গত কয়েক বছরের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে হত দারিদ্র্যের হার কমছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির হিসাবে, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এমনকি আগামী অর্থবছর নাগাদ তা ১১ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাসেরও সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।মানুষের ক্রয়ক্ষমতার (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি) ভিত্তিতে অতি দরিদ্রের হার নির্ধারণ করে বিশ্বব্যাংক। আগে যেসব ব্যক্তির দৈনিক আয় ১ দশমিক ২৫ ডলারের নিচে ছিল তাদের অতি দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। এখন সংস্থাটি এই হার নির্ধারণের সংজ্ঞায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। এখন মানুষের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের কম হলে তাদের অতি দরিদ্র বলা হচ্ছে।ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোনো দেশের দারিদ্র্যের হার বলতে মূলত হত দরিদ্রকেই বোঝানো হয়। প্রত্যেক অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে বিচার করে বিশ্বব্যাংক এই হার ঠিক করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ অতি দারিদ্র্যের হার নিরসনে ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়ে অনেক ভালো করছে। তবে পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার মাধ্যমে নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে না। প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালে দারিদ্র্যের হার দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এসডিজির শূন্য দারিদ্র্যের লক্ষ্য অর্জনে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০-১১ সময়ে বাংলাদেশে অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ; ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৪; ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৫ দশমিক ৫; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ৭ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।চলতি অর্থবছর (২০১৬-১৭) সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করলেও তা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে জানায় সংস্থাটি। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশ নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।এর কারণ হিসাবে জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী দুর্বল প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকা এবং অভ্যন্তরীণ কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে থাকায় প্রবৃদ্ধি এরকম হবে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা এবং আর্থিক খাতের অস্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ সমস্যা। নিরাপত্তার অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যেতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে বাণিজ্য সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ওইসব দেশে রফতানির ক্ষেত্রে করসহ বিভিন্ন বিষয় বাড়লে রফতানি কমতে পারে, যা প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যক্তিখাতে প্রবৃদ্ধি কমছে। অপরদিকে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন (জিডিপির ২১ দশমিক ৮ শতাংশ)। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সঞ্চয়ের অভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না, বিষয়টা এমন নয়। বরং দেশে মোট বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশি। আর বিনিয়োগ হচ্ছে না বলেই সঞ্চয়ের কিছু অর্থ যাচ্ছে রিজার্ভে আর কিছুটা পাচার হচ্ছে। এমএ/এমএমজেড/পিআর
Advertisement