বাংলাদেশের হয়ে দিনের শুরুটা করেছিলেন মিরাজ, শেষটাও করলেন তিনিই। বেন ডাকেটকে দিয়ে শুরু, শেষে জনি বেয়ারস্টো। এর মাঝে আরও তিন উইকেট। অনেকটা স্বপ্নের মতই অভিষেক হলো মেহেদী হাসান মিরাজের। পাঁচ উইকেট নিয়েই স্মরণীয় করে রাখলেন টেস্টে নিজের অভিষেক, এমনকি প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচকে। তার জাদুকরি বোলিংয়েই চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটা নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে সাত উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২৫৮ রান। বৃহস্পতিবার সকালে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ। ইংলিশদের ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন মিরাজ আর সাকিব। ফলে টস হারার দুঃখটা আর থাকেনি। মিরাজ ও সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ২১ রানেই ফিরে যান প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান। দশম ওভারে ইংলিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বেন ডাকেটকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন এ নবীন। এরপরের ওভারেই ইংলিশ অধিনায়ক কুককে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান সাকিব।পরের ওভারে আবার মিরাজ। গ্যারি ব্যাল্যান্সকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ওভারের শেষ বলে ব্যাটে বলে সংযোগ করতে না পারায় ব্যাল্যান্সের প্যাডে লাগে বল। জোরালো আবেদনের পর আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় রিভিউর আবেদন করে টাইগাররা। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে ফলটা এলো বাংলাদেশের পক্ষেই। এরপর জো রুটের সঙ্গে ইংলিশদের হাল ধরেন মঈন আলি। ৬২ রানের জুটি গড়ে দলের চাপ কিছুটা সামলে নেয়ার ইঙ্গিত দেন তারা। তবে মধ্যাহ্ন বিরতির পর দলীয় ৮৩ রানে ইংলিশ শিবিরে আবার আঘাত হানেন মিরাজ। তার বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান রুট। ৪৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪০ রান করেন তিনি। এরপর বেন স্টোকসকে নিয়ে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন মঈন আলি। এদিন ভাগ্যকে সঙ্গে নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন সম্ভবত তিনি। দুই পক্ষ মিলিয়ে মোট পাঁচবার রিভিউর কবলে পড়েন তিনি। প্রত্যেকবারই সফল। তাইজুলের করা ২৪তম ওভারে মঈনের বিপক্ষে প্রথম রিভিউটি নেন বাংলাদেশ; কিন্তু, রিভিউতে আম্পায়ারের দেয়া নট আউটের সিদ্ধান্তই সঠিক হিসেবে প্রমাণ হয়।এরপর সাকিবের করা ২৭তম ওভারে আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন মঈন। এবারও রিভিউতে নটআউট ঘোষণা হন তিনি। ২৯তম ওভারে আবার আম্পায়ারের বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে জয় হয় তার। এরপর একই ওভারে আবারো রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। ৪৮তম ওভারে আবার বাংলাদেশের রিভিউর মুখোমুখি হন, এবারও যথারীতি ভাগ্য তাকেই সঙ্গ দেয়।এরই মাঝে ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ এক ফ্লাইটে স্টোকসকে পরাস্ত করেন করেন সাকিব। সরাসরি বোল্ড হয়েই সাজঘরে ফেরেন স্টোকস (১৮)। স্টোকসের বিদায়ের পর জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন মঈন। ৮৮ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দিতে দারুণ ভূমিকা রাখেন এ দুই ব্যাটসম্যান।মিরাজের করা ৬৭তম ওভারে দলীয় ১৯৪ রানে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মঈন। ১৭০ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৬৮ রান করেন তিনি। এরপর ক্রিস ওকসকে নিয়ে ৪৩ রানের জুটি গড়ে আউট হন বেয়ারস্টো। নতুন বল নেয়ার দ্বিতীয় ওভারেই মিরাজের বলে বোল্ড আউট হন তিনি। ১২৬ বলে ৮টি চারের সাহায্যে ৫২ রান করেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।দিন শেষে মিরাজের বোলিং ফিগার ৩৩-৬-৬৪-৫, অথ্যাৎ ৬৪ রান দিয়ে ৫ উইকেট। ইংলিশদের বাকি দুই উইকেটের দখল নিলেন আরেক স্পিনার সাকিব আল হাসান।তবে ওকসের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম দিন শেষে সাত উইকেটে ২৫৮ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। ৩৬ রান নিয়ে ওকস এবং ৫ রান নিয়ে আদিল রশিদ ক্রিজে রয়েছেন। প্রথম ইনিংসে এবারই প্রথম, প্রথমদিন শেষে বাংলাদেশের বিপক্ষে চার উইকেটের বেশি হারালো ইংলিশরা। এর আগে ২০১০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাঁচ উইকেটে ২৭৫ রান করেছিল তারা। তবে রানের হিসেবে এটাই সর্বনিম্ন নয়। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে চার উইকেটে ২৩৭ রান করে দিন শেষ করেছিল ইংলিশরা। আরটি/আইএইচএস/পিআর
Advertisement