পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই কারাগার পরিদর্শন করতে চান। পরিদর্শনকালে ঐতিহাসিক এ কারাগারের কোথায় কি হবে সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কারা অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, এপ্রিল মাসে কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনকালে তিনি কারা মহাপরিদর্শককে এ ইচ্ছার কথা জানান। পরবর্তীতে কারা মহাপরিদর্শক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে কারাগার পরিদর্শন করতে চান বলেন তাকে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশে অধিদফতর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কবে নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সময় দিতে পারবেন তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।কারা অধিদফতরের এআইজি প্রিজনস (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শিগগিরই তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তার ছোট বোনের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনের সময় পাবেন। ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরের পর বর্তমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১৭ একর জায়গায় কি হবে? কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রত্মতত্ত্বের স্মৃতি ধরে রেখে কীভাবে জমির সঠিক ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে একটি পরিকল্পনা ও নকশা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও কারা অধিদফতরের আইজিকে (প্রিজন) সদস্য সচিবসহ একজন ইতিহাসবিদ, একজন স্থাপত্যবিদ ও একজন প্রত্মতত্ত্ববিদ সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের এ কমিটি এ নকশা প্রণয়ন করে জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়। কারা অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এককালের মোগল দুর্গ ও পরবর্তীতে ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে সংস্কারের মাধ্যমে জেলখানায় রূপান্তরিত নাজিমউদ্দিন রোডের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি অনেক স্মৃতিবিজড়িত। রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রত্মতত্ত্বসমূহকে ধরে রেখে কীভাবে জমির সঠিক ব্যবহার করা যায় প্রণীত নকশায় সে চেষ্টা করা হয়েছে।জানা গেছে, বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দুটি ভবন স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ, বঙ্গবন্ধু, চার নেতা ও কারা স্মৃতি জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত, সুন্দর একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণ, কারা অধিদফতরাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ। এছাড়া কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণ ফান্ড থেকে অর্থ ব্যয়ে বহুতল বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে সুইমিং পুল, কনভেনশন সেন্টার ও জিমনেশিয়ামের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এছাড়া কারাগারের সঙ্গে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের পাশে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে। বাকি জমিতে নির্মাণ করা হবে কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৩৬ সালের আগ পর্যন্ত এটি কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ব্রিটিশ শাসনের আগে এটি মোগলদের দুর্গ ছিল এবং পরবর্তীতে ১৯০০ শতকের শুরুর দিকে দুর্গ সংস্কার করে জেলখানায় রূপান্তরিত করা হয়।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এক সময় রাজনৈতিক বন্দিদের আটক রাখার জেল হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত ছিল। বিশেষ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তীতে ১৯৭১ এ রাজনৈতিক বন্দিদের এখানে রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এই জেলখানাতেই।এমইউ/এআরএস/পিআর
Advertisement