বিনোদন

যেমন আছেন পর্দার নন্দিত জননী ডলি জহুর

ছোট কিংবা বড় পর্দায় অনবদ্য অভিনেত্রীর নাম ডলি জহুর। পর্দায় তাকে সবসময় প্রাণবন্ত হিসেবে পাওয়া যায়। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মুগ্ধ করে রেখেছেন দর্শকদের। আপাদমস্তক একজন অভিনেত্রী, একজন শিল্পী তিনি। একইসঙ্গে চমৎকার বন্ধুসুলভ মানুষ। এ প্রজন্মের তারকারা তাকে মা বলেই ডাকেন। তিনিও স্নেহ আর মায়ায় সবাইকে কাছে টেনে রাখেন। অভিনয়ের আঙিনাটাকেও তিনি ভালোবাসেন সন্তানের মতো।গুণী এই অভিনেত্রী বর্তমানে দুটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। একটি মীর সাব্বিরের পরিচালনায় ‘নোয়াশাল’ অন্যটি সাখাওয়াত মানিকের পরিচালনায় ‘মেঘে ঢাকা শহর’। এছাড়া ফাঁকে দু-একটি খণ্ড নাটক ও টেলিফিল্মেও অভিনয় করছেন। গেল শনিবার (৩ অক্টোবর) উত্তরার একটি শুটিং হাউজে বরেণ্য অভিনেত্রী জলি জহুরের সঙ্গে কথা হলো ‘মেঘে ঢাকা শহর’ ধারাবাহিক নাটকের শুটিং স্পটে। আলাপের শুরুতেই ডলি জহুর জানান তার মন খারাপের কথা। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে রিয়াসত আজিম স্বস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়া থাকে। সে ওখানে শিক্ষকতা করে। গেল এপ্রিলে তার প্রথম সন্তান হয়। কিন্তু সন্তান জন্মের তিন ঘণ্টা পরে মারা যায়। আমি তখন ছেলের কাছেই ছিলাম। এরপর আমার ছেলে মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ে। আমিও ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।’ আরো যোগ করেন, ‘তার কিছুদিন পরই আমার ছেলেটা রোড অ্যাক্সিডেন্টের কবলে পড়ে। সেখানে সে শারীরিকভাবে খুব বেশি আঘাত না পেলেও মোটা অংকের অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। সবমিলিয়ে আমি খুব বিষন্নতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’ ডলি জহুর ছয় মাস অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন গত ২২ আগস্ট। তারপর খুব বেশি নাটকে কাজ করছেন না। দিনের বেশিরভাগ সময় বাসায় কাটে তার। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। এছাড়া বাসায় থেকে টুকটাক টিভি নাটকগুলো দেখার চেষ্টা করেন। এখনকার নাটক প্রসঙ্গে বেশি কিছু বলতে চান না ডলি জহুর। নিজের নতুন নাটক ‘মেঘে ঢাকা শহর’ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গল্পটি আমার খুব ভালো লেগেছে। একান্নবর্তী পরিবার আজকাল দেখাই যায় না। কিন্তু এই নাটকে সেই আবহটা পাবেন দর্শক। এখানে নাসিম ও নাঈম আমার ছেলের চরিত্রে কাজ করেছে। ছেলে আর বউদের সঙ্গে নানা টানপড়েনের সংসার আমার। আশা করছি সবার জন্য উপভোগ্য একটি নাটক হবে।’ শুধু বলেন, ‘আমি যেহেতু খুব বেশি নাটক দেখি না তাই এটা নিয়ে বলতে চাই না। তবে আমার অভিনীত ‘নোয়াশাল’ নাটকটির প্রতিটি পর্ব নিয়মিত দেখার চেষ্টা করি। আর ঈদের কিছু নাটক দেখা হয়েছে তাও বেশ ভালো লেগেছে। নতুন কিছু ছেলেমেয়ে তাদের মেধাকে কাজে লাগাচ্ছে। এরা আগামীতে আরো ভালো করবে। তবে আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েছি বিজ্ঞাপনের কারণে। সে কারণে টিভির বদলে ইউটিউবেও কিছু নাটক দেখেছি।’ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তবে বর্তমানে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন তিনি। তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি এফ আই মানিক পরিচালিত ‘দুই পৃথিবী’। ছবিতে ডলি জহুর শাকিব খানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে হজে যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দেশে ফিরে আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করবো না। তারপর থেকে আমি আর বড় পর্দায় অভিনয় করিনি। আর আশা করি কাজ করবও না। যে কদিন বাঁচি চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকবো। ইন্ডাস্ট্রিটা আর আগের মতো নেই। কাজ, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন বলতে কিচ্ছু দেখা যায় না। কয়জন সিনিয়র শিল্পী নিয়মিত কাজ করেন এখন চলচ্চিত্রে? সবাই সব নষ্ট করে দিয়ে কেবল ভাবে- ছবি কেন চলে না!’জীবন সায়াহ্নে এসে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকটা নস্টালজিক হয়ে পড়েন ডলি জহুর। অভিনয় জীবনের হাজারো স্মৃতি তার চোখে ভেসে উঠতেই চশমার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যায় তার চোখে পানি টলমল করছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘জীবনে প্রাপ্তির হিসাব কষলে নিজের কাছে নিজেকে নিয়ে গর্ব হয়। কারণ কতশত চরিত্রে অভিনয় করেছি তার কোনো ঠিক নেই। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। যে কটা দিন বাঁচি এভাবেই সবার ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই।’ এনই/এলএ/এবিএস

Advertisement