মতামত

ফারুক হত্যা ও এমপি রানার কারাবাস

যারা আইন প্রণয়ন করেন তারাই যদি আইন ভাঙেন এরচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যার যত প্রভাব আইন না মানার প্রবণতা তার ততো প্রবল। কিন্তু দুর্বল এবং সবলের জন্য যদি আইন একই গতিতে না চলে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দূরাশামাত্র। গণতান্ত্রিক চর্চাও এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সরকারি দলের কিছুসংখ্যক নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ আসছে যা কোনোভাবেই তাদের কাছ থেকে কাম্য নয়। নানাভাবে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে শিরোনাম হয়েছেন কক্সবাজারের সংসদ সদস্য বদি, ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী,  গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনসহ আরো অনেকে। মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় জড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা।  দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর  গত রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন তিনি। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারে। একজন আইন প্রণেতার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। মানুষজন  স্বাভাবিকভাবেই তাদের কর্মকাণ্ডে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ, ব্যক্তিত্ব, সদাচরণ, সততা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, পরোপকারিতা সর্বোপরি দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখতে চায়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে কেউ কেউ ক্ষমতা বলয়ের কাছে থেকে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। দল, সরকার, সমাজ, দেশ কোনো কিছুর প্রতিই এদের কোনো দায়বোধ দেখা যায় না। এরফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় রাজনীতি, মানুষের মনে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে। দুঃখজনক হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে সুবিধাবাদ। ফলে রাজনীতি থেকে আদর্শ লুপ্ত হতে বসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠে টিকে থাকার জন্য মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ব্যক্তিকেও মনোনয়ন দিচ্ছে। মানি-মাসল এর জোরে এদের অনেকে নির্বাচিত হয়েও আসছেন। খারাপ ভাবমূর্তির এসব লোকজন যখন নির্বাচিত হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা পাওয়া যায় না।বরং তারা নানাভাবে হুমকি ও আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠেন। আর একটি বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা বা খুনের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া এখন রীতিমতো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আর রাজনৈতিক মোড়কে কোনো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তার বিচার পাওয়ার নজির খুব একটা নেই। টাঙ্গাইলের এমপি রানার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা, সজ্জন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত ফারুক হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এছাড়া  এমপি রানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মোট ৪৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বিচার ছাড়াই ৪৪টি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ হিসেবে এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফারুক হত্যা মামলায় এখন তিনি কারাগারে। তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। বর্তমান সরকারের একজন সংসদ সদস্যকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে এটা স্বস্তির বিষয়। এখন মানুষজন দেখতে চায় যতোই প্রভাবশালী হোক না কেন আইন যেন তার নিজস্ব গতিতে চলে। যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। প্রভাবশালীদের অনেকেরেই ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মূল চেতনা হচ্ছে অন্যায় করলে কেউ পার পায় না। এটা সবক্ষেত্রেই দেখতে চায় মানুষজন। ফারুক হত্যা মামলায় বিচারের ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচারই প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী। এইচআর/এমএস

Advertisement