আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে বড় জয়ে খানিকটা স্বস্তি; কিন্তু তাই বলে টাইগাররা সেই আগের রূপ ফিরে পায়নি। বোঝাই যাচ্ছে ১০ মাস না খেলার কারণে একটা জড়তা ও আড়ষ্টতা চলে এসেছে। মোদ্দা কথা, ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে আগের সেই ছন্দ ফিরে পেতে কিছু সময় লাগবে। টাইগাররা যখন নিজেদের ফিরে পেতে উন্মুখ, ঠিক সেই সময় ইংলিশদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। আর মাত্র ২৪ ঘন্টা পর মিরপুরের শেরে বাংলায় শুরু সিরিজ। ঘরের মাঠে এবার কেমন করবে মাশরাফির দল? আফগানিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচে পাওয়া রসদ কাজে লাগিয়ে ব্যাট ও বলে জ্বলে উঠে ইংরেজদের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে তো? পাঁচ বছর আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে পাওয়া ২ উইকেটের অতিনাটকীয় জয় আর গত বছর অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে শেষ বিশ্বকাপে পাওয়া ১৫ রানের ঐতিহাসিক জয়ের ধারা সমুন্নত রাখতে পারবে তো? নাকি ২০০০ সালের হোম সিরিজের পুনরাবৃত্তি ঘটবে? যেখানে দেশের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে নাকাল হয়েছিল টাইগারা। নানা প্রশ্ন। জল্পনা-কল্পনার ফানুস আকাশে উড়ছে। বোদ্ধা-পন্ডিতরা নানা রকম হিসেব নিকেশ করছেন। ভক্ত-সমর্থকরাও নিজ দলের সম্ভাবনা নিয়ে নানা আকাশ-কুসুম কল্পনায় ব্যস্ত। তবে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পরিষ্কার প্রমাণ হয়েছে দলে কিছু কিছু জায়গায় ফাঁক-ফোকর রয়ে গেছে। যার ঝালাই প্রয়োজন। সবার আগে দরকার ব্যাটিংটাকে আরও সমৃদ্ধ করা। মিডল ও লেট অর্ডার ব্যাটিংয়ে দূর্বলতা পরিষ্কার। আফগানিস্তানের মত কমজোরি ও অনভিজ্ঞ বোলিংয়ের বিরুদ্ধেও মিডল এবং লেট অর্ডার জ্বলে উঠতে পারেনি। যে কারনে তিন ম্যাচের একটিতেও শেষ ১০/১২ ওভারের ব্যাটিং ভাল হয়নি। রানও উঠেছে অনেক কম। হাতে পর্যাপ্ত উইকেট এবং ক্রিজে সেট ব্যাটসম্যান থাকার পর কোথায় রানের গতি তর তর করে উপরে উঠবে, তা না হয়েছে তার উল্টোটা। ছোট্ট পরিসংখ্যানে বিষয়টি পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। ২৫ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলায় প্রথম ম্যাচে হাতে ৭ উইকেট থাকার পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ১০ ওভারে রান উঠেছে মোট ৬৯। খোয়া গেছে ৭ উইকেট। আসুন দ্বিতীয় ম্যাচে। সেদিন শেষ ১০ ওভারে রান উঠেছে ৫৪। উইকেটের পতন ঘটেছে তিনটি। ওই রানও হতো না, যদি তরুণ মোসাদ্দেক অভিষেকে হাল না ধরতেন। ১৫৪ রানে ৭ উইকেট পতনের পর মাঠে নেমে ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংস উপহার দেন ময়মনসিংহের এ সাহসী যুবা। আর তার ওপর ভর করেই ২০৮ পর্যন্ত যাওয়া। একইভাবে তৃতীয় ম্যাচে আবার শেষ দিকে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও সাব্বিরের বড় জুটিতে (১৪০ রান) গড়ে উঠেছিল শক্ত ভীত। মনে হচ্ছিল স্কোর ৩০০ পেরিয়ে যাবে; কিন্তু শেষ ১০ ওভারে আবার সে একই ব্যর্থতা। এবারো ৭ উইকেট হাতে রেখে শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৪ রান তোলা। এবং ৫ ্ইকেট হারিয়ে বসা। এখানেই শেষ নয়। গত ৪ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওপেনার ইমরুল কায়েস, মিডল অর্ডার মুশফিকুর রহীম ও নাসিরের দৃঢ়তায় ৪০ ওভার শেষে বিসিবি একাদশের স্কোর ৩ উইকেটে ২৬০ রান। এরকম অবস্থা থেকে অন্তত ৮০ থেকে ৯০ কিংবা ১০০ রান হবার কথা। সেখানে বিসিবি একাদশ তুলেছে মোটে ৪৪ রান। আর