বাংলাদেশ-রুশ সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। রাশিয়া ভ্রমণে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসাব্যবস্থা বাতিল করতে যাচ্ছে মস্কো। শুধু পাসপোর্ট থাকলেই রাশিয়া ভ্রমণ করতে পারবে বাংলাদেশিরা। তবে প্রাথমিকভাবে এই সুবিধা শুধুমাত্র কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা পাবেন।
Advertisement
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া দুই হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশিদের বরণ করতে প্রস্তুত। দুই দেশের মানুষের যাওয়া আসায় আর ভিসার দরকার নেই। পাসপোর্ট থাকলেই সে দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা। আপাতত এ সুযোগ সীমাবদ্ধ থাকবে কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের মধ্যে। তবে পরবর্তীতে এ সুযোগ সবার জন্য চালু করা হতে পারে।
বাংলাদেশিরা শুধু পাসপোর্ট হাতে নিয়েই ঢাকা থেকে মস্কো বা সেন্টপিটার্সবার্গে নামতে পারবেন। সেখান থেকে রুশ নাগরিকরাও ঢাকা সফর করতে পারবেন ভিসা ছাড়াই। জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ২২ সেপ্টেম্বর নতুন ওই ভিসা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
আনন্দবাজার বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হয়েও জনসংখ্যায় বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রাশিয়া। দেশটির নাগরিক মাত্র সাড়ে ১৪ কোটি, যেখানে বাংলাদেশে ২০ কোটি। সবার ওপর মানুষ। অন্য সম্পদ তার কাছে কিছু নয়। সেই জনশক্তির জোরে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। টেক্কা দিচ্ছে উন্নত দেশকেও। আর পাঁচ বছরে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। পরের ধাপে উন্নত দেশের সারিতে পৌঁছাবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি রাশিয়ার নজরে পড়েছে। তারা বরাবরই বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী।
Advertisement
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে ছিল মস্কো। সে সময় রাশিয়া দ্য ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক ছিল। রাষ্ট্রনেতা ছিলেন লিওনিড ব্রেজনেভ। এ ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের সুপ্রিম সোভিয়েতের প্রেসিডিয়ামে চেয়ারম্যান ছিলেন নিকোলাই পদগরনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিল তার সুসম্পর্ক।
আমেরিকায় রিপাবলিকান নেতা প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন তখন পাকিস্তান দরদি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের রাশ টানতে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী কথাটা পদগরনির কানে তুলতেই তুলকালাম। পাল্টা ব্যবস্থা নিতে তৈরি মস্কো। পশ্চাৎপদ আমেরিকা। বন্ধুত্বের পরীক্ষা তো বিপদের দিনেই। সেই মৈত্রী আজ সুদে আসলে বেড়েছে অনেকটাই।
সাবেক সোভিয়েতের ৭৫ শতাংশ এলাকা, ৫০ শতাংশ মানুষ নিয়ে নতুন রাশিয়া। সমানতালে উন্নয়ন চালাচ্ছে কৃষি আর শিল্পে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশে রাশিয়ার সব থেকে বড় অবদান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ। কেন্দ্রটি নির্মিত হলে বিদ্যুতের সমস্যা কমে যাবে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দিন দিন রাশিয়া অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭০ সালের জুলাইতে রুশ সংসদ ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি ধর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিরোবিজান এলাকা ইহুদিদের স্বশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
Advertisement
আগামী বছরের শুরুতে রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এজন্য ঢাকায় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে রাশিয়া।
এসআইএস/আরআইপি