আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা বেশ আগ থেকেই শুরু হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের একাদশতম আসরে কোন খেলোয়াড় কেমন করবে, কোন কোন খেলোয়াড়দের ওপর স্পট লাইট থাকবে, এসব আর কি! ঠিক তেমনি স্পিন বোলারদের নিয়ে আলোচনা করেছেন শ্রীলঙ্কার লিজেন্ডারি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। এবারের বিশ্বকাপে ১১ জন স্পিনারের ভালো করার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তার সেই তালিকায় সবার উপরে নাম আছে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের। মুরালির মতে, সদ্যই বিগ ব্যাশে খেলেছেন সাকিব। এখানে খেলার অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন তিনি। এ ছাড়া তার ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে অনেক বেশি উপকৃত হবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের একাদশতম আসরে রাজত্ব করে পেস বোলাররা। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় প্রথম স্থানে ছিলেন পাকিস্তানের পেসার ওয়াসিম আকরাম। সমানসংখ্যক ম্যাচে অংশ নিয়ে ১৬ উইকেট শিকার করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকেন ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম। এমনকি তালিকার পরের তিনটি স্থানের দুটিতেই নাম ছিলো মিডিয়াম পেসারদের। ১৯৯২ বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর প্রথম পাঁচজনের একজন ছিলেন পাকিস্তানের লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদ। ৯ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১৬ উইকেট ঝুলিতে ভরেছেন মুশতাক। তাই আসন্ন বিশ্বকাপে স্পিনাররা ভালো করবে বলে আশাবাদী মুরালিধরন। স্পিনার হিসেবে কারা ভালো করতে পারে- এমন ১১ জনের তালিকাও প্রকাশ করেছেন তিনি। কেন-ই-বা ওইসব স্পিনারদের সেরার তালিকায় রেখেছেন মুরালিধরন, তাও বিশ্লেষণ করেছেন। তারই কিছু অংশ তুলে ধরা হলো। সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) : বড় মাপের স্পিনার নয়, কিন্তু খুবই স্মার্ট বোলার সাকিব। সদ্যই বিগ ব্যাশে খেলেছেন। এখানে খেলার অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন তিনি। এ ছাড়া তার ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে অনেক বেশি উপকৃত হবে বাংলাদেশ। কারণ উইকেট শিকারে অনেক বেশি পারদর্শী এবং প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতেও পারে। এর প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছে সাকিব। রবীচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত) : সাকিবের মতো সদ্য অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা এখনো টাটকা ভারতের রবীচন্দ্রন অশ্বিনের। এটি অনেক বেশি কাজে দেবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে। তার বুদ্ধিদীপ্ত ডেলিভারী এবং কিছু বল থেকে অতিরিক্ত বাউন্স প্রতিপক্ষের জন্য বিপদের হবে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের ব্যাটিং পাওয়া-প্লেতেও বল হাতে দারুণ পারফর্ম করে অশ্বিন। রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত) : ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের শিরোপা জয়ের পিছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে জাদেজা। আহামরি স্পিনার নয়, কিন্তু প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে বেশ চৌকস সে। যদি নিজের সেরা ফর্মটা বিশ্বকাপে দেখাতে পারে জাদেজা, তবে ভারতের উপকারই হবে। ব্যাট হাতে ভালো স্কোর করতে পারে সে। স্লগ ওভারে তার ছোট ছোট কিছু ইনিংস উপকারে আসবে। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (নিউজিল্যান্ড) : তার মধ্যে সবই আছে। অভিজ্ঞতা, চাপ নেয়ার ক্ষমতা এবং কন্ডিশন সর্ম্পকে ভালো ধারণা। তার বৈচিত্র্যময় বোলিং, ফাটিং ডেলিভারি, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ-এগুলো সবই খুবই ভয়ঙ্কর। তার পারফরমেন্সের ওপর এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের অনেক কিছু নির্ভর করবে। ইয়াসির শাহ (পাকিস্তান) : স্পিনারদের সব গুণাবলী তার মধ্যে আছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কম থাকলেও, নিজেকে উজার করে দিতে পারবে সে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে দারুণ পারফর্ম করার ক্ষমতা আছে তার। নিষিদ্ধ সাইদ আজমলের অভাব বুঝতে দিবে না ইয়াসির। শহিদ আফ্রিদি (পাকিস্তান) : কন্ডিশন সর্ম্পকে দারুণ ধারণা রয়েছে আফ্রিদির। লাইন-লেন্থ বজায় রেখে বল করার সামর্থ্য তার রয়েছে। ব্যাটিংটাও ভালো জানে সে। শেষদিকে ঝড়ো গতিতে রান নেয়ার ক্ষমতা আফ্রিদির আছে। ইয়াসিরের সাথে আফ্রিদির পারফর্ম অনেক বেশি কাজে দেবে পাকিস্তানকে। এটিই আফ্রিদির শেষ বিশ্বকাপ। গত আসরে তার নেতৃত্বে দল সেমিফাইনালে খেলেছিলো। তাই নিজের শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইবে আফ্রিদি। সাচ্চিত্রা সেনানায়েকে (শ্রীলঙ্কা) : তার বোলিংস্টাইল এই কন্ডিশনের পক্ষে। এমনকি তার বাউন্সগুলো বেশ কাজে দেবে এই কন্ডিশনে। অ্যাথলেটিকসের মতো তার ফিল্ডিং প্রতিপক্ষের বেশ কিছু রান রক্ষাও করবে। লোয়ার-অর্ডারে ব্যাটিংটাও ভালো করতে পারে সেনানায়েকে। দলে রঙ্গনা হেরাথের মতো স্পিনার আছে। তবে আমার মনে হয়, হেরাথের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে সেনানায়েকে। ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা) : দক্ষিণ আফ্রিকার মূল ভরসা পেস অ্যাটাক। দলে ভালো মানের স্পিনার নেই। তবে কন্ডিশনের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন ইমরান তাহির। তার দ্রুত গতির বলগুলো ভালো কাজে দেবে এসব কন্ডিশনে। মোহাম্মদ নবী ও সামিউল্লাহ সেনওয়ারি (আফগানিস্তান) : স্পিন বিভাগে আফগানিস্তানের সেরা ভরসা নবী ও সেনেওয়ারি। অফ-স্পিনে ভালো করতে পারবে নবী। তবে উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে পারে সেনেওয়ারি। ওয়ানডেতে তার অতীত পারফরমেন্স তেমনই। ৪০ বলে উইকেট নেয়ার অভিজ্ঞতা তার আছে। জর্জ ডর্করেল (আয়ারল্যান্ড) : তার বয়স মাত্র ২২। তার বাঁ-হাতের ভেল্কি ইতোমধ্যে প্রমাণিত। ১৮ বছর বয়সেই ২০১০ সালে টুয়েন্টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে সে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলো ডর্করেল। ওভারপ্রতি ৪ দশমিক চার তিন রান দিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে ৭ উইকেট শিকার করেছে ডর্করেল। যা ছিলো অসাধারণ। এবারও ভালো পারফরমেন্স করতে সক্ষম হবে সে। দুটি বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে ডর্করেল।এএইচ/পিআর
Advertisement