পূজার ছুটিতে আনন্দে মেতে উঠেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। আনন্দের আতিশয্যে যেন আলসেমিও জড়িয়ে ধরেছে অনেককে। কিন্তু এই আনন্দ যাদের ছুঁতে পারেনি; তারা কাটাচ্ছেন কর্মে ব্যস্ত কয়েকটা দিন। বিভিন্ন পেশার মানুষের পূজার ছুটি মিললেও সমাজের একশ্রেণির মানুষ রয়েছেন, যাদের নেই কোনো ছুটি; বরং বেড়েছে তাদের পেশার চাহিদা।
Advertisement
বলা হচ্ছে শরীরের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনকারী একশ্রেণির নারীর কথা। যারা সমাজের চোখে পতিতা নামে পরিচিত। এশিয়ার বৃহত্তম ও পশ্চিমবাংলার সোনাগাছি পতিতাপল্লীর চেহারাটা এই কয়েকটা দিন ছিল একেবারেই অন্যরকম। আলসেমির কোনো অবকাশ নেই ওই পল্লীতে। কেননা পূজার এই কয়েকদিন পল্লীতে ‘কাস্টমার’দের ভিড় থাকে তুঙ্গে। আর তাই নবমী নিশি যখন দশমীর দিকে গড়াচ্ছে, তখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা পতিতাপল্লীর ঘরে ঘরে। এই পতিতাদের ঘরের মাটি নিয়েই দেবী প্রতিমা তৈরি হয়। সেটাই রীতি; কিন্তু খদ্দেরের সংখ্যা এতই বেড়ে গেছে যে, প্রতিমা দেখতে যাবেন সেই ফুসরতও মিলছে না তাদের।
গত দুই বছর দুর্গাপূজা হয়েছিল পশ্চিমবাংলার বিখ্যাত ওই যৌনপল্লীতে। কিন্তু এ বছর বন্ধ। পল্লীর নারীরা বলছেন, পূজার দিন অন্যরকম অর্থ নিয়ে আসে খদ্দেররা। চেনা দিনগুলোর চেহারা বদলে যায় এ সময়। নিয়মিত খদ্দেরের পাশাপাশি ভিড় বেড়ে যায় নতুন খদ্দেরের।
দেবী দুর্গা দেখতে আসা মানুষের এই কয়েকদিন গন্তব্য হয়ে ওঠে পতিতাদের ছোট্ট ঘরগুলো। অনেকেই পূজা দেখার পাশাপাশি এখানে ঢুঁ মারেন। সারা বছর দেখা না গেলেও পূজার কয়েকদিন সাধারণ ‘খদ্দের’ পেরিয়ে ‘বিশেষ খদ্দের’রই চাপ বাড়ে।
Advertisement
আর এই চাপ সামলাতে বাড়ে যৌনপল্লীর ব্যস্ততা। তুমুল ব্যস্ততায় কাটে যৌনকর্মীদের। ভিড় সামলাতে অন্যদিনের চেয়ে বেশি চাপ নিতে হয় তাদের। হাতের লক্ষ্মী ফিরিয়ে দিতেও চান না তারা। তাই পূজার কয়েকদিন অন্য চেহারা দেখা যায় যৌনপল্লীর ঘরে ঘরে।উৎসব ফুরনোর মুহূর্তে যখন ‘যেওনা নবমী নিশি’ বলে চাপা হাহাকার বাঙালির মনে মনে, তখন তা অন্যভাবে ফেরে এই পল্লীতে। তুমুল ব্যবসা শেষ হয়ে যাওয়ার দুঃখের পাশাপাশি শারীরিক ধকল কাটানোর একটু ফুসরত মেলে পূজার পরে। পতিতাপল্লীর ঘরে ঘরে আনন্দ নাকি বিষাদের ছায়া পড়ে বেশি বুঝে উঠতে পারেন না তারা।এসআইএস/আরআইপি