হারিয়েছে ৬ উইকেট। মিডল ও লেট অর্ডারে কারো ব্যাট থেকে লম্বা ইনিংস বেরিয়ে না আসার কারণেই মূলতঃ এমন হচ্ছে। বারবার একই ঘটনা। প্রথম উইকেটে না হলে দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ উইকেটে একটি ১২০ প্লাস পার্টনারশিপ হচ্ছে; কিন্তু তার পর হঠাৎই ছন্দপতন ঘটছে। যারা শুরুর ধাক্কা সামলে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসছেন, তারা কেউই শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকতে পারছেন না। যখন ক্রিজে থাকলে হাত খুলে খেলে রানের চাকা সচল করার কথা, তখন সেট ব্যাটসম্যান যাচ্ছেন আউট হয়ে। আর তাতেই শেষ দিকে রানের চাকা সচল হবার বদলে আরও স্লথ হয়ে যাচ্ছে। সৌম্য রান খরায় ভুগলেও তামিমের ব্যাট ঠিকই কথা বলছে। চট্টলার এ ড্যাশিং ওপেনার আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচেই স্বচ্ছন্দে খেলে (৮০+২০+১১৮) ২১৮ রান করেছেন। ওপেনিং জুটিতে এক শক্ত ভীত গড়ে না উঠলেও তরুণ সাব্বির রহমান রুম্মনের সাবলীল ও সাহসী ব্যাটিং দেখাচ্ছে আশার আলো। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সাব্বির রহমান রুম্মনের ব্যাট থেকে আসা ৭৯ বলে ৬৫ রানের সাহসী ইনিংস টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা কমিয়েছে অনেকটাই। এর সঙ্গে হয়ত যোগ হতে যাচ্ছেন ইমরুল কায়েস। হঠাৎই নিজেকে ফিরে পেয়েছেন এ বাঁহাতি ওপেনার। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৩৭ রান করার পর প্রথম একাদশের বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি। শেষ দুই ম্যাচে ডাগআউট আর ড্রেসিং রুমে বসেই কেটেছে তার। সেই ইমরুল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফতুল্লায় গা গরমের ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠ গরম করে (৯১ বলে ১২১ রানের ঝড়ো ইনিংস) তুলে আবারও আলোচনায় চলে আসলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ৭ অক্টোবর শেরেবাংলায় ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে তামিমের সঙ্গে রানে ফেরা ইমরুল কায়েসই হবেন দ্বিতীয় ওপেনার। তামিম আগে থেকেই রানে। ইমরুলও হারানো ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। দুয়ে মিলে ওপেনিং জুটিতে একটা স্থিতি আসার প্রবল সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে; কিন্তু চিন্তাটা অন্যত্র। যাদের ওপর পুরো মিডল অর্ডার নির্ভর করে, সেই সাকিব আর মুশফিকুর রহীম স্বাভাবিক ছন্দে নেই। সাকিব আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের একটিতেও পঞ্চাশের ঘরে পা রাখতে পারেননি। তিন ইনিংসে করেছেন ১৭+১৭+৪৮ = ৮২ রান। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠা মুশফিকের অবস্থা আরও খারাপ। আফগানদের সঙ্গে এক ম্যাচেও বড় ইনিংস নেই। তিন খেলায় করেছেন মোটে (৬+৩৮+১২) ৫৬ রান। মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেছেন। তারপরও খুব যে বড় ইনিংস সাজাতে পেরেছেন, এমন নয়। একবার শুধু ষাটের ঘরে পা রাখা। তার শেষ তিন ম্যাচের স্কোর ছিল, ৬২+২৫+৩২*। মিডল অর্ডারের নির্ভরযোগ্য পারফরমারদের কারো ব্যাট থেকে লম্বা ইনিংস বেরিয়ে আসছে না বলেই শেষ দিকে রানের গতি বাড়ছে না। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের যে কেউ বড় ইনিংস সাজিয়ে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত ক্রিজে থাকতে পারলেই আর চিন্তা নেই। তখন শেষ ১০-৫ ওভারে রানের নহর বইবে। জাগো চ্যাম্পিয়নের ১২তম সংখ্যা পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকেআইএইচএস/পিআর
Advertisement