জাতীয়

নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি

নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করার দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এম মুয়াজ্জাম হুসেইন, পাওয়ার সেলের সাবেক ডিজি প্রকৌশলী বিডি রহমতুল্লাহ, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও কনভার্সন ওয়ার্কস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির।সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জনগণের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, গ্যাস তথা জ্বালানি খাত উন্নয়ন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। তার কারণ মূলত পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা।এই বাধাগুলো অপসারণে নাগরিক সমাজের পক্ষ তিনি নিম্নে উল্লেখিত প্রস্তাবসমূহ পেশ করা করেন এবং তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।১. রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন (২২৭ নং এসআরও) মতে আইওসির গ্যাস ট্যাক্স-ভ্যাটমুক্ত। জনস্বার্থে তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।২. গ্যাস কিংবা সিএনজির মূল্যহার বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান মূল্যহার বলবৎ রাখা হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়।৩. গ্যাস উৎপাদনে নিয়োজিত জাতীয় কোম্পানিসমূহের সক্ষমতা উন্নয়ন পরিকল্পনা বিইআরসি কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা আবশ্যক।৪. পেট্রোবাংলার আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখাসহ আইওসির গ্যাস বাবদ পেট্রোবাংলার আয়-ব্যয় অডিট করার জন্য বিইআরসির উদ্যোগ নেয়া দরকার।৫. কোম্পানিসমূহের নিকট থেকে পেট্রোবাংলা যে সার্ভিস চার্জ পায়, তা গণশুনানির মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত হওয়ার ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।৬. জনবল নিয়োগ এবং উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতে হলে তা স্বার্থসংঘাত মুক্ত হতে হয়। সেজন্য তা ভিন্ন কোনো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হলে উন্নয়ন সঠিকভাবে গতি পায়।৭. যেহেতু বিইআরসি বিচারিক প্রক্রিয়ায় মূল্যহার নির্ধারণসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তি করে, সেহেতু শাসন নয় বিইআরসি বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হওয়া সমীচীন। ফলে জ্বালানি বিভাগের পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সদস্যের নিয়োগ প্রক্রিয়াকরণ হলে বিইআরসি স্বার্থ সংঘাত মুক্ত হয় এবং উন্নয়নকে বাধামুক্ত করা সহজ হয়। পাশাপাশি কোম্পানি পরিচালনায় অপেশাদার ব্যক্তির পরিবর্তে যোগ্য, উপযুক্ত, দক্ষ, অভিজ্ঞ সৎ পেশাদার ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন দরকার।অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ৭ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এক নাগাড়ে ৭ দিনব্যাপী বিইআরসি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করেছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের নিকট শুনানি-পরবর্তী মতামত চেয়েছে। ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়ছেই এবং বাড়ানোর হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করেছে বিইআরসি।তিনি বলেন, শুনানি-পরবর্তী প্রদত্ত মতামতে গত ১১ আগস্ট বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ১৮ আগস্ট কৃষি মন্ত্রণালয় যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধি না করার জন্য বিইআরসিকে অনুরোধ জানিয়েছে। তিনি বলেন, একদিকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি, অন্যদিকে ব্যক্তিখাত এলপিজি ব্যবসায় পর্যাপ্ত মুনাফা লাভের সুযোগ সৃষ্টি- এই দুই উদ্দেশ্যে গ্যাস ও সিএনজির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এনেছে জ্বালানি বিভাগ। ফলে মূল্যহার পুনর্নির্ধারণে বিইআরসি সীমাবদ্ধতার শিকার হয়েছে এবং গণশুনানি মতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব সঠিক ও যৌক্তিক প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করেছে। তাই ভোক্তা ও পক্ষগণের মতামত ও সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে।এএস/বিএ/এবিএস

Advertisement