সীমান্তের ওপারের শহর কলকাতার ছেলে ওম প্রকাশ সাহানি। দুই বাংলাতেই তিনি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক। সমরেশ মজুমদারের গোয়েন্দা উপন্যাস অবলম্বনে ‘অর্জুন’ এবং কমার্শিয়াল ছবি ‘অ্যাকশান’ নামক দুটি ছবিতে অভিনয় করে টালিগঞ্জে নিজেকে আলোচনায় এনেছেন। ওপার বাংলার পাশাপাশি তিনি নাম লিখিয়েছেন ঢাকাই ছবিতেও। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘অগ্নি-২’, ‘অঙ্গার’, ‘হিরো ৪২০’ নামে তিনটি ছবিতে অভিনয় করে আলাদা দর্শক তৈরি করেছেন। তাই এখানে পরিচালক-প্রযোজকরা তাকে নিয়ে বিগ বাজেটের ছবির গল্প আঁটেন। সেই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওম চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সৈকত নাসির পরিচালিত ‘পাষাণ’ ছবিতে। যৌথ প্রযোজনার বাইরে ঢাকাতে এটাই ওমের প্রথম ছবি। এরই মধ্যে ছবির বেশ কিছু দৃশ্যে অংশ নিতে ঢাকা ঘুরে গেছেন এই নায়ক। এফডিসিতে ছবিটির শুটিংয়ের ফাঁকে ওম কথা বললেন জাগো নিউজের সঙ্গে... জাগো নিউজ : এই নিয়ে ক’বার ঢাকায় আসা হলো আপনার? ওম : আমি না সত্যি ভুলে গেছি ক’বার এসেছি। কারণ সেই ‘অগ্নি-২’ থেকে ঢাকার সঙ্গে আমার একটা যোগাযোগ তৈরি হয়। এরপর ‘অঙ্গার’, ‘হিরো ৪২০’ ছবির শুটিং এবং ছবি মুক্তির আগে প্রচারে বেশ কয়েকবার এসেছি। আর এবার আসা হলো ‘পাষাণ’র কারণে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটা মজবুত হচ্ছে। জাগো নিউজ : এবারের ঢাকা সফর কেমন লাগছে?ওম : (উচ্ছ্বাস নিয়ে) খুব ভালো লাগছে আবারো ঢাকায় আসতে পেরেছি বলে। এখানকার মানুষ, পরিবেশ, সবকিছুকে ভালোবেসে ফেলেছি। মানুষগুলো এত অতিথিপরায়ণ সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। জাগো নিউজ: পাষাণ ছবি সম্পর্কে বলুন......ওম : এটা ফুল অ্যাকশন ঘরানার একটি ছবি। সঙ্গে রোমান্স থাকবে। তবে অ্যাকশনটা বেশি প্রাধান্য পাবে। যেটা আমার মনে হয় আগে বাংলা ছবিতে খুব একটা দেখা যায়নি। আর ছবিতে আমাদের ফাইট ডিরেক্টর আছেন রাজেশ খান্নান। তিনি তো জান-প্রাণ লাগিয়ে আমার কাছ থেকে সেরাটা নেয়ার চেষ্টা করছেন। এফডিসিতে এই লট শেষ করে ঈদের পর আবারো মংলা পোর্টে ছবির নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সেখানে চলবে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। জাগো নিউজ : নির্মাতা হিসেবে সৈকত নাসিরের সঙ্গে আগেও একটি ছবিতে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন? ওম : প্রথমে বলতে চাই সৈকত নাসির ভাইয়ের সঙ্গে ইনডিভিজ্যুয়ালি এটা আমার প্রথম কাজ। এর আগে ‘হিরো ৪২০’ ছবিতে কাজ করেছিলাম যৌথ প্রযোজনার ছবিতে। সে ছবিতে দুই দেশের দুজন নির্মাতা ছিলেন। এবারই প্রথম ‘পাষাণ’ ছবিতে একক নির্মাতা হিসেবে তাকে পেলাম। এক কথায় বলছি, তাকে পেয়ে আমি জাস্ট পাগল হয়ে