একজন সদস্য না থাকায় কোরাম সংকটের কারণে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ গত চার মাস বন্ধ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের আইনে বলা আছে- একজন চেয়ারম্যান, দুইজন সদস্যসহ তিনজনের সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ পরিচালিত হবে। কোনো কারণে চেয়ারম্যান অথবা অন্য দুই সদস্যের একজন অনুপস্থিত থাকলে ট্রাইব্যুনাল বসবে না। এ বিষয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। তাই গত চার মাস ধরে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ বন্ধ।অন্যান্য ট্রাইব্যুনালের তুলনায় চাকরিপ্রার্থীদের জন্য গঠিত এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের গতিও অনেকটা কম বলে জানান বিচারপ্রার্থীরা। সারাদেশের জন্য মাত্র একটি প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায়ও কম বলে মনে করছেন তারা। তারওপর ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট একজন বিচারপতি নেই। তাই বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে আপিল আদালতে। আর ট্রাইব্যুনাল বন্ধ থাকায় বিচারপ্রার্থীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।এ বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ জাগো নিউজকে জানান, একজন বিচারপতি না থাকায় প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবে নাগাদ এই বিচারপতি নিয়োগ দেবে তার সঠিক সময় তিনি জানাতে পারেননি।জানা যায়, অবকাঠামোগত দিক দিয়ে এবং প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় মামলা নিষ্পত্তির গতিও ঢিলেঢালাভাবেও চলছে আপিলের এই ট্রাইব্যুনালে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করার কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই এখানে। বিচারের কাজে গতি কম থাকায় অনেক বিচারপ্রার্থী ট্রাইব্যুনালে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন। সরকারি চাকরিজীবীদের পদোন্নতি, অপসারণ ও অব্যাহতিসহ বিভিন্ন ধরনের মামলার বিচার হয় দেশের মোট সাতটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে।এসব ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য একমাত্র প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল। পিয়ন থেকে সচিব পর্যন্ত সরকারি যেকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের চাকরি নিয়ে সংকটে পড়লে এ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে হয়। তাছাড়া ভুক্তভোগীদের এসব বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ নেই। চাকরিপ্রার্থীদের মোকদ্দমা দায়ের করার পর যেকোনো বিষয় প্রথমে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল নিষ্পত্তি করবে তার পরের পর্যায় হলো প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল।মামলার বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ইয়াসমিন বেগম জাগো নিউজকে জানান, মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারবো না। এর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপরের নির্দেশনা ছাড়া কোনো বিষয়ে মুখ খোলা যাবে না।তবে ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০টি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। একটি মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করতে কমপক্ষে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ বছর।ট্রাইব্যুনালের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এখানে জনবলসহ নানা সমস্যা রয়েছে। স্টোর রুমের অভাবে ট্রাইব্যুনালের নথিপত্র, রায়ের কপিসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে অনেকবার মন্ত্রণালয়কে লেখা হলেও কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া নানা ধরনের অসুবিধার কারণে অনকে সময় বিচারপতিরা অনুপস্থিত থাকেন।উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে রাজধানীর আবদুল গনি রোডে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করে। একজন চেয়ারম্যান ও দু`জন সদস্যসহ ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে এ ট্রাইব্যুনালের যাত্রা।বিচারপতি একেএম ফজলুর রহমান আপিল ট্রাইব্যুনালের বর্তমান চেয়ারম্যান। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শেখ মো. রজব আলী এবং ড. গোলাম মতুর্জা মজুমদার। এছাড়া বিচারপতি রজব আলী অবসরে চলে যাওযার পর গত ১৯ মে থেকে আদালত বন্ধ।সারাদেশে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালগুলোকে ৭টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকায় গণি রোড অবস্থিত ৩টিসহ বরিশাল, চট্টগ্রাম, বগুড়া, খুলনায় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালগুলো জেলা ও দায়রা জজরা পরিচালনা করেন।এফএইচ/বিএ/আরআইপি
Advertisement