‘আচ্ছা মুশফিকুর রহীম শেষ কবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার সামনে এসেছিলেন? আজ সকাল থেকেই বন্দর নগরীর সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের মাঝে গুঞ্জন, ফিসফাস। উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো দারুণ এক তথ্য। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুর রহিম শেষবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন গত বছর ৩ আগস্ট, ঢাকার মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে।বৃষ্টিতে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র হবার পর মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে হিসাব কষলে, ৪৪৩ দিন পর আজ আবার সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার সামনে আসলেন বাংলাদেশ টেস্ট ক্যাপ্টেন। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে প্রেস মিটে দেখা মিললো মুশফিকের। তার আগে ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই একই মাঠে শেষবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ড্র হবার পরই কথা বলেছিলেন তিনি। আর পারফরমার মুশফিক শেষবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে প্রচার মাধ্যমের সামনে এসেছিলেন ১৩ মাস আগে; ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১০৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিয়ে সেরা হয়েছিলেন মুশফিক। এরপর ওয়ানডেতে আর ম্যাচ সেরার পুরস্কার জোটেনি তার। এই তো সেদিন, ১২ অক্টোবর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংলিশদের বিরুদ্ধে ৬৭ রান করার আগের সাত ম্যাচে (২১+২৮+৬+৩৮+১২+১২+২১) পঞ্চাশের ঘরেই পা রাখা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেন্ডেবলের। টি টুয়েন্টি ফরম্যাটে তার অবস্থা আরও খারাপ। শেষ ২৪/২৫ ম্যাচে কোন ফিফটি নেই। ক্রিকেটের এই ছোট্ট সংস্করণে মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরিই মাত্র একটি (২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর, শেরেবাংলায় ২৯ বলে ৫০)। টি-টোয়েন্টিতে ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন মাত্র একবার। সেটাও ছয় বছর আগে, ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর শেরেবাংলায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২৬ বলে ৪১ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। সব মিলে অনেকদিন পর সংবাদ সন্মেলনে। মুশফিক নিজেও খানিকটা আবেগতাড়িত। তাই তো বুধবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে প্রেস কনফারেন্সে এক সাংবাদিক প্রশ্ন ছুড়তে গিয়ে তাকে ‘ক্যাপ্টেন’ বলে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে মুশফিকের আবেগতাড়িত বক্তব্য, ‘অনেকদিন পর সংবাদ সম্মেলনে শুনলাম যে কেউ আমাকে ক্যাপ্টেন বলল। ভালোই লাগল। আলহামদুল্লিাহ।’ এ তো গেল টেস্ট অধিনায়ক ও জাতীয় দলের পারফরমার মুশফিকের মিডিয়ার সামনে আনুষ্ঠানিক কথোপকথনের সাতকাহন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও অনেকদিন মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন না মুশফিক। নিজেকে সব সময় আড়ালেই রাখতে পছন্দ করেন তিনি। এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় স্থানীয় প্রচার মাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে এবার তিনি ছিলেন ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের অধিনায়ক। ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল ভিক্টোরিয়ার সাথে বিকেএসপিতে শতরানের পর প্রচার মাধ্যম তার মুখ থেকে একটি কথাও বের করতে পারেননি। একই লিগে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ও পরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া আবাহনীকে প্রথম লিগে হারানোর পরও মুশফিক ছিলেন নিশ্চুপ। এর আগে বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে যাচ্ছেতাই ফর্ম। আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের সাথে এই চট্টলায় শেষ ম্যাচ ছাড়া ব্যাট ও গ্লাভস হাতে পরফরমেন্স খারাপ থাকার কারণেই কিংবা নিজেকে অন্য কোন কারণে মিডিয়ার সামনে থেকে আড়াল করার চেষ্টায়ই হোক- মিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন মুশফিক। এই দূরে থাকার বিষয়টিই উঠলো বুধবার সংবাদ সম্মেলনে। হঠাৎ কেন প্রচার মাধ্যম থেকে দূরে থাকা? এটা কি কোন ক্রিকেটীয় কারণ, নাকি ব্যক্তিগত? মুশফিকের জবাব, ‘না না কোন ক্ষোভ, অভিযোগ কিংবা অনুযোগ থেকে নয়। এটা আসলে মনোযোগ একটা সুদির্নিষ্ট জায়গায় রাখার জন্য। আমি ভাবছিলাম মাঠ ও মাঠের বাইরে যদি অন্য দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারি, অন্তত বেশি সময় দিতে পারি, তাহলে ভালো হবে। এই একটা কারণেই। এর বাইরে তেমন কোনো কারণ নেই। আর শেষ ১৫ মাসে হয়তো বা কোনো খেলা হয়নি, তাই দেখা হয় না। হয়তো খেলা হলে নিয়মিত দেখা হতো।’এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement