খেলাধুলা

অধিনায়ক মাশরাফির আস্থা মাহমুদউল্লাহ

বাংলাদেশ ভক্তদের কাছে তামিম ইকবাল মানেই অনায়াসে ফ্রি স্ট্রোক প্লে। নিজের দিনে প্রতিপক্ষ বোলিং দুমড়ে মুচেড়ে দেয়ার পাশাপাশি ফিল্ডিং এলোমেলো করে দেয়া। অনেকেরই মত চট্টগ্রামের এ ড্যাশিং ওপেনারই টিম বাংলাদেশের ব্যাটিং ট্রাম্পকার্ড। আর টাইগার সাপোর্টারদের বড় অংশের চোখে সাকিব-মুশফিকুর রহীম হলেন প্রানভোমরা। আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। তাহলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কী? কেউ কেউ, মাহমুদউল্লাহকে বড় ক্রিকেটার মানলেও একটা ‘কিন্তু’ জুড়ে দেন। তাদের মত, মাহমুদউল্লাহও ভাল। তবে তামিম, সাকিব-মুশফিকের পারফরমেন্স যতটা দ্যুতি ছড়ায়, মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ও বল তত আলোকিত করে না।   যারা এমন ভাবেন, তারা শুনে অবাক হবেন- বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা কিন্তু ঠিক ওভাবে দেখতে নারাজ। টাইগার ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করেন।এ মুহুর্তে মাশরাফির অনেক আস্থা মাহমুদউল্লাহর ওপর। মাশরাফির মূল্যায়ন, ‘মাহমুদউল্লাহ সব সময়ই ভাল ক্রিকেটার। কার্যকর পারফরমার। আগে থেকেই দলে কম বেশি অবদানও রেখেছে। তবে বিশ্বকাপের বিশাল মঞ্চ থেকে নিজেকে অন্যভাবে মেলে ধরেছে সে। দিনকে দিন মাহমুদউল্লাহ আমার আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। যে কোন পরিস্থিতিতে মাহমুদউল্লাহ উইকেটে থাকলে একটা অন্যরকম আস্থা পাই। মনে বিশ্বাস জাগে, নিশ্চয়ই ও বড় সড় কিছু করবে।’ অধিনায়কের এমন আস্থা এমনি এমনি হয়নি। পারফরমেন্স দিয়েই মাহমুদউল্লাহ সে আস্থা অর্জন করেছেন। গত দুই বছরে বেশ কবার ঠিক সময় মত জ্বলে উঠেছে তার ব্যাট। ২০১৫‘র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে গ্রæপ ম্যাচটির কথাই ভাবুন!  ২০১৫ সালের ৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে চরম সংকটে ত্রাতা মাহমুদউল্লাহ। বোর্ডে  মাত্র ৮ রান জমা পড়তেই দুই ওপেনার তামিম (২) ও ইমরুল কায়েস (২) আউট। ড্রেসিং রুমে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। কি যে হবে? কি করে কাটবে এ সংকট? কঠিন বিপদে ও চাপে কে ধরবে হাল? ভক্ত ও সমর্থকদের মনে রাজ্যের চিন্তা ও শঙ্কা এসে ভর করলো। এমন সময় হাল ধরলেন মাহমুদউল্লাহ। রীতিমত ত্রানকর্তার ভুমিকায় অবতীর্ণ। ইংলিশ ফাস্ট বোলার জেমস অ্যান্ডারসনের রুদ্র মূর্তি আর স্টুয়ার্ট ব্রডের মাপা বোলিংয়ের সামনে অবিচল আস্থা ও বুক ভরা সাহস নিয়ে লড়লেন। তারপর যা ঘটল, তা সবার জানা। এক নতুন ইতিহাস ¯্রষ্টা হয়ে গেলেন তিনি। এতকাল যে কৃতিত্বটা অধরা ছিল, সেটাই অর্জিত হলো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করে বসলেন মাহমুদউল্লাহ।  এক সংগ্রামী শতকের সাতকাহন হলো রচিত। ইংলিশ বোলারদের শত চেষ্টা ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসলেন তিনি। সাধারনতঃ ক্রিকেট ভক্তরা যেমন সেঞ্চুরি দেখে খুশি হন, মাহমুদউল্লাহর ওই শতকটি অমন ছিল না। কি করে থাকবে? মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের পরতে পরতে ছিল ধৈর্য্য, মনোযোগ-মনোসংযোগ আর সংকট কাটিয়ে ওঠার দৃঢ় সংকল্প। তাই তো বাহারি মার আর চটকদার স্ট্রোক প্লে‘র বদলে ধীর স্থির ব্যাট চালনা। বলের মেধা ও গুণ বিচার করে ৬৯ বলে মাত্র তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় পঞ্চাশে পৌছে যাওয়া। একই ঢংয়ে খেলে ১৩১ বলে তিন অংকে পৌছে যাওয়া। ওই শতকের সঙ্গে যোগ হলো তার ভায়রা মুশফিকুর রহীমের ৭৭ বলে ৮৯ রানের আক্রমনাত্মক ইনিংস। ১৪১ রানের বড় জুটিতে মাশরাফির দল গিয়ে থামলো ২৭৫-এ। শেষ পর্যন্ত সেটাই জয়সূচক স্কোর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো। চরম বিপদে দলকে জয়ের পথ দেখিয়ে ম্যাচ সেরা মাহমুদউল্লাহ। ঠিক পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অন্যরূপ। এবার ১০০ প্লাস স্ট্রাইকরেটে ১২৩ বলে এক ডজন বাউন্ডারি আর তিন ছক্কায় ১২৮ রানের আক্রমনাত্মক ইনিংস। তারপর কেটে গেছে ১৩ ম্যাচ। ১২ ইনিংসে (২১+৫+১৭+৪+০+৫০+৯+৪+৫২+৬২+২৫+৩২*) তিনবার পঞ্চাশে পৌছেও আর একবারও শতরানের দেখা মেলেনি। তবে এ সময়ে মানে বিশ্বকাপের পর থেকে তার ব্যাটিং অর্ডার ঠিক ছিল না। এই ১৩ ম্যাচে বিভিন্ন পজিশনে খেলেছেন। কখনো তিনে। কখনো চারে। আবার কোন দিন পাঁচ-ছয়ে। অধিনায়ক মাশরাফি মনে করেন মাহমুদউল্লাহ যত ওপরে খেলার সুযোগ পাবে, ততই ভাল। কারণ তাতে দেখে খেলার সময় মেলে বেশি। শুধু মনে করাই নয়। টাইগার ক্যাপ্টেন চান মাহমুদউল্লাহ চারে খেলুক। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে শেষে শেরে বাংলায় নিজ ড্রেসিং রুমের সামনে দাড়িয়ে অধিনায়ক জানালেন, ‘ আমার মনে হয় তার জন্যই চারই বেষ্ট পজিসন। শুক্রবার তাকে চারেই খেলানো হবে।  গত বছর ফেব্রুয়ারীতে এডিলেডে ঐ পজিসনে নেমে শতরান করা মাহমুদউল্লাহ ১৯ মাস পর এবার ঘরের মাঠে আবার ইংলিশদের বিরুদ্ধে। এবারও কী জ্বলে উঠবে তার ব্যাট? অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান কি এবারও দিতে পারবেন ?  এআরবি/আইএইচএস/পিআর

Advertisement