মতামত

ঢাকা মেডিকেলে ‘ওয়ার্ডবয়’ যখন চিকিৎসক

চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার জন্য মানুষজন হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু সেখান থেকে ভুল চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলে এর চেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা আর কি হতে পারে? সেটা যদি আবার হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে তাহলে দুঃখের আর কোনো অন্ত থাকে না। ভুল চিকিৎসায়, চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু এবারের ঘটনাটি যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। বিপ্লব মণ্ডল (২৬) নামে কেরানীগঞ্জের এক রোগী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে  ঢাকা মেডিকেলের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিপ্লব অসুস্থবোধ করলে স্বজনরা তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ইনজেকশনের নাম লিখে দিয়ে তা দ্রুত কিনে আনতে বলেন। স্বজনরা ইনজেকশন কিনতে যাওয়ার সময় সুমন নামের এক যুবক এসে বিপ্লবের মুখে অক্সিজেন মাস্ক চেপে ধরেন। একটু পর সুমন নিজেই জানান, রোগী মারা গেছেন। এঘটনার পর উত্তেজিত জনতা সুমনকে গণুপিটুনি দেয়। পরে তাকে পুলিশ এসে নিয়ে যায়।  চার-পাঁচ মাস ধরে ঢাকা মেডিকেলের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডবয় হিসেবে চাকরি করছে সুমন।  এক চিকিৎসকের পরামর্শে সে ওই রোগীর (বিপ্লব) কাছে যায়।ভাবতেও অবাক লাগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে কী করে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘটনা ঘটতে পারে। ওই ‘ওয়ার্ডবয়’ আদৌ হাসপাতালে চাকরি করে কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়। তাছাড়া তার সুমন নামের কথিত ওই ওয়ার্ডবয়ের গলায় চিকিৎসকের স্টেথেসকোপ  এল কিভাবে? দায়িত্বরত চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর কি জবাব দিবেন। নানা অভিযোগ সত্ত্বেও এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মানুষের ভরসার স্থল। রাজধানীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানেই যদি চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তারা যাবে কোথায়? এই ঘটনা প্রমাণ করে হাসপাতালে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য কতো প্রকট। এছাড়া হাসপাতালে একজনের কাজ আরেক জনকে দিয়ে করানোর অভিযোগও পুরাতন। আয়া থেকে শুরু করে অনেকেই আলাদা করে লোক রেখে নেন তাদের কাজ করার জন্য। আর নিজেরা মেতে থাকেন রোগী ধরার দালালিতে। এ অবস্থার উত্তরণ প্রয়োজন। মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকবে। আমরা এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে-এমনটিই দেখতে চাই। এইচআর/পিআর

Advertisement