ব্যাটসম্যানদের একের পর এক উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার মাঝেও ইংলিশদের সামনে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং শেষ দিকে এসে ঝড় তুলেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। শুধু তাই নয়, আস্থার প্রতিদান দিলেন নাসির হোসেনও। ফেসবুকে ওঠা ঝড়ের কারণেই তাকে দলে নিতে বাধ্য হয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। শেষ পর্যন্ত এই তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ভর করে ইংল্যান্ডের সামনে ২৩৯ রানের লক্ষ্য বেধে দিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে ঝড় তুলেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মূলতঃ তার ঝড়ের সামনেই বাংলাদেশের রান ২৪০ ছুঁই ছুঁই হলো। ২৯ বল মোকাবেলা করে ৪৪ রান করলেন টিম বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার আর ৩টি ছক্কার মার। আফসোস, শেষ মুহূর্তে রান আউটটি না হলে হয়তো ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিটা করেও ফেলতে পারতেন তিনি। নাসির অপরাজিত থাকলেন ২৭ বলে ২৭ রানে।টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ৮৯ রানে ৪টি এবং ১১৩ রানে পড়েছিল ৫ উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইংলিশদের বিপক্ষে একমাত্র তার ব্যাটই ছিল স্বচ্ছন্দ। তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরি।সম্ভাবনা ছিল ক্যারিয়ারে আরেকটি সেঞ্চুরিরও। ইংলিশ বোলারদের সেভাবে শাসনও করে যাচ্ছিলেন তিনি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে গড়েছিলেন ৪৮ রানে জুটিও।তবে আদিল রশিদের গুগলির কাছে ধরা খেয়ে গেলেন। রশিদের লো হয়ে আসা বলটিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন রিয়াদ; কিন্তু ব্যাট ফাঁকি দিয়ে গিয়ে বলটি আঘাত হানে মাহমুদউল্লাহর প্যাডে। আম্পায়ার শরফদ্দৌলা আউটের সিদ্ধান্ত দিলেও বাংলাদেশ রিভিউ নেয়; কিন্তু রিভিউতে আউটের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো।এরপর আউট হলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। ৪৯ বলে ২৯ রানের সম্ভাবনাময়ী একটি ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি; কিন্তু আদিল রশিদের প্রলুব্ধ করা একটি বলে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। ছক্কা হাঁকাতে গেলেন। ধরা পড়লেন বাউন্ডারি লাইনে।মোসাদ্দেক আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন মাশরাফি। ওই সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের রান বুঝি ২০০’ও ছুঁবে না; কিন্তু সবাইকে নড়ে-চড়ে বসতে বাধ্য করেন টিম বাংলাদেশের অধিনায়ক। একপাশে নাসিরকে দাঁড় করিয়ে রেখে ঝড় তোলেন মাশরাফি। একের পর এক ছক্কা আর চারে ব্যস্ত করে তোলেন ইংলিশ ফিল্ডারদের। এর আগে টস করতে নেমে কয়েন নিক্ষেপে বাটলারের কাছে হেরেছিলেন মাশরাফি। টস ভাগ্যটাই কেন যেন যাচ্ছে না মাশরাফির পক্ষে। প্রথম ওয়ানডের মত দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও টসে হারলেন তিনি। ফলস্বরূপ আমন্ত্রণ পেলেন প্রথমে ব্যাট করার জন্য। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করেছিলেন ইরুল কায়েস এবং তামিম ইকবাল। দু’জনের ২৫ রানের জুটি বাংলাদেশকে শুরুতেই বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিল।তবে চিরাচরিত ভুলটা করে বসলেন ইমরুল কায়েস। গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করার কারণে যে আত্মবিশ্বাস ভর করেছিল, সেটা যেন একটু বেশিই হয়ে গেলো। যে কারণে ক্রিস ওকসের কাছ থেকে একটি শট বল পেয়েই লোভ সামলাতে পারলেন না তিনি। ডিপ স্কয়ার লেগে তুলে দিলেন আকাশে। ইংল্যান্ডও জাল পেতেছিল যেন। ক্যাচটা তালুবন্দী করতে মোটেও কষ্ট করতে হয়নি ডেভিড উইলিকে।১৮ বলে দুটি বাউন্ডারিতে ১১ রান করে সাজঘরে ফিরে গেলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান। ইমরুলের মত একই ফাঁদে পা দিলেন তামিম ইকবালও। লেগ সাইডে ফিল্ডিং সাজিয়ে রেখেছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। বোলার সেই ক্রিস ওকস। তামিমকে প্রলুব্ধ করলেন শট খেলার জন্য। শট বল হালকা বাউন্স হয়ে এসেছিল। তামিম পুল করতে গেলেন। সুতরাং ক্যাচ মিড উইকেটে। মঈন আলি ক্যাচটা ধরলেন। ৩১ বলে ১৪ রান করে আউট হলেন তামিম। তামিম-ইমরুলের মত উইকেট থ্রো করে আসলেন সাব্বির রহমান এবং মুশফিকুর রহিমও। প্রথমে সাব্বির রহমান আউট হলেন জ্যাক বালের একটি বলকে স্ট্যাম্পে টেনে নিয়ে বোল্ড হলেন। ২১ বল মোকাবেলা করে রান করেছেন মাত্র ৩। ৩৯ রানে পড়লো তিন উইকেট।এরপর মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ মিলে গড়েন ৫০ রানের জুটি। বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত মিলছিল এই দুই ভায়রা ভাইয়ের ব্যাটে ভর করে; কিন্তু জুটিটাকে বড় হতে দিল না মুশফিকুর রহীমের একটি ভুল। জ্যাক বালের একটি বাউন্সারকে পুল করার লোভ সামলাতে পারলেন না তিনি। ক্যাচ তুলে দিলেন মঈন আলি ক্যাচটা তালুবন্দী করলেন বাউন্ডারি লাইনের কাছে।মুশফিক আউট হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাধেন সাকিব আল হাসান। প্রয়োজন ছিল এই জুটিটা অনেকক্ষণ টিকে থাকার, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার। কিন্তু ২৪ রানের জুটি গড়ার পর ভুল করে বসেন সাকিব আল হাসান। বেন স্টোকসের বলটি লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। বল ছেড়ে দিতে গিয়েও গ্লাভসে লাগিয়ে ফেলেন সাকিব। উইকেটরক্ষকের হাতে গিয়ে জমা পড়ে ক্যাচটি। ৩ রান করে ফিরে যান সাকিব। আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement