বিনোদন

প্রেম কী বুঝিনি ছবিটি দর্শকদের মন ভরাবে : শুভশ্রী

কলকাতার জনপ্রিয় নায়িকা শুভশ্রী গাঙ্গুলি। দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবির নাম ‘প্রেম কি বুঝিনি’। কলকাতার এসকে মুভিজ ও বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে নির্মিত ছবিটিতে তিনি তারই স্বদেশী ওমের নায়ক। এটি আগামী ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও কলকাতায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ছবির প্রচারণায় সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেলেন স্পষ্টবাদী, বুদ্ধিমতি এই মিষ্টি নায়িকা। আবদুল আজিজ ও সুদীপ্ত সরকার পরিচালিত রোমান্টিক ঘরানার ছবিটি নিয়ে তিনি গতকাল সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি জাগো নিউজের সঙ্গে ‘প্রেম কি বুঝিনি’ ছবিসহ দুই বাংলার চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক কথা বলেন। লিখেছেন লিমন আহমেদ ও ছবি তুলেছেন মাহবুব আলম-জাগো নিউজ : দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশি দর্শকদের সামনে হাজির হচ্ছেন, দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ। কেমন লাগছে?শুভশ্রী : অবশ্যই ভালো লাগছে। অনেকটা লম্বা বিরতি দিয়ে আবারো বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করা হলো। প্রায় চার বছর সময়- অনেকটা কিন্তু। অনেক কিছু বদলেছে। তবে যখন আমার ছবি এই দেশে মুক্তি পায়নি তখনো কিন্তু বাংলাদেশে আমার প্রচুর ফ্যান ছিল। আর এখন তো সেটা বেড়েছে বলেই মনে করি আমি। এখনো অনন্য মামুন পরিচালিত সেই ছবিটির ‘বাংলাদেশের মেয়ে রে তুই’ গানটির অনেক প্রশংসা পাই। এটি শুনলে নিজেকে সত্যি বাংলাদেশের মেয়ে মনে হয়। আসলে এ দেশের মানুষের ভালোবাসাটা আমার কাছে ভগবানের বিশেষ প্রাপ্তি। জনপ্রিয়তার কথা আমার কাছে পছন্দের নয়, ভালোবাসাটা আমার কাছে প্রিয়। তাই এবারেও প্রত্যাশা করছি দারুণ কিছু হবে। জাগো নিউজ : আগেরবার অঙ্কুশের বিপরীতে ছিলেন। এবারে আপনার নায়ক তুলনামূলক কম জনপ্রিয় ওম। একটু কী ঝুঁকি থাকছে না ‘প্রেম কী বুঝিনি’ নিয়ে?শুভশ্রী : আমার কাছে তা মনে হচ্ছে না। তাছাড়া ওম বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই কাজ করছে। আমি শুনেছি সে এপার বাংলার একক প্রযোজনার ছবিতেও কাজ করছে। ওর গ্রহণযোগ্যতা এখানে কম থাকলে ওর চাহিদা থাকতো না। তাই আমি বলবো, এই ছবি নিয়ে আমি আগেরবারের চেয়েও বেশি সাফল্য প্রত্যাশী। জাগো নিউজ : ‘প্রেম কি বুঝিনি’ ছবিটি বাংলাদেশের দর্শক কেন দেখবেন?শুভশ্রী : ছবিটির নাম হলো ‘প্রেম কি বুঝিনি’। এর নামের মধ্যেই প্রেম আছে। আর আমরা সবাই প্রেম করতে ভালোবাসি। দুই বাংলার মানুষের সংস্কৃতিতে খুব একটা পার্থক্য কিন্তু নেই। সেখানেও প্রেমের যেমন আবেদন ঠিক একই রকম এখানেও। প্রেম এমন একটা অনুভূতি যা সব বয়সের মানুষ উপভোগ করেন। এটি একটা প্রেমের চলচ্চিত্র। এ ছাড়া পারিবারিক কিছু বিষয়ও রয়েছে। জাগো নিউজ : অধিকাংশ চলচ্চিত্রেই প্রেম থাকে। এখানে নতুন কী রয়েছে?