বিশেষ প্রতিবেদন

সঙ্কট না থাকলেও বাড়ছে চালের দাম

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-৬ টাকা। মাস খানেক আগেও মোটা জাতের গুটি ও স্বর্ণা চালের দাম কেজিপ্রতি ২৮-২৯ টাকা ছিল। এরপর তা কয়েক দফায় বেড়েছে।এছাড়া মিনিকেট চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪১-৪২ টাকা। বর্তমানে একই পরিমাণ পণ্যে ৪৩-৪৪ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন মিল মালিকরা। মোকাম থেকে ওই চাল ঢাকায় আনতে কেজিতে আরো এক টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে লাভ রাখতে মিনিকেট চাল তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫-৪৬ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি করতে হবে ৪৭-৪৮ টাকায়।রাজধানীর বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার হোসেন বলেন, এবার সরকার চাল একটু দেরি করে কিনছে। এ ছাড়া মোটা ধানের আবাদ কম হয়েছে। এতেই দাম বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ আসন্ন কার্তিকে দেশে আমনের নতুন ধান উঠবে। এ অবস্থায় মিলাররা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়েছেন। আগে মোকাম মালিকরা চাল সরবরাহের পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা সুবিধামতো দামে বিক্রি করতো। কিন্তু সম্প্রতি মিল মালিকরা মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করলে তার দায় ব্যবসায়ীদের নিতে হচ্ছে। মিল মালিকরা প্রতিদিনই চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলেও জানান পাইকারী ব্যবসায়ীরা।  বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে চালের কোনো সঙ্কট নেই। দেশের বিভিন্ন বাজারে যে পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত চালানো সম্ভব।  তবে রাজশাহী জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মুঠোফোনে বলেন, চালকল মালিকরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা (চালকল মালিক) চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ৮০ শতাংশ মালিক ঋণ খেলাপি হতেন না।  নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ চকদার জানান, সরকারি গুদামে চালের সরবরাহ প্রায় শেষের পর্যায়ে। তাই মোটা চালের বাজারে দামের কিছুটা হ্রাস-বৃদ্ধি মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া চিকন জাতের জিরাশাইল, মিনিকেটসহ কিছু জাতের ধানের চাষ বছরে একবারই হয়। তাই মৌসুমের শেষ দিকে সেসব জাতের চাল পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, চালের দাম বাড়ার এ প্রবণতা শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন পর। কৃষকদের সুরক্ষা দিতে চলতি অর্থবছরে চাল আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছে সরকার।এছাড়া এ মৌসুমে সরকারি চাল ক্রয়ের মূল্য ধরা হয় কেজিপ্রতি ৩২ টাকা, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কেজিতে ৫ টাকা বেশি। এ দুটি কারণেই চালের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি গত বোরো মৌসুমে মোটা ধানের আবাদ কমে যাওয়াও দাম বাড়ার একটি বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন তারা।তবে চালের দাম বাড়ার সুফল কৃষকরা পাচ্ছেন না। কারণ মৌসুমের শুরুতেই মিল মালিকদের কব্জায় চলে যায় অধিকাংশ ধান।এমইউএইচ/এএইচ/এমএস

Advertisement