সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় সারাদেশে এখন আলোচনায় বদরুল আলম। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অনিয়মিত শিক্ষার্থী বদরুলের এই হামলাকে ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে মন্তব্য করেছেন তার বিভাগের শিক্ষকরা। শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগে অধ্যয়নরত থাকলেও, তাকে শিক্ষার্থী নয়, শুধু একজন ঘাতক হিসেবে মনে করছেন তারা।বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে শাবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে স্নাতক শেষ করতে পারেননি বদরুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী যদি ৮ সেমিস্টারে (৬ মাসে ১ সেমিস্টার) স্নাতক শেষ করতে না পারেন, তাহলে তাকে অতিরিক্ত ৪ সেমিস্টার দেয়া হয়। তবুও যদি তিনি স্নাতক সম্পন্ন করতে না পারেন তাহলে তাকে বিশেষ সুবিধার জন্য বিভাগে আবেদন করতে হয়। বিশেষ সুবিধা পাওয়ার পর থেকে তিনি অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হন।অনিয়মিত শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং নিয়মিত বিভাগের ক্লাসে উপস্থিত না থাকায় বিভাগের অনেক শিক্ষকই তাকে চেনেন না। পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগের নাম প্রকাশিত হওয়ার পর তারা জানতে পেরেছেন বদরুল তাদের শিক্ষার্থী।এ বিষয়ে কথা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল মুনিম জোয়ার্দারের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘আমি কয়েক বছর দেশের বাইরে ছিলাম। বিভাগে পুনরায় যোগ দিয়েছি চলতি বছরের ২৯ জুলাই। বদরুল যেহেতু অনিয়মিত শিক্ষার্থী, তাই তাকে ওভাবে চিন্ততাম না।’তবে বদরুলের এই হামলাকে তিনি ‘ঘাতকের কাজ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বড় ভাবা শুরু করেন তখন তার পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব।’একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদিকুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘এখনকার তরুণ-তরুণীরা ওয়ান সাইডেড জীবনযাপন করতে চায়। যে কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যায় খুব কম তরুণ-তরুণীর সামাজিকীকরণ হয়। যে কারণে কোনো চাহিদা পূরণ না হলে কিংবা কারো দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলে, ব্যক্তি তখন হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন’।অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বদরুলের আজীবন বহিষ্কার দাবি করে বিভাগের প্রভাষক আসলাম হোসাইন জানান, ‘বদরুলের এই হামলার ঘটনায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো। সে অনিয়মিত শিক্ষার্থী-এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। সে এখন একজন ঘাতক, এটাই তার পরিচয়।’তবে এসব সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা এড়াতে কাউন্সিলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই মিসগাইডেড হয়ে থাকে, তাহলে তার ক্ষেত্রে কতটুকু করতে পারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই বৃহৎ পরিসরে কাউন্সিলিং করানোর ব্যবস্থা নেই। সারাবিশ্বের এই অস্থিতিকর সময়ে কাউন্সিলিং এখন খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে।’বদরুলের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির একজন সদস্য ও অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মুন্সী নাসের ইবনে আফজাল বলেন, যেহেতু আমি তদন্ত কমিটির একজন সদস্য তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তদন্ত প্রতিবেদন কবে নাগাদ পাওয়া যাবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব আমরা দেয়ার চেষ্টা করব।’এমআইটি/এআরএস/পিআর
Advertisement