একুশে বইমেলা

রোববার পর্দা উঠছে অমর একুশে বইমেলার

পহেলা ফেব্রুয়ারি রোববার শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৫। এদিন বিকেল তিনটায় বইমেলা ও সাহিত্য সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বারের মেলায় ৩৫১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মোট স্টল রয়েছে ৫৬৫টি। শনিবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।রোববার উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বইমেলা পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এনডিসি। স্বাগত ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন জার্মানির সাহিত্যিক হান্স হার্ডার, ফরাসি লেখক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, বেলজিয়ামের সাহিত্যিক ফাদার দ্যতিয়েন এবং ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, গবেষক ও ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার।উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামান। বইমেলা ও সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪ প্রদান করা হবে।বইমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের বিস্তারিত তথ্য : বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সমানে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে (৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৮টি ইউনিট) এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (২৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩৭টি ইউনিট) মিলিয়ে মোট ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৫৬৫টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এবারই প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমিসহ মোট ১১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে বইমেলায় প্রতিটির জন্য  ৪০০ বর্গফুটের প্যাভিলিয়ন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ১০৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১টি করে ইউনিট, ৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২টি ইউনিট, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩টি ইউনিট এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ অংশে ৩২টি শিশু-কিশোর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি ইউনিট, ২৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪টি ইউনিট, ১৯টি মিডিয়া ও আইটি প্রতিষ্ঠানকে ২০টি ইউনিট এবং ১৭টি অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২২টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এবার উন্মুক্ত জায়গাসহ ৭২টি লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে জায়গা করে দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করেছেন তাঁদের বই বিক্রি ও প্রদর্শনের জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে রাখা যাবে।বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০% কমিশনে, ২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশিত একাডেমির বই ৭০% কমিশনে এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বিক্রি করবে। একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে বাংলা একাডেমির ৫টি বিক্রয় কেন্দ্র থাকবে। এর একটি সম্পূর্ণ সাজানো হবে একাডেমি প্রকাশিত শিশু-কিশোরতোষ গ্রন্থ দিয়ে।অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে গত বছর থেকে এ বছর পর্যন্ত প্রয়াত দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১৩জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কবি আবুল হোসেন, দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম, ভাষাসংগ্রামী ও লেখক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন আহমদ, চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ জিল­ুর রহমান সিদ্দিকী, সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম, ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন, সাংবাদিক এবিএম মূসা, শিশুসাহিত্যিক এখ্লাসউদ্দিন আহমদ, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার, জিনবিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণে স্মৃতি-স্মারক স্থাপন করা হবে।মেলায় নজরুল মঞ্চকে ঘিরে নির্মিত শিশুকর্নারে থাকবে শিশু-কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশুকর্নারে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে মঞ্চে।অমর একুশে বইমেলা ২০১৫-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে দুটি লেখককুঞ্জ থাকবে। এছাড়া মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগানও নির্মাণ করা হয়েছে।সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে গ্রন্থমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পার্শ্বে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি এবার গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে মেলার উভয় অংশে।মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সস্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এফ এম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবরাখবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।গ্রন্থমেলার প্রবেশপথে আর্চওয়ে দিয়ে মেলায় প্রবেশের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। পাশাপাশি নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে ৭৫টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা।মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের একটি পথ এবং টিএসসি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন দিয়ে মেলা