দয়ামায়া, ক্ষমা ও উদারতা মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ। এ কারণে মুসলমানের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শন করা। যারা ধর্মীয় ভাবধারায় লালিত-পালিত হন বা নিজেকে তৈরি করে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তারা সাধারণত নিজে সুযোগ-সুবিধা না নিয়ে অন্যের কল্যাণে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন।মায়ামমতা, ক্ষমা ও উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মক্কা বিজয়ের পর তিনি অপরাধীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অথচ তাদের চরম অত্যাচার নির্যাতনে তাঁর সঙ্গী-সাথীসহ জীবন বাঁচাতে আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পবিত্র নগরী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল।অন্য হাদিসে এসেছে, প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষকে কথা বা কাজ দ্বারা কষ্ট দেয় না, সেই প্রকৃত মুসলমান। যেহেতু ক্ষমা ও উদারতা আল্লাহ তাআলা গুণ, তাই উদারতার ধর্ম ইসলামের অনুসারী মুসলমানগণও উদার প্রকৃতির এবং ক্ষমাপ্রবন হয়ে থাকেন।আল্লাহ তাআলা সর্বশক্তিমান ও মহাপরাক্রমশালী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অপরাধী বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্ষমা ও উদারতার গুণগুলো অনুসরণ করার জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শনে আল্লাহর কিছু নির্দেশ তুলে ধরা হলো-আল্লাহ বলেন- ‘আপনি ক্ষমা করুন, সৎ কাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন। (সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৯৯) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অতএব আপনি তাদেরকে ক্ষমো করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ১৫৯)ক্ষমা ও উদারতা যেমন আল্লাহ তাআলার গুণ, আবার এগুলোকে নবি-রাসুলদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলেও কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং যারা নবি-রাসুলদের অনুসরণ করবে তারাও এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসুলগণ। (সুরা আহকাফ : আয়াত ৩৫)কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো ক্ষমা ও দয়ার গুণে গুণাম্বিত হওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা যদি ওদেরকে মার্জনা কর, ওদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর; তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। (সুরা তাগাবুন : আয়াত ১৪)পরিশেষে…মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। দৈনন্দিন কথা ও কাজে ভুল-ত্রুটি হওয়াই স্বাভাবিক। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষমা, দয়ামায়া ও উদারতা প্রদর্শনের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর দেখানো নীতি ও নির্দেশ অনুসরণ করা আবশ্যক। যারা এ পন্থা অনুসরণ করবে তারাই তাকওয়াবান এবং সফলতা লাভকারী।আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবমান হও; যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩)আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল কথা ও কাজে অন্যায়কারীর অপরাধ ক্ষমা করে তাদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করে তাকওয়ার সর্বোচ্চ গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। সকল মুসলমানকে ক্ষমা ও উদারতার বৈশিষ্ট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস
Advertisement