কক্সবাজারের উখিয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিধ্বস্ত হয় মেঘনা অ্যাভিয়েশনের ডেল-৪০৭ আর ৬৬ হেলিকপ্টার। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দুর্ঘটনা পরবর্তী পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটির কক্সবাজার রুটে যাওয়ারই অনুমতি ছিল না। বেবিচকের অগোচরেই হেলিকপ্টারটি পরিচালনা করে মেঘনা অ্যাভিয়েশন। অভিযোগ রয়েছে, প্রায়ই এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটছে মেঘনা অ্যাভিয়েশনে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেঘনা অ্যাভিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, মেঘনা অ্যাভিয়েশনের দুটি হেলিকপ্টার রয়েছে। তবে যে হেলিকপ্টারটির কক্সবাজার যাওয়ার রুট পারমিট রয়েছে, সেটি ১৬ সেপ্টেম্বর না পাঠিয়ে অনুমোদন ছাড়া অন্য হেলিকপ্টারটি পাঠানো হয়েছিল। আবার অনুমোদন থাকা হেলিকপ্টারটির কেবল কক্সবাজার পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি থাকলেও সেটি গিয়েছিল ইনানি বিচ পর্যন্ত। বেবিচকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেকটি হেলিকপ্টার নির্ধারিত রেঞ্জের ৬০০ কিলোমিটারের বেশি অতিক্রম করতে পারবে না।সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় এক হাজার ফুটের নিচ দিয়ে হেলিকপ্টার চালানোর নিয়ম না থাকলেও বেশিরভাগ হেলিকপ্টার চালানো হয় ৫শ’ ফুটের নিচ দিয়ে। আবার বাংলাদেশে শুধু দুটি হেলিকপ্টারের রাতে উড্ডয়নের অনুমতি থাকলেও ‘ভিজুয়াল ফ্লাইট রুল’ (ভিএফআর) অমান্য করে বেআইনিভাবে অনেক কোম্পানিই ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট চালাচ্ছে। যে কারণে ঘটছে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা।এ বিষয়ে বেবিচকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বেসরকারিভাবে হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য বেবিচকের নীতিমালা আছে। আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন সংস্থার (আইকাও) আইন অনুযায়ী সেগুলো তদারকি করে বেবিচক। এসব নীতিমালা মেনে চলতে হয় হেলিকপ্টার কোম্পানিগুলোকে। অন্যথায় লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। সাম্প্রতিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।মেঘনা অ্যাভিয়েশনের ইনানি বিচে পাঠানো হেলিকপ্টারটির রুট পারমিটের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের হেড অব অপারেশন সাইফুল আলম বলেন, আমরা কেবল বাণিজ্যই করি না, সামাজিক ও মানবিক অনেক কাজও করছি। তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম আবু জাফরের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।এ বিষয়ে মেঘনা অ্যাভিয়েশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের পরামর্শক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু জাফর জাগো নিউজকে বলেন, অনুমোদন ছিল কি না এটি তদন্তের আগে বলা যাবে না। তবে মেঘনা অ্যাভিয়েশনের আরেক কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, এটি সেলফি তোলার মাশুল।সূত্র জানায়, ক্ষেত্রবিশেষে হেলিকপ্টারে যাত্রী বহনক্ষমতা সর্বোচ্চ ছয়জন। পাইলট থাকেন একজন। উড্ডয়নের পর হেলিকপ্টারের সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে প্রতি ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার। আন্তর্জাতিক আইন ‘ভিজুয়াল ফ্লাইট রুল’ (ভিএফআর) অমান্য করে কেউ যদি রাতে ফ্লাইট চালায়, তাহলে ওই হেলিকপ্টার কোম্পানির অনুমতি আদেশ, এয়ারক্রাফটের এওসি (এয়ারওয়ার্দিনেস সার্টিফিকেট) ও পাইলটের বাণিজ্যিক লাইসেন্স বাতিল করার বিধান রয়েছে। যদিও এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। ২০০৯ সালের আগে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া দিলেও ব্যবসায়ীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে দেশে বেসরকারি হেলিকপ্টারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। এর মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে কেনা হয় তিনটি। এর মধ্যে দুটি কেনে জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল এবং একটি বিআরবি এয়ার লিমিটেড।২০১৪ সালে বেসরকারি খাতে যুক্ত হয় আরো একটি হেলিকপ্টার। এরপর ২০১৬ সালে একটি হেলিকপ্টার কেনে পারটেক্স অ্যাভিয়েশন। বর্তমানে হেলিকপ্টার সেবা ব্যবসায় যুক্ত অন্যতম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে- পিএইচপি গ্রুপের বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস লিমিটেড, স্কয়ার এয়ার লিমিটেড, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস, মেঘনা অ্যাভিয়েশন, আরঅ্যান্ডআর অ্যাভিয়েশন ও ইমপ্রেস অ্যাভিয়েশন।গত কয়েক বছরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হেলিকপ্টার ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে। ২০০০ সালে অ্যারো টেকনোলজিস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার সেবা চালু করেছিল। গ্রাহক আকৃষ্ট করতে না পেরে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া বেস্ট এয়ার ২০০২ সালে হেলিকপ্টার সেবা চালু করে কয়েক মাস পরেই বন্ধ করে দেয়।আরএম/বিএ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement