জাটকা নিধনের নিষেধাজ্ঞা শ্রদ্ধাভরে মান্য করেছে মৎস্য শিকারিরা। এ কারণে মৎস্যজীবীদের হতাশা কাটিয়ে সাগরে ধরা পড়ছে ইলিশের ঝাঁক। আহরণ বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজার ও অলিগলি সয়লাব হয়ে আছে ইলিশে। এতে স্বস্তির হাসি ফুটেছে জেলে ও বোট মালিকদের মুখে। তবে এবার ঘটেছে অন্য বিপত্তি। জাটকার পরিবর্তে কূলে উঠে আসছে ডিমে পূর্ণ মা-ইলিশ। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কিছুটা দাম কমলেও আবারো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। তাই লাভের আশায় তীরে আসা ইলিশ স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে জেলার বাইরে। সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী পশ্চিমপাড়ার বোট মালিক জিয়াবুল হক বলেন, বর্ষা থেকে দুর্দিন যাচ্ছিল মৎস্যজীবীদের। তার ওপর জাটকা আহরণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সব মিলিয়ে সাগরে যাওয়াও এক প্রকার বন্ধ ছিল জেলেদের। কিন্তু চলমান সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কুরবানির ঈদের একদিন আগে থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। আহরিত ইলিশ কক্সবাজারের নুনিয়াছড়া ফিশারিঘাটে স্বল্প পরিসরে ঢুকলেও প্রায় বোট মহিপুর, কুয়াকাটা ও বরিশালের বিভিন্ন মোকামে ঢুকে পড়ছে। শহরের লালদীঘি এলাকায় খাবারের মেস চালান দিদারুল আলম। তিনি বলেন, বাজারে আসা বিভিন্ন সাইজের অনেক ইলিশের পেটভর্তি ডিম মিলছে। একই কথা জানান বাহারছরার ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন, পেশকারপাড়ার গৃহিণী শাহানা আকতার, বৈদ্য ঘোনার পেশাজীবী ইকবাল বাহার, ঈদগাঁও বাজার পরিচালনা কমিটির সচিব ডা. মমতাজসহ অনেকেই। তাদের মতে, জাটকা নিধন রোধ সম্ভব হলেও এখন মা-ইলিশ ধরা পড়ায় বংশ বিস্তার আবারো বাধাগ্রস্ত হবে। কক্সবাজার বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, জেলায় প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক ফিশিং বোট রয়েছে। অধিকাংশ বোট কুরবানি ঈদের আগে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এ বোট ঈদের আগের দিন হতে বিপুল পরিমাণ মাছ নিয়ে কূলে ফিরছে। এর মধ্যে ইলিশের সংখ্যা বেশি।তিনি আরো জানান, গত এক দুই মাস আগে একটি বোটে ইলিশ ধরা পড়তো একশ থেকে এক হাজার। বর্তমানে প্রতিটি বোটে ইলিশ ধরা পড়ছে সাত থেকে দশ হাজার পর্যন্ত। এভাবে ইলিশ মিললে জেলে, বোট মালিক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা টানা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদিন হাজারি জানান, কিছুদিন আগেও যে ইলিশ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল সে ইলিশ ঈদের দিন ও তার পরের দিন ফ্লাট রেইটে বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। কিন্তু আবারো দাম বেড়েছে ইলিশের। আকারভেদে ৬০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৩৫ হাজার টাকা ও ৫০০ গ্রাম ওজনের মণ ২২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়াজাত করে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ ইতোমধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেছে ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন দেখা যায়, কিছুদিন ধরে সাগরের বিভিন্ন মোহনায় ধরা পড়া রেকর্ড পরিমাণ ইলিশে ছেঁয়ে গেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। প্রতিটি ঘাট দিয়ে তোলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ইলিশ। দাম কম হওয়ার পাশায় বাজার ও ফিশারি ঘাটে হুমড়ি খেয়ে পড়ে খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়তদারেরা। আবার অনেক খুচরা বিক্রেতা ঝুড়িতে করে শহরের অলিগলিতে ফেরি করে বিক্রি করছে। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, শুধুমাত্র ফিশারিঘাট থেকে গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ট্রাকযোগে ইলিশ নিয়ে গেছে ২৯ হাজার ৫৬০ কেজি। রোববারও প্রায় ১০ হাজার কেজি ইলিশ রাজধানীর উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা নিতে পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি।ফিশারিঘাট ছাড়াও টেকনাফ, মহেশখালী, উখিয়ার ইনানী ও কুতুবদিয়ার ঘাট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ইলিশ যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ইলিশ কোথাও মুভ করলে ঝাঁক বেঁধে চলে। আর ইলিশের প্রধান মৌসুম হলো ভাদ্রের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়। উজানের ঢল বা বানের পানি না হলে ইলিশ সাগর থেকে নদীতে আসে না এটাই নিয়ম। তাই উত্তরাঞ্চলে বন্যার পর থেকে নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এলে কিছুটা ডিম ভর্তিও আসবে এটাই স্বাভাবিক। কয়েক বছর ধরে সরকার মা-ইলিশ ও জাটকা নিধন রোধে অভিযান কঠোর করায় মৎস্য শিকারিরা এর সুফল পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/আরআইপি
Advertisement