‘আওলাদ ভাই শুধু একজন ভালো মানুষ ছিলেন না, ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি একজন প্রবীণ বিনোদন সাংবাদিক হওয়ায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক ভেতরের খবর জানতেন। তারপরও ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হয় এমন সংবাদ কোনোদিনই লেখেননি। এককথায় তার মতো কেউ চলচ্চিত্রকে ভালোবাসেনি। এর বহু নজির আমার জানা আছে।’অকাল প্রয়াত বিনোদন সাংবাদিক মোহাম্মদ আওলাদ হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবে এক দোয়া-মিলাদ ও স্মরণ সভার আয়োজন করেন তার অনুজ বিনোদন সাংবাদিকরা। সেখানে অশ্রুভেজা চোখে কথাগুলো বলেন চিত্রনায়ক ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ওমর সানি।এ সময় ওমর সানি আরো বলেন, ‘শুধু সাংবাদিক নয়, অনেক শিল্পীদের বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন আওলাদ ভাই। আমার ও মৌসুমীর কাছে উনার জায়গা অনেক উপরে। আমার আর মৌসুমীর আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা আছে মানুষটির। মৌসুমী আওলাদ ভাইকে রাখী পরিয়ে ভাই বানিয়েছিল। তাই তিনি মজা করে আমাকে দুলাভাই বলে ডাকতেন। তার সেই ভালোবাসাভরা ডাক খুব মিস করি।’নব্বই দশকের এই সুপারহিট নায়ক আরো বলেন, ‘আওলাদ ভাই আজ আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তার অকালে চলে যাওয়ায় আমাদের চলচ্চিত্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। যেটা কোনোদিন পূরণ হবে না। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন। এটাই প্রার্থনা করি।’বিনোদন সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু, ফরমান আলী, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহিন সুমিন, রফিক শিকদার, চিত্রনায়িকা কেয়া, অধরা খান, আওলাদ হোসেনের ছেলে শাহবাজ হোসেন মুন ছাড়াও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তারা প্রত্যেকেই আওলাদ হোসেনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং তার বিদেহী আত্মায় শান্তি কামনা করেন।তবে মায়ের অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান। অন্যদিকে শুটিং ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি মিশা সওদাগর। এছাড়া বুধবার সকালে খালার মৃত্যুর কারণে ঢাকা ত্যাগ করেন সাইমন। তবে তারা প্রত্যেকেই আওলাদ হোসেনের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং সভায় উপস্থিত না থাকতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন।এদিকে, অনুষ্ঠানে আওলাদ হোসেনের ছেলে ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ বাবদ এককালীন দুই লাখ টাকার বৃত্তি প্রদান করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আওলাদ হোসেনের ছেলে মুনের হাতে দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন মুভি প্লানেট মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার ফরমান আলী।উল্লেখ্য, আওলাদ হোসেন গেল বছরের ২ অক্টোবর মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে রাজধানীর ঝিগাতলার নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি এক পুত্র, কন্যা ও স্ত্রী রেখে যান। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বিনোদন সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। বিশেষ করে চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় তিনি কিংবদন্তিতূল্য। অনেকে তাকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আর্কাইভও বলে থাকেন। তিনি কয়েকটি ম্যাগাজিন এবং দৈনিক পত্রিকায় সুনামের সঙ্গে চাকরি করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার বিনোদন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার অভাব আজও অপূরণীয় বলেই মনে করেন তার অনুজ সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র পাড়ার মানুষেরা।এনই/এলএ/বিএ
Advertisement