বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে অবশেষে শ্রম আইনে বড় ধরনের সংশোধনী এনেছে কাতার সরকার। নতুন শ্রম আইনের সকল চুক্তিনামা চূড়ান্ত করেছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়। তবে সংশোধিত নতুন শ্রম আইন চলতি (অক্টোরব) মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও অবৈধ অভিবাসীদের বিশেষ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কারণে আগামী ১৩ ডিসেম্বর থেকে এ আইন কার্যকর হবে।সোমবার কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, কাতারের নতুন শ্রম আইন সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এ সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে গণসচেতনামূলক ক্যাম্প। কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রনালয়ের আয়োজনে দুই মাসব্যাপী এ কর্মসূচি চলবে। ক্যাম্পের মাধ্যমে ১৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া শ্রম আইন সম্পর্কে দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকদেরকে ধারণা দেয়া হবে। বিশেষ করে খুরুজ, নতুন চুক্তি নামা, স্পন্সর চেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত বুঝানো হবে, যাতে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করা হয়।কাতার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর ড. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, স্পন্সর পরিবর্তন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে যে কর্মীরা এই দেশে আসেন তাদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বা পাঁচ বছর থাকে, সকল শ্রমিক আসা করে দুই বছর অতিক্রম করার পর তাদের পছন্দ মতে স্পন্সর চেঞ্জ করে ভালো কোম্পানিতে চাকরি নিবে। নতুন এ শ্রম আইন কার্যকর হলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা পছন্দ মত স্পন্সর খুঁজে নিতে পারবেন। এছাড়া শ্রমিকরা তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আগের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাবেন।কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, নতুন এ আইনে কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। আমরা যারা ছোট ব্যবসায়ী আছি তাদেরও শ্রমিকের দরকার। আমরা দোকানের ভিসা পাই না এবং আইনটি কার্যকর হলে আমাদের যে সকল আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে রয়েছেন তাদেরকে চেঞ্জ করে নিয়ে আসতে পারবো।গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর বহু প্রতিক্ষিত স্পন্সর চেঞ্জ আইনের অনুমোদন দেয় কাতারের কেবিনেট। পরে স্পন্সর চেঞ্জ আইনটি কাতার সরকার গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ করেন।গেজেটে বলা হয়েছে, চলতি (২০১৬) বছরে ১৪ ডিসেম্বর আইনটি কার্যকর হবে। স্পন্সর চেঞ্জ আইনটি দুই মাস এগিয়ে অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তবে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর নতুন এ আইনটি কার্যকর হবে।যাদের হাউস তথা বাসায় কাজের ভিসা আছেন তারা এ আইনের আওতার বাহিরে। তবে আইনটি কার্যকর হলে তারা কাতার ছেড়ে গিয়ে নতুন করে অন্য ভিসা নিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া কাতার ছেড়ে যাওয়া বা আবার নতুন করে কাতারে প্রবেশের ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইনটি কার্যকর হলে কাতারে সকল শ্রমিকদের কাজের চুক্তি নতুন করে করতে হবে। নতুন ওই চুক্তি শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত হতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি হলে তা কোনোভাবেই ৫ বছরের বেশি হবে না। এছাড়া কোনো শ্রমিকের নিয়োগদাতা মারা গেলে বা ওই প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হলে সেই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে নতুন নিয়োগদাতার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন।অন্যদিকে, অনুমতি ছাড়া কোনো নিয়োগদাতা তার কোনো শ্রমিককে অন্য কারো কাজে লাগালে নিয়োগদাতার ৫০ হাজার কাতার রিয়াল জরিমানা এবং ৩ বছরের জেল হতে পারে। এছাড়া কোনো নিয়োগদাতা শ্রমিকের পাসপোর্ট নিজের কাছে রাখলেও ১০ থেকে ২৫ হাজার কাতার রিয়াল জরিমানার বিধান রয়েছে।আরএস/আরআইপি
Advertisement