাগুন এলেই কোকিল ডাকে বনে।যখন বসন্ত জাগ্রত দ্বারে; তখন অশোক, রক্তকাঞ্চন, কনকলতা আর পলাশ-শিমুলের রঙ ছড়ানো দিনে কোকিলের ডাক উদাস করে দেয় আবেগবিহ্বল বাঙালির হৃদয়। ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই রঙিন করেনা, রঙিন করে আবহমানকাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণও। তাই পহেলা ফাল্গুনে মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামা ও ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালি সাজের উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবেন শাহবাগ, চারুকলা, টিএসসি, অমর একুশে গ্রন্থমেলাসহ নগরীর এখান থেকে ওখানে- যেন কোথাও হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।বৃক্ষনিধন আর ফ্ল্যাট কালচারে নিষ্প্রাণপ্রায় এই কংক্রিটের জঙ্গলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, মিন্টো রোড, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণ এখনও ফুলে ফুলে উচ্ছল-উজ্জ্বল বাসন্তী হাওয়ায়। এসব এলাকায় কোকিলের কুহুস্বরে মুখর পরিবেশে মন যেন কোনো উদাসলোকে হারিয়ে যায়। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ জানিয়ে দিয়ে যায়, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা।এএইচ/আরআই

Advertisement