জাতীয়

খালেদার বিচার হলে প্রধানমন্ত্রীরও তা প্রাপ্য : সৌদি গেজেট

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো আন্তর্জাতিক পত্রিকার পাতায় উঠে আসছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। শুক্রবার ‘সৌদি গেজেট’ পত্রিকার সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। এতে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে প্রকাশিত ‘সৌদি গেজেট’ দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি পত্রিকা। এটি ছাপা সংস্করণের পাশাপাশি অনলাইনেও প্রকাশিত হয়। `কটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশের নেতাদের অন্ধ করেছে` শিরোনামের সম্পাদকীয়তে সৌদি গেজেট লিখেছে :  আগুনে মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার দায় কীভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভালো উদাহরণ আর হতে পারে না। গত সপ্তাহে দেশটির চট্টগ্রাম বিভাগের চৌদ্দগ্রামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর এ ঘটনার জন্য সরকার বিরোধী পক্ষকে দায়ী করছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করছেন, নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি আদায়ের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান খালেদা জিয়া এসব নাশকতা ও দাঙ্গা সৃষ্টি করছেন।বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে চলমান দীর্ঘ দ্বন্দ্বের বর্তমান দৃশ্যপট এটি। তাঁদের দুজনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা সাধারণ জ্ঞান ও দেশের স্বার্থকেও ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে সর্বজনস্বীকৃত একটি নিয়ম ছিল, সেটি হলো, এক সরকারের মেয়াদ শেষে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসে ক্ষমতা গ্রহণ করে, যাদের কাজ হলো পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই নিয়মটিই বদলে ফেলেন। নির্বাচনে কারচুপি করতেই এই বদল বলে এর প্রতিবাদ করেন খালেদা জিয়া। আইনি প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। ফল হিসেবে, নির্বাচন বর্জন করেন খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতায় থেকে যান।ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর দেশে একটি রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। নির্বাচনব্যবস্থা পরিবর্তন করলে ভোটের পর এমন পরিস্থিতি যে সৃষ্টি হবে, তা শেখ হাসিনা জানতেন। আবার তিনি নির্বাচন বর্জন করলেও যে এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে, সেটাও জানতেন খালেদা জিয়া।এদের দুজনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া কষ্টের। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর জন্য খালেদা জিয়াকে সত্যিই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত হলে প্রধানমন্ত্রীরও তা প্রাপ্য। কোনো রাজনীতিকেরই উচিত নয়, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কৌশল হিসেবে দেশের নাগরিকদের হতাশা আর প্রাণোচ্ছলতা নিয়ে খেলা করা।ট্র্যাজেডি হলো, সত্যিকারের বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হচ্ছে। অধিক জনসংখ্যার দেশটির বহুতল ভবনগুলো, যেখানে একসঙ্গে বহু শ্রমিক কাজ করেন, অথচ সেগুলো এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো ধস বা আগুন লাগার ঘটনায় এসব ভবনে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে।গত সপ্তাহে নাসিম প্লাস্টিক হাউসে ঘটা অগ্নিকাণ্ড এর সর্বশেষ উদাহরণ। ঢাকার এই প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে ১৩ শ্রমিক নিহত হয়। এর আগেও বহুবার যেমন ঘটেছে, ঠিক তেমনি অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা একেবারেই অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়েছে, জরুরি নির্গমন পথ ছিল ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে বহু ভীত শ্রমিককে হুড়োহুড়ি করে ভবন থেকে বের হতে হয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ কখনোই অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করেনি। কারখানায় কাজ করা সব শ্রমিকের নামের তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল না। তাই আগুন নেভানোর ছয় দিন পরও এটা স্পষ্ট নয় যে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছে।‘হত্যা’ শব্দটিই এখানে সঠিক। ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় এক হাজার ১০০ পোশাকশ্রমিকের (প্রকৃত সংখ্যা এক হাজার ১৩৪) মৃত্যু জানা ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বড় করপোরেট হত্যাকাণ্ড। কর্মকর্তারা খরচ কাটছাঁটকারী কারখানা মালিক, দুর্নীতিগ্রস্ত পরিকল্পনাবিদ ও নিয়ন্ত্রণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অঙ্গীকার সত্ত্বেও বাংলাদেশের অনেক কারখানাই এখনও মৃত্যুফাঁদ হিসেবেই রয়ে গেছে।যেহেতু খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা ক্ষমতার জন্য মুষ্টিযুদ্ধে লিপ্ত আছেন, সেহেতু যেসব বিষয়ে জরুরিভাবে নজর দেওয়া দরকার, সেগুলো অবহেলিত হচ্ছে।দুজনই এখনো তাঁদের নিজেদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়েই ব্যস্ত, সেহেতেু দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেই তাঁরা নজরে আনছেন না। রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য।এএইচ/আরআই 

Advertisement