গেছি। কি দুর্দান্ত মেধাবী একজন মেকার সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। তার সঙ্গে কাজ করতে পেরে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ওভারঅল অ্যাজ অ্যা মেকার-মিস্টার সৈকত নাসির, দ্য ম্যান ইজ জাস্ট অসাম! জাগো নিউজ: ‘অগ্নি-২’, ‘অঙ্গার’, ‘হিরো ৪২০’ এই তিনটি থেকে ‘পাষাণ’ ছবিতে ব্যতিক্রম কোথায়? ওম : জাজ এবং এসকে মুভিজের মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘অগ্নি-২’ ছবিতে আমার প্রথম কাজ। সেটি ছিল মূলত নায়িকাপ্রধান ছবি। তারপর ‘অঙ্গার’ ছিল ভায়োলেন্ট অ্যাকশন ঘরানার ছবি। প্রচুর ফাইটিং, কাটাছেড়ার দৃশ্য ছিল সেখানে। ‘হিরো-৪২০’ ছিল মূলত কমেডি ঘরানার ছবি। এগুলো থেকে ‘পাষাণ’ একেবারেই আলাদা। কারণ এতে আমার লুক, গল্প পুরোপুরি আলাদা, ফাইটিং আলাদা। তাই আমি বলবো আগের তিনটি ছবি থেকে ‘পাষাণ’ ছবিটি পুরোপুরি ব্যতিক্রম।জাগো নিউজ: পাষাণের জন্য আলাদা করে কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?ওম : হ্যাঁ। কলকাতায় থাকা অবস্থায় সৈকত ভাই আমাকে জানান ‘পাষাণ’ ছবিতে কাজের কথা। তারপর উনি স্ক্রিপ্টটা পাঠিয়ে দেন আমার কাছে। আমি সেটা ভালোভাবে রপ্ত করার চেষ্টা করি। তারপর পাষাণের শুটিং শুরুর ক’দিন আগে ঢাকা চলে আসি। তারপর সৈকত ভাইয়ের সঙ্গে স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসি, আলোচনা করি। বলতে পারেন কিছুটা আলাদা গ্রুমিংও হয়েছে। জাগো নিউজ : এবার ঢাকায় এসে কোথাও ঘুরে বেড়িয়েছেন?ওম: পাষাণের কাজে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে। ক’দিন আগে গাজীপুর ইকো রিসোর্টে ছবির শুটিং করেছি। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। খুব এনজয় করে সেখানে কাজ করেছি। আর এখন এফডিসিতে কাজ করছি। আগামীতে তো মংলা যাচ্ছি শুটিং করতে। সেখানেও সুযোগ পেলে ঘুরে দেখবো।জাগো নিউজ : এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসতে চাই। আপনার ‘প্রেম কি বুঝিনি’ ছবির খবর জানতে চাই...ওম : ‘প্রেম কি বুঝিনি’ যৌথ প্রযোজনার ছবি। আমার বিপরীতে আছে শুভশ্রী। এটা একটা মিষ্টি প্রেমনির্ভর গল্পের ছবি। আগামী ৭ অক্টোবর দুর্গাপূজা উপলক্ষে ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পাবে। আর বাংলাদেশেও মুক্তি পাবে কুরবানির ঈদের পর। জাগো নিউজ : বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে নিজের অবস্থান কতটা মজবুত হয়েছে বলে মনে করেন?