শুভশ্রী : প্রেমের উপস্থাপনটাই এখানে নতুন। এখানে দর্শক দেখবেন ওম একটা ছেলে যার আত্ম অহংকার প্রবল। সে অন্যের প্রশংসা সহ্য করতে পারে না। আমি সবকিছুতেই প্রথম হই বলে আমাকেও অপছন্দ করে ওম। কিন্তু বাস্তবে সে আমাকে ভালোবাসে। সে যে আমার প্রেমে পড়ে আছে এটা সে বুঝতেই পারেনি। যখনই বা বুঝলো তখন দেরি হয়েছে। অনেক মজা আছে, প্রেমের প্রবল অনুভূতি আছে। আমার চরিত্রের নাম পারমিতা। পারমিতার জীবনের অনেকগুলো অধ্যায় দেখানো হয়েছে। যখন কলকাতা থেকে লন্ডনে পড়াশোনা করতে যান তখন সে খুব বাচাল, অনেক জানাশোনা একটা মেয়ের ভাব দেখায়। আসলে সে কিছুই জানেন না। ওখানে গিয়ে প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যায়। হঠাৎ করে জীবনে অবনতি ঘটে। পাশাপাশি আজকের সামাজিক ব্যবস্থায় অনেক বেশি বিচ্ছেদ, ভুল বোঝা-বুঝি, ডিভোর্স হয়। সে কারণে প্রেম করলে, ভালোবাসলে কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় সে সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক টিপসও রয়েছে। তাই ছবিটি দর্শকদের মন ভরাবে বলে প্রত্যাশা করি। যারা হলে গিয়ে ছবিটি দেখবেন তারা বিনোদনের ঠকবেন না বলে কথা দিতে পারি।জাগো নিউজ : এবারে বাংলাদেশে এসে কোন বিষয়গুলো আপনার ভালো লেগেছে?শুভশ্রী : অল্প কিছু সময়ের জন্য আসা হয়। তেমন করে দেখবার বা উপভোগ করবার সুযোগ মিলে না। তবে অল্প সময়েই এদেশের খাবারের প্রেমে পড়ে গেছি আমি। এখানকার ইলিশ মাছ ছাড়া সব খাবারই ভালো লেগেছে। কারণ আমি ইলিশ খাই না। বিশেষ করে ঢাকার মিষ্টি আমার খুব পছন্দ। প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখন থেকেই এই মিষ্টি প্রেম। এবারেও ঢাকা এসে আমি প্রথমে মিষ্টি খেয়েছি। বাংলাদেশে আসব আর মিষ্টি খাব না এটা হতেই পারে না। পরিচিত কেউ এপারে বলতাম আমার জন্য ঢাকা থেকে মিষ্টি নিয়ে এসো। এমনকী ‘প্রেম কী বুঝিনি’ ছবির শুটিং বিরতির সময় রেবেকা (বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রেবেকা) দি লন্ডন থেকে যখন বাংলাদেশে ফিরছিলেন বলে দিয়েছিলাম- আবার যখন আসবে অনেক মিষ্টি নিয়ে আসবে। যতো মিষ্টি আনবে, ততো ভালোবাসা পাবে। হা হা হা....জাগো নিউজ : এর আগে দেব, জিৎতের মতো বড় সব তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এবার ওমের সঙ্গে প্রথম জুটি বাঁধলেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের রসায়নটা কেমন হয়েছে?শুভশ্রী : ওম আমার জুনিয়র হলেও বেশ ভালো কাজ করছে সে। এই ছবিতেও দারুণ লাগবে ওকে। আর চলচ্চিত্রের প্রতি ওমের মনযোগ এবং শ্রদ্ধা যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আমাকেও করেছে। শুরুর দিকে ও আমাকে একটু এড়িয়ে চলতো। পরে আমিই ওর সঙ্গে নিজেকে কমফোর্ট করে নিয়েছি। বিশেষ করে প্রথম তিনদিন আমি ওমকে টর্চার করেছি। আমি ওকে বলেছি, তুমি সেটে এসে সর্বপ্রথমে আমাকে গুড মর্নিং বলবা। শুধু মুখে বললে হবে না, পায়ে প্রণাম করে বলবা। এটা বলার কারণ ছিল- ওকে ফ্রি করে নেয়া। তারপর বেশ মজা করেই প্রেম করেছি আমরা। আসলে প্রেমের ছবির নায়ক-নায়িকার মধ্যেও সবসময় একটা প্রেম প্রেম খেলা চলে। নায়কের সঙ্গে প্রেম না থাকলে পর্দায় প্রেম জমে না। দর্শকও প্রেমের সত্যিকারের আমেজটা পান না।জাগো নিউজ : আপনি যখন ২০১২ সালে বাংলাদেশি ছবিতে কাজ করলেন তখন এখানে শিল্পী সঙ্কট ছিলো। কিন্তু এখন মাহি, নুসরাত ফারিয়া, পরীমনির মতো জনপ্রিয় নায়িকারা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আপনি কতটা পেরে উঠবেন বলে মনে করেন?