মানুষের প্রতি মহান রাব্বুল আলামিনের দয়া ও করুণা অপরিসীম। কুরআন-সুন্নায় যার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তাইতো আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরকালীন জিন্দেগিতে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য অনেক উপায় অবলম্বনের পথ দেখিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো বান্দা যখন পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার পর অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর আলীশান দরবারে হাজির হয়, ব্যথিত মন নিয়ে দরবারে এলাহিতে ক্ষমাপ্রার্থী হয়, তখন আল্লাহ তাআলা এমন খুশি হন যেমন কোনো মা তার হারানো সন্তানকে পেয়ে খুশি হয়। বান্দার প্রতি আল্লাহর দয় ও করুণার কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো-বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া এত বেশি যে, তিনি বলেন, ‘তারাই সে সব লোক যাদের তাওবা আমি কবুল করি।’ তথা তাদেরকে ক্ষমা করে দিই। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি (বান্দার) অত্যাধিক তাওবা কবুল করে থাকি, (তিনি নিজেই বলেন) আমি অতিশয় দয়ালু।তাওবাকারীদের জন্য সুসংবাদ হলো আল্লাহ তাআলা কুরআনে বান্দাকে ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যখন নিজের গোনাহের কথা স্বীকার করে তাওবা করে থাকে; আল্লাহ তাআলা তাঁর তাওবা কবুল করেন।বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়ার প্রশস্ততা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আসমানের পশ্চিম দিকে একটা তাওবার দরজা রেখেছেন, যা সত্তর বছরের রাস্তার দূরত্ব পরিমাণ বিস্তৃত এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত দরজাটি কখনো বন্ধ করা হবে না। (মিশকাত)হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদিসটি বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও করুণার অপূর্ব নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বান্দার তাওবা করার জন্য আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হয়ে থাকেন, যে ব্যক্তির এমন যানবাহন কোনো নির্জন অরণ্যে হারিয়ে যায়; যার ওপর তার খাদ্য, পাণীয় ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ছিল। অতঃপর সে হারানো বাহন ফিরে পাওয়া সম্পর্কে নিরাশ হয়ে একটি বৃক্ষতলে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ব্যথিত, মর্মাহত, চিন্তিত এবং ব্যাকুল হয়ে পড়ে। ঠিক এমন সময় হঠাৎ বাহনটি ফিরে এসে তার নিকট দাঁড়ায়। তখন সে বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দের আধিক্যে বলতে থাকে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু (নাউজুবিল্লাহ)। অর্থাৎ খুশির আধিক্যে সে জ্ঞান শূণ্য হয়ে উল্টো কথা বলে ফেলে)। এ আনন্দিত ব্যক্তির চেয়েও অধিকতর আনন্দিত হন আল্লাহ তাআলা। যখন সে আল্লাহর নিকট তাওবা করে।বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়ার মূলকথা হলো- বান্দা আল্লাহ তাআলার ইবাদাত-বন্দেগি করবে। শয়তানের প্ররোচনায় খাহেশাতে নাফসানির তাগিদে যখন কোনো মানুষ গোনাহের কাজ করার পর অনুতপ্ত হৃদয়ে তাওবা করে এবং গোনাহ মাফ চায়, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির চেয়েও খুশি হন, যিনি অত্যাধিক আনন্দে জ্ঞান শূণ্য হয়ে পড়েছিলেন।পরিশেষে…আল্লাহ তাআলার দয়া বান্দার প্রতি এত বেশি যে, কিয়ামাতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিকে থেকে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গোনাহের জন্য তাওবা করবে, তার তাওবা আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন।’তাওবা কবুল প্রসঙ্গে বিশ্বনবি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ থেকে তাওবা করে সে এমন হয়ে যায়, যেন তার কোনো গোনাহ নেই।’ সুতরাং কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুণা লাভে তাওবার বিকল্প নেই।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ছোট-বড়, জানা-অজানা, ইচ্ছা-অনিচ্ছ্বাকৃত অপরাধে তাঁর নিকট তাওবা করে গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement