অটোতে চড়তে গিয়ে চালকের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠতেন যাত্রীরা। চালক যে একজন তরুণী! কেউ উঠতেন, কেউ উঠতেন না। ২১ বছরের সুপ্রিয়া রায় অবশ্য থেমে থাকেননি। সংসার ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তাগিদে চালিয়ে যাচ্ছেন অটো। বোনের বিয়ে দিয়েছেন বাবা-মা। কিন্তু বিয়ের পিঁড়ির বদলে সুপ্রিয়া পড়াশোনাই বেছে নিয়েছেন। দিনমজুর বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারে অনটন। তাই পড়া ও সংসার এক সঙ্গে চালানোর জন্য অটোর স্টিয়ারিং ধরেছেন ভারতের কাটোয়া কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুপ্রিয়া। শুরুর দিকে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ তার বাবা-মাকে বুঝিয়েছিলেন, পড়ানোর দরকার কী! বিয়ে দিলেই তো হয়। অনেকে আবার বলেছিলেন, মেয়ে অটো নিয়ে রাস্তায় বের হলে মান থাকবে তো? সুপ্রিয়া কোনো কিছুতেই কান দেননি।কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস দুয়েক ধরেই কাটোয়া শহরের অলিগলিতে নীল রঙের অটো নিয়ে দেখা যাচ্ছে সুপ্রিয়াকে। শহরের কাশীগঞ্জপাড়ায় বাবা, মা ও ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন এক কামরার টিনের চালের ঘরে। বাবা সুধীর বাবু অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি। বছরখানেক আগে মেজো বোনের বিয়ে হয়। কিন্তু সুপ্রিয়া নিজের পাশাপাশি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছোট বোন সঞ্চিতাকেও পড়াতে চান। তিনি জানান, বাবার আয় বন্ধ হওয়ার পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন তিনি। কিন্তু সেই আয়ে সংসার চলছিল না। আবার অন্য কোনো কাজে ঢুকলে কলেজে ক্লাস করার সময় পাওয়া মুশকিল হতো।শেষে মাস কয়েক আগে এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে অটো চালানোর ভাবনা মাথায় আসে। খানিকটা হাত পাকানোর পরে সেই আত্মীয়ের অটো নিয়েই রাস্তায় নামেন। দিন কয়েক আগে এক বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজেই একটি অটো কিনেছেন।অটো নিয়ে রাস্তায় নামা অবশ্য সহজ হয়নি। প্রতিবেশীদের নানা রকম মন্তব্য তো ছিলই। সঙ্গে ছিল যাত্রীদের সংশয়। অনেকেই বলতেন, কী সাহস, মেয়ে হয়ে অটো চালাচ্ছে! সুপ্রিয়া জানান, এসব শুনেও হাল ছাড়েননি। এখন সেই সব সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে। যাত্রীদের অনেকে চেনেন তাকে।কাটোয়া সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা অসিত সিংহ বলেন, প্রথম দিকে মনে হত, এত ছোট মেয়ে, অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে! এখন অবশ্য ওর অটোয় উঠতে ভালই লাগে। রিমা দাস নামে আরেক যাত্রীর কথায়, দারুণ কাজ করছে সুপ্রিয়া। ওকে দেখে অনুপ্রেরণা পাই। অন্য অটো চালকদেরও পাশে পেয়েছেন সুপ্রিয়া। কাটোয়ার টোটো ইউনিয়নের সম্পাদক গৌতম দাস বলেন, ওর যে কোনও সমস্যায় আমরা আছি। ওকে দেখে আরও মেয়ে এগিয়ে আসুক।সকালে এক দফা অটো চালানো, তার পরে কলেজে যাওয়া, বিকেলে আবার রাস্তায় নেমে পড়াই এখন সুপ্রিয়ার রুটিন। তার মা মমতাদেবী বলেন, মেয়েটা একা হাতে সংসার টানছে। এ কি কম কথা! এখন আর কারও কথায় কান দিই না। পড়াশোনা শেষেও কি টোটো চালাবেন? সুপ্রিয়া বলেন, ছোট থেকে স্বপ্ন দেখি, ট্রেন চালাব। সে জন্যই তো এত লড়াই।এসআইএস/আরআইপি
Advertisement