ওম : তিনটি যৌথ প্রযোজনার ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকরা আমাকে চিনেছেন। তারপর এদেশের একক প্রযোজনার একটি ছবিতে আমি কাজ করছি যেটি ‘পাষাণ’। এখন পাষাণের যিনি নির্মাতা আছেন তিনি অবশ্যই অডিয়ান্সের কথা এবং গল্প-চরিত্র বিশ্লেষণ করেই আমাকে নিয়েছেন। আমার যদি কোনো চাহিদা না থাকতো তবে তো আমি এদেশের ছবিতে কাজ পারতাম না, তাই না? আমার বিশ্বাস, আগের তিনটি ছবি দিয়ে আমি এখানকার দর্শকদের কাছে নিজেকে পরিচিত করেছি। আর পাষাণ দিয়ে আমি ঢাকার দর্শকদের মন জয় করতে চাই। আমি চাই এখানে আমার গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়ুক। কেননা, একজন শিল্পী হিসেবে বিশ্বজুড়েই নিজেকে ভালো ভালো কাজ দিয়ে বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই আমি।জাগো নিউজ : কোনো বিশেষ চরিত্রের প্রতি আপনার দুর্বলতা কাজ করে?ওম : আমি মনে করি একজন অভিনেতাকে সব চরিত্রের জন্যই দুর্বলতা রাখতে হয়। কখন কোন চরিত্রে অভিনয় করা লাগে সেটা আগ বাড়িয়ে বলা যায় না। আমি যে চরিত্রের জন্যই সুযোগ পাবো সেই চরিত্রেই নিজেকে মানিয়ে নিতে চাইব। তাছাড়া এখন অবধি যতগুলো ছবিতে কাজ করেছি প্রত্যেকটা ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করেছি। নিজেকে সব চরিত্রেই সবল ভাবি। জাগো নিউজ : ঢাকায় নির্মিত ছবি এবং কলকাতার ছবিগুলোর মধ্যে কী পার্থক্য চোখে পড়ে?ওম : চলচ্চিত্র তো চলচ্চিত্রই! দুই বাংলার ভাষা ও জীবনযাত্রা এক। তবে যতটুকু পার্থক্য মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে ওপার বাংলার নির্মাতারা তুলনামূলক বেশি দক্ষ। তারা জানেন দর্শক কী চান? তাদের জন্য কী ধরনের বিনোদন প্রয়োজন। এবং ওপারের ছবি নির্মাণ সামগ্রীগুলো আপগ্রেড বেশি। তবে কলকাতার সব ছবি যে ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য পাচ্ছে, তা কিন্তু না। এছাড়া আমি জানি এপারের ছবির বাজারে কিছুটা ক্রান্তিকাল চলছে, যেটা একসময় আমাদের ওপারেও ছিল। তবে সমস্যা যেখানে থাকবে সমাধানও তার রয়েছে। সকলের প্রচেষ্টায় এই সমস্যা একদিন আর থাকবে না। জাগো নিউজ : বর্তমানে কলকাতার কোনো ছবিতে কাজ করছেন না?ওম : এ মুহূর্তে ২-৩টি ছবিতে কাজের ব্যাপারে কথাবার্তা হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো নিয়ে ব্যস্ততা বাড়বে। জাগো নিউজ : অভিনেতাদের মধ্যে আপনি কাউকে ফলো করেন?ওম : ফলো করি কিনা জানি না তবে বলিউডের হৃতিক রোশনকে আমার দুর্দান্ত ভালো লাগে। আর আমাদের কলকাতার জিৎ দাকেও ভীষণ পছন্দ করি। জাগো নিউজ : অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার গল্পটা ছোট করে জানতে চাই...ওম : প্রায় একযুগ হয়ে গেলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। সেই ১৭ বছর বয়স থেকে স্ট্রাগল শুরু করেছি। আমি টেলিভিশনে অনেক ননফিকশন শো হতো- সেখানে কাজ করেছি। এছাড়া নাটক, চলচ্চিত্রে জুনিয়র আর্টিস্ট হয়েও অনেক কাজ করেছি। কিন্তু মনে ইচ্ছে ছিলো হিরো হবো। উপরওয়ালার বিশেষ সহানুভূতিতে সেই ইচ্ছে আমার পূরণ হয়েছে। এবার নিজেকে প্রমাণ করে যেতে চাই- আমি নায়ক হবো বলেই জন্মেছিলাম!এনই/এলএ/এমএস
Advertisement