আল্লাহ তাআলাকে তাঁর কর্মে তথা সৃষ্টি করা, রিযিক দান, জীবন-মৃত্যু ঘটানো বিষয়ে একক বলে স্বীকার করা; আবার যে সকল কাজের (ইবাদাত-আমলের) জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাতে তাঁর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা এবং কুরআন ও হাদিসে তাঁর যে সকল নাম ও গুণাবলী প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলোকে বিনা উপমায় তাঁর একত্ববাদের বিশ্বাস করা মুসলিম উম্মাহর জন্য অবশ্যক।আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের পরিচয় এবং তা পালন প্রসঙ্গে কুরআন এবং হাদিসে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে আল্লাহ তাআলার পরিচয় ও গুণাবলী উপস্থাপন করা হয়েছে। তাঁর একত্ববাদের পরিচয়ে দিতে গিয়ে তিনি কুরআনে সুস্পষ্টভাবে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করেছেন। যা তুলে ধরা হলো-সুবিশাল আকাশআল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানব জাতি! আমি যে একক উপাস্য তাঁর একটি বড় প্রমাণ হলো সুবিশাল আকাশ। এ আকাশের উচ্চতা, সূক্ষ্মতা ও প্রশস্ততা মানুষ অনন্তকাল থেকেই অবলোকন করে আসছে। যার মাঝে বিদ্যমান গতিহীন এবং গতিশীল নক্ষত্ররাজিও মানুষের চোখের সামনে রয়েছে।পৃথিবীর সৃষ্টিতাঁর একত্ববাদের বড় পরিচয় বহন করে এ বিশাল পৃথিবী। এটা একটা ঘন মোটা বস্তু। যা মানুষের পায়ের নীচে বিছানো রয়েছে। যার উপরে রয়েছে উঁচু উঁচু শিখর বিশিষ্ট গগণচুম্বী পর্বতসমূহ। এ পৃথিবীর মাঝেই রয়েছে তরঙ্গযুক্ত বড় বড় নদী ও সমুদ্র।জমিনে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের সুন্দর সুন্দর লতা ও গুল্ম। যার মধ্যে নানা প্রকারের শস্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ জমিনের উপর মানুষ অবস্থান করছে, নিজেদের ইচ্ছামতো ঘর-বাড়ি তৈরি করে সুখ-শান্তিতে বসবাস করছে। দুনিয়ার এক শ্রেণির মানুষ আকাশ দেবতা এবং ধরিত্রী মাতার অযৌক্তিক উপসনা করে যা অবৈধ ও অনর্থক।দিন-রাতের পরিবর্তনআল্লাহ তাআলার একত্ববাদের আরেকটি নিদর্শন হলো দিন-রাত্রির আগমন ও প্রস্থান। রাত যাচ্ছে দিন আসছে আবার দিন যাচ্ছে রাত আসছে। কখনোই এ নিয়মের ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দিন-রাত প্রত্যেকটি আপন আপন নির্ধারিত নিয়মে চলছে।কোনো কোনো সময় এ রাত-দিনে বৈচিত্র্য প্রকাশ পায়। কোনো সময় রাত বড় হচ্ছে দিন ছোট হচ্ছে আবার কোনো সময় রাত ছোট হয়ে দিন বড় হয়। দিনের কিছু সময় রাতে প্রবেশ আবার রাতের কিছু সময় দিনে প্রবেশ। এসবাই আল্লাহর একত্ববাদের নির্দশন। সমুদ্র বক্ষে জাহাজঅতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা সমুদ্রের দিকে দৃষ্টি দাও। এ সমুদ্রে বিচরণকারী নৌকা ও জাহাজ মানুষ, মালামাল ও বাণিজ্যিক দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করে। যার মাধ্যমে মানুষ দেশ-বিদেশের সঙ্গে লেন-দেন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হচ্ছে।বৃষ্টি বর্ষণআল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্ণাঙ্গ করুণা ও দয়ার মাধ্যমে আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষন করে থাকেন। এ বৃষ্টি বর্ষণে রয়েছে জীবনী শক্তি, বৃষ্টিপাতের পর দুনিয়ার প্রতিটি অনু-পরমাণুতে জীবন স্পন্দিত হয়। অর্থাৎ বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মৃত শুষ্ক জমিনকে নব জীবন দান করেন। যা থেকে মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা হয়।জীব-জন্তুর সৃষ্টিতারপর আল্লাহ তাআলা ভূপৃষ্ঠে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকারের জীব-জন্তু সৃষ্টি করেছেন। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এগুলোকেও আহার দান করেছেন। এ সকল জীব-জন্তুর থাকার, বিচরণ করার জায়গাও নির্ধারণ করেছেন।বায়ুর পরিচালনাআল্লাহ তাআলার কুদরতের অনন্য নির্দশন বায়ু বা বাতাস। এ বাতাসকে তিনি পূর্বে, পশ্চিমে, উত্তর ও দক্ষিণে চালিত করেছেন। কখনো ঠাণ্ডা কখনো গরম; কখনো কম কখনো বেশি তা মানুষের চাহিদা মোতাবেক তা পরিচালনা করে থাকেন।মেঘমালাআল্লাহ তাআলা আকাশ ও জমিনের মধ্যে মেঘমালাকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছেন। মেঘমালাকে তিনি এক দিক থেকে অন্যদিকে নিয়ে যান এবং মানুষের প্রয়োজনে তা জমিনে বর্ষন করেন।পরিশেষে...উল্লেখিত বিষয়সমূহ মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের অকাট্য নিদর্শন। যা দ্বারা মানুষ তাঁর প্রভূর ক্ষমতা অনুভব করতে পারে। আল্লাহ তাআলা ব্যতিত কেউই এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাই আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন-‘নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং মানবজাতীর উপকারার্থে সমুদ্রবক্ষে জাহাজ সমূহের চলনে এবং আসমান থেকে আল্লাহ তাআলা যে বারি (পানি) বর্ষণ করছেন তাতে, যা দ্বারা পৃথিবীকে মৃত্যুর পর জীবিত করেন এবং জীব-জন্তুকে যে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে এবং বায়ুর যাতায়াত করাতে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যে আল্লাহ তাআলার অনুগত হয়ে মেঘমালার গমনাগমনে সত্যিই বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে বহু জলন্ত নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৪)উপরে উল্লেখিত একত্ববাদের এ নির্দশন ও বিবরণগুলো মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা মানুষের চিন্তা ও গবেষণার জন্য কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁর একত্ববাদের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি
Advertisement