বিশেষ প্রতিবেদন

লিমনের ঘটনায় কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে

কাজী রিয়াজুল হক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব। মানবাধিকার কমিশনের করণীয়সহ নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ মতামত। বলেন, আইনি সীমাবদ্ধতার কারণেই কমিশন এগোতে পারছে না। কমিশনকে গতিশীল করতে আইনি কাঠামোর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু। আজ থাকছে শেষ পর্ব। জাগো নিউজ : কমিশনের উন্নয়নে নানা উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। এমন উদ্যোগ আগের কমিশনও নিয়েছে। কিন্তু কমিশনের প্রতি জনআস্থা বাড়ছে না কেন? রিয়াজুল হক : কমিশন এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সরকারের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করেছে। অতএব আমি আশাবাদী।জাগো নিউজ : সমাধানে সরকারের আন্তরিকতা দরকার। প্রতিনিয়ত হত্যা, গুম বাড়ছে। এ অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও। সরকার অভিযোগ অস্বীকার করছে। এ অবস্থায় আইনের পরিবর্তন, অধিক ক্ষমতা কীভাবে প্রত্যাশা করা যায়?রিয়াজুল হক : কমিশন এমনভাবে তদন্ত করার ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে, যাতে কমিশনের রিপোর্ট আদালত গ্রহণ করে। এর জন্য একটি তদন্ত সেল গঠন করা উচিত। কমিশনের প্রতি মানুষের এখনও অধিক বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। এই কারণে পুলিশ বাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যসহ সব মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি নিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের কাছে প্রস্তাব প্রেরণ করতে চাই। মানুষ কমিশনকে নখ-দন্তহীন বলতে পারে কিন্তু দুর্নীতিবাজ বলতে পারে না। জাগো নিউজ : লিমনের ঘটনায় কমিশন যখন দূতিয়ালি করে তখন কি আদৌ কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা থাকে? রিয়াজুল হক : এ বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। আমি আপনার সঙ্গে এই কক্ষে বসে কী আলাপ করছি, তা কিন্তু পাশের কক্ষের কেউ বুঝতে পারবে না। লিমনের ঘটনা ঘটার পরপরই তৎকালীন চেয়ারম্যান সেখানে চলে যান। কমিশন সিদ্ধান্ত নিল, লিমনের পক্ষে লড়ব। আমি প্রস্তাব দিলাম। পরে লিমনের কাছে গেলাম। লিমনের মামলা শুনানির সময় কমিশন উপস্থিত ছিল। লিমনের ব্যাপারে পরবর্তীতে দূতিয়ালি বিষয়টি আমার এবং সম্ভবত কমিশনের কোনো সদস্যের জানা ছিল না। সাবেক চেয়ারম্যান কখন লিমন আর লিমনের মাকে ডেকে এনে রুমের মধ্যে কী আলাপ আলোচনা করেছেন, তা আমার জানা ছিল না। অন্য সদস্যরাও জানতেন না বলে পরে জানতে পেরেছি। পরবর্তীতে পত্রিকা দেখে জানতে পারলাম। জাগো নিউজ : এতে কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে কিনা? রিয়াজুল হক : নিশ্চয় লিমনের ঘটনায় কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। কমিশন প্রথমে লিমনের ব্যাপারে যা অর্জন করেছিল, তা পরবর্তীতে একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। কী কারণে তার এই ভূমিকা, তা আমাদের কাছে জানা নেই। জাগো নিউজ : রাষ্ট্রপক্ষের কোনো চাপ ছিল কিনা? আপনার পর্যবেক্ষণ কী? রিয়াজুল হক : আমি তখন সদস্য ছিলাম। আমার কাছে এমন চাপের বিষয় জানা নেই। কেন তিনি (সাবেক চেয়ারম্যান) এমন ভূমিকা রেখেছেন, তার ব্যাখ্যা তিনিই ভালো দিতে পারবেন।জাগো নিউজ : লিমনের মতো ঘটনা আরো ঘটছে। র্যা ব-পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর এখনও... রিয়াজুল হক : যেহেতু আমাদের আইনগত ক্ষমতা নেই, তাই এসব অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি তদন্ত করতে পারি না। তবে তথ্যানুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চাই। জাগো নিউজ : দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোও। এ নিয়ে আপনার অভিমত কী?রিয়াজুল হক : বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সব অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয়, আবার সবই আমলে নেওয়ার নয়।  যেমন- জঙ্গিবাদের একটি ঘাঁটি বাংলাদেশে হতে যাচ্ছিল, এটি তো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে জাতিসংঘ আমাদের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।আবার বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। একজন মানুষ অপরাধী হতেই পারেন। কিন্তু তারও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। মারপিট করেই যে অপরাধীর কাছ থেকে তথ্য বের করতে হবে এমন নয়। নানা কৌশলেও তথ্য বের করা যেতে পারে। আমরা যত্রতত্র গ্রেফতারের ব্যাপারে খুব শক্ত করে বলেছি। ৫৪ ধারায় অর্থাৎ যত্রতত্র আটকে মানুষের মানবাধিকার খর্ব করা হচ্ছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। জাগো নিউজ : সরকার যে পদ্ধতিতে জঙ্গি দমন করছে, তা নিয়েও বিতর্ক ও প্রশ্ন আছে। আপনি কী মনে করছেন? রিয়াজুল হক : অপারেশনের সময় কী ঘটছে, তা বলতে পারব না। গণমাধ্যম থেকেই খবর পাই। জঙ্গি নিধন করতেই হবে, তবে অন্যের অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। জাগো নিউজ : জঙ্গি-পুলিশ পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত কিনা? রিয়াজুল হক : এ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। শঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।জাগো নিউজ : চলমান রাজনীতি কমিশনের কাজে অন্তরায় কিনা? রিয়াজুল হক : রাজনীতি আমাদের কতটুকু সমর্থন করল, সেদিকে আমরা তাকাই না। আইন আমাদের কতটুকু সমর্থন করল, সেটাই মুখ্য বিষয়। দেশের মানুষ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, এনজিও এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। জাগো নিউজ : কমিশনকে শক্তিশালী রূপ দিতে কী করণীয় বলে মনে করেন? রিয়াজুল হক : কমিশন ৪৮ জন জনবল নিয়ে কাজ করছে, যার অধিকাংশই সাপোর্টিং স্টাফ। বর্তমান কমিশন কর্মপরিধি বিশ্লেষণ করে ১৩৯ জন জনবল সমন্বয়ে একটি অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগবিধি প্রস্তুত করেছে। এটা শিগগিরই সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যদি জনবল ও যানবাহন দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে যাই তাহলে কমিশন মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।  এএসএস/জেএইচ/আরআইপি

Advertisement