শুভশ্রী : দেখুন আমি আসলে কোনো প্রতিযোগিতার মধ্যে নেই। গতকালের আমার সাথে আজকের আমার প্রতিযোগিতা করতেই ভালো লাগে। তাই এখানে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলেই মনে করি। শুধু বাংলাদেশে নয় কলকাতাতেও আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। পরীমনি, মাহিয়া মাহি, নুসরাত ফারিয়া তারা আমার অনেক জুনিয়র। ওরা মাত্র কয়েকটা চলচ্চিত্রে কাজ করেছে। তাই ওদের সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতা এমনিতেই হয় না। কেননা, আমি কিন্তু ঢাকায় কোনো সিনিয়র অভিনেত্রী বা কলকাতার ঋতুপর্ণা দি’র সঙ্গে নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে পারি না। আর ওই যে বললাম আমি তো কোনো প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নই। তাই এই প্রসঙ্গটাই আসে না। জাগো নিউজ : তবুও ওদের জনপ্রিয়তার মুখে অন্য দেশের নায়িকা হিসেবে আপনার ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতা কিন্তু থেকেই যায়। শুভশ্রী : জন্মসূত্রে মাহিয়ারা বাংলাদেশি। ওদের জনপ্রিয়তা অবশ্যই এখানে বেশি থাকবে। নিজের দেশে সবাই বড় তারকা। তবে ওদের পাশাপাশি এ দেশে আমার যে জনপ্রিয়তা রয়েছে সেটার জন্য গর্বিত আমি। এ দেশের মানুষ আমাকে নিঃস্বার্থভাবে যে ভালোবাসা দিয়েছেন, দিয়ে চলেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। সেই ভালোবাসার জায়গা থেকেই আশায় বুক বেঁধেছি নতুন ছবি নিয়ে সফল হবো বলে। জাগো নিউজ : আমরা শুনেছি ঢাকার কিং খান খ্যাত শাকিব খানের বিপরীতে আপনি কাজ করতে যাচ্ছেন। এ কী সত্যি নাকি গুঞ্জন?শুভশ্রী : সত্যি। শাকিব খানকে আমি চিনতাম না। ওর সঙ্গে লন্ডনে পরিচয়। সেখানে অনেক কথা হলো। সে নিজের অনেক গুণের কথাই বললো। তবে আমি অবাক হয়েছি ওর মুখে এটা শুনে যে ও ছাড়া আর কারো ছবি এখানে চলে না। ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখতে তাকে বছরে ১০-১৫টি ছবি করতে হয়। এতবড় তারকার পরিচয় যে কারো জন্যই আনন্দের। তাই ওর বিপরীতে আমাকে যখন কাজের কথা বলা হলো রাজি হয়ে গেলাম।জাগো নিউজ : এই ছবিটি সম্পর্কে কিছু বলবেন?শুভশ্রী : এর সম্পর্কে আসলে এ মুহূর্তে কিছু বলা মুশকিল। আমি নিজের দুটো ছবি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আসছে পূজায় ‘প্রেম কী বুঝিনি’, ও ‘অভিমান’ ছবি দুটো রিলিজ হচ্ছে। এদের প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকবো। পূজার শেষে এই ছবির স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসবো। তখন কিছু বলতে পারবো। তবে শাকিবের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষা করছি আমি।জাগো নিউজ : সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?শুভশ্রী : যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রগুলোতে দুই দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীরা কাজ করে থাকেন। এগুলো দুই দেশের দর্শকদের জন্য দুই দেশেই মুক্তি পায়। দুই দেশের দর্শক দুই দেশের শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। সবকিছুতেই একটা বিশাল ভাবনার বিকাশ এখানে। আমি এটিকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখছি। এটা একটি গ্রেট প্ল্যান।জাগো নিউজ : বাংলাদেশি তারকাদের চেনেন বা এদেশের ছবি দেখা হয়?শুভশ্রী : অনেস্টলি বলবো এদেশের ছবি আমার দেখা হয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি মানুষদের সঙ্গে অনেক মিশেছি। তাদের কাছে বেশ কিছু চলচ্চিত্রের নাম আমি শুনেছি। সেগুলো দেখার জন্য চেষ্টা করছি। আর তারকা অনেককেই চিনি। মাহিয়া, নুসরাত তো দারুণ কাজ করছে। পরীমনিও বেশ সুন্দরী একজন অভিনেত্রী। আর শাকিব খানকে তো এখন কলকাতার চলচ্চিত্রে প্রায় সবাই চেনে।এলএ/আরআইপি

Advertisement