ভ্রমণ

বিকশিত হচ্ছে না সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প

চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা, বনদস্যুদের উপদ্রব, অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা আর বন বিভাগের উদাসিনতার কারণে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকশিত হচ্ছে না। এছাড়া খুলনায় পর্যটন কর্পোরেশনের নিজস্ব অফিস ও তথ্য কেন্দ্র না থাকায় সুন্দরবন বিমুখ হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরা। যারা আসছেন তারাও পদে পদে দুর্ভোগে পড়ছেন। অথচ তথ্য কেন্দ্রসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কর্পোরেশনকে খুলনায় অফিস স্থাপনের জন্য জমি দেয়ার পরও সেখানে এখনও কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি।তবে পর্যটন কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, শিগগিরই খুলনায় পর্যটন কর্পোরেশনের কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের সুবিধার্থে ই-সার্ভিস কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে, যাতে অনলাইনে সরকারি ফি জমার সুযোগ থাকবে।জানা গেছে, বিশ্ব ঐতিহ্যমণ্ডিত সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের শতকরা ৮০ ভাগই খুলনা হয়ে সুন্দরবনে যায়। কিন্তু খুলনায় পর্যটন কর্পোরেশনের কোনো কার্যক্রম না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় পর্যটকদের। বাধ্য হয়ে তাদের ছুটতে হয় বেসরকারি ট্যুর অপারেটরের কাছে। তবে সেখানেও হোঁচট খেতে হয় তাদের। খুলনায় বেসরকারি পর্যায়েও ভালো মানের কোনো ট্যুর অপারেটর নেই। যা আছে তাদের নেই দক্ষ জনবল। নেই প্রশিক্ষিত ট্যুর গাইড। দু-একজন অদক্ষ-স্বল্পশিক্ষিত লোক দিয়ে চালানো হয় পর্যটকদের সেবা কার্যক্রম। এসব অদক্ষ কর্মী ও স্বল্পশিক্ষিত ট্যুর গাইড বিদেশি পর্যটকদের সঠিক সেবা দিতে পারেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার এসব ট্যুর অপারেটর যেসব নৌযান দিয়ে পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকেন, সেগুলোর মানও ভালো নয়।প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৯ মে খুলনার মুজগুন্নীতে পর্যটন কর্পোরেশনের অফিস করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দেড় বছর পার হলেও সেই জমিতে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি।সূত্র জানায়, খুলনায় পর্যটন কর্পোরেশনের কার্যক্রম ও হোটেল না থাকায় বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন বিমুখ হচ্ছেন। তবে সুন্দরবনের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের সুবিধার্থে শিগগিরই ই-সার্ভিস কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে, যাতে অনলাইনে সরকারি ফি জমার সুযোগ থাকবে।সুন্দরবন ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের মহাসচিব এম নাজমুল আজম ডেবিট বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সুন্দরবনের প্রতি সরকারের আরো বেশি নজরদারি প্রয়োজন। বিশ্ব ঐতিহ্যকে আরো বেশি তুলে ধরতে হবে বিশ্ববাসীর কাছে। প্রচারণা বাড়াতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে বন বিভাগ। তাদের দিয়ে পর্যটকদের সেবা দেয়া সম্ভব নয়। তাই সুন্দরবনের পর্যটকদের সেবা বাড়াতে আলাদা সেল করা দরকার। এ ক্ষেত্রে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু খুলনায় তাদের কোনো কার্যক্রমই নেই।২০১৪ সালে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটক সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়। গত বছর একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর নভেম্বরে মৌসুম শুরু হলে আশা করি পর্যটক বাড়বে।এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাঈদ আলী বলেন, সুন্দরবনে পর্যটক বাড়াতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বন বিভাগ ১০০ ট্যুর গাইডকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পর্যটন করপোরেশনও ২০ ট্যুর গাইডকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে টহল দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বোটে দুইজন করে গার্ড দেয়া হয়।এফএ/আরআইপি

Advertisement