বাংলাদেশ সমর্থকদের মধ্যে যারা টস দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তারাই এখন হাসছেন। ভক্ত ও সমর্থকদের চেয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের মন নিশ্চয়ই আরও বেশি চাঙ্গা। টস হারের হতাশা স্পর্শ করতে পারেনি একদমই। বরং শুরুতে লক্ষ্য পূরণের সন্তুষ্টি।খেলা শুরুর আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে খুব জোর দিয়েই বলেছিলেন, শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাল পারফরমেন্স ও ফলের পূর্ব শর্তই হলো ভাল শুরু। অধিনায়কের মনের মত সূচনাই হয়েছে। আজ বৃষ্পতিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের হাত ধরে যেমন শুরু হলো, এর চেয়ে চমৎকার সূচনা আর কি হতে পারে ? প্রথম ঘন্টায় ইংলিশদের তিন উইকেট তুলে নেয়া। ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মুল স্তম্ভ অ্যালেস্টার কুক মাত্র ৪ রানে আউট। বাংলাদেশ সমর্থকদের কেউ কেউ এক ঝাঁক স্পিনার নিয়ে গড়া ১৪ জনের স্কোয়াড দেখে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কারো কারো মুখে উচ্চারিত হয়েছেন এমন সংলাপ, `দলে একজন ফাষ্টবোলারও নেই। এক গাঁদা স্পিনারে ঠাসা। এটা কোন টেষ্ট দল হলো?` যারা এমন তির্যক কথা বলে ফোরন কেটেছিলেন, তারা নিশ্চয়ই এখন লজ্জায় মুখ ঢাকছেন। তাদের প্রতি প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর একটাই বক্তব্য, `আমরা কন্ডিশন ঠিক মত বিচার বিশ্লেষণ করেই ১৪ জনের দল সাজিয়েছি। ১১ জন বেছেও নিয়েছি উইকেটের গতি-প্রকৃতি দেখে। উইকেট স্লো ও স্পিনারদের পক্ষে থাকবে, তা আগে ভাগেই আঁচ করেই দলে বাড়তি স্পিনারের অন্তর্ভুক্তি। শুরুতে সেটা ক্লিক করেছে। শুরুতে পাওয়া সাফল্যর ধারা বজায় থাকলেই চলে।` ওদিকে ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের হতাশাও কিছু কম নয়। ভেবেছিলেন একরকম , আর হলো অন্যরকম। নিজে রান পাননি। বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসানের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে মাত্র ৪ রানে বোল্ড ইংলিশ অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ব্যর্থতার চেয়েও ইংলিশ অধিনায়ক নিশ্চয়ই অন্য কারণে আরও বেশি হতাশ। উইকেট চিনতে বড্ড ভুল হয়ে গেছে। কোখায় ভেবেছিলেন উইকেট হবে ব্যাটসম্যানদের বন্ধু, তা না এ দেখি স্পিন ফ্রেন্ডলি পিচ।ধারণা ছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের তিন নম্বর পিচ শুরুতে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে স্লো বোলারদের দিকে ঝুঁকবে। কিন্তু তা আর হলো কই? উইকেট যে শুরু থেকেই স্পিনারদের বন্ধু। প্রথম ঘন্টা পাড় না হতেই ‘ইয়া বড় বড় টার্ন।’ অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের টার্নে পরাস্ত ডাকেট আর গ্যারি ব্যালান্স। আগের তিন টেষ্টের পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে , আজকের ম্যাচের আগে গত দুই বছরে এই মাঠের তিন নম্বর উইকেটে যে তিনটি টেষ্ট হয়েছে, তার সবকটায় টস জয়ী দল আগে ব্যাট বেছে নিয়েছে। এ টেষ্টেও যে দল টস জিতবে তারাই আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়বে। খেলা শুরুর আগে এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। হলোও তাই। ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক টস জিতেই ব্যাট হাতে নেমে পড়লেন সঙ্গী বেন ডাকেটকে নিয়ে। শ্রীলঙ্কান ম্যাচ রেফারি রৌশান মহানামার ছুড়ে দেয়া কয়েন পিচের ওপর পড়ার মুহূর্তেই চোখে মুখে আলোচ্ছটা অ্যালিস্টার কুকের। ইংলিশ অধিনায়ক খুশি হতেই পারেন। টস জিতলে ব্যাট করবেন, ভেবেই রেখেছিলেন। তার চোখে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এ উইকেট প্রথম দুদিন ব্যাটিং বান্ধব হয়ে থাকবে। তারপর যত সময় গড়াবে ততই স্লো হয়ে বোলারদের দিকে ঝুঁকবে। মাত্র ৪ ঘন্টা অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে উইকেটের গতি প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে অমন কথাই বলেছিলেন কুক। এ পিচে প্রথম ব্যাট করার অর্থ নিশ্চিন্তে দুদিন ক্রিজে কাটিয়ে দেয়া। এমন ভেবে টস করতে যাওয়া। আর টস জিতে এক মুহুর্ত দেরি না করে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপাকে পড়া। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণিতে প্রথম ঘন্টায় ২১ রানে তিন টপ অর্ডার ডাকেট, কুক ও গ্যারি ব্যালেন্সের উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে যাওয়া। ইংলিশদের শুরুতে চাপে ফেলে দিয়ে টস জিততে না পারার হতাশা নিশ্চয়ই কেটে গেছে হয়ত মুশফিকুর রহিমের।এআরবি/এমআর/আরআইপি
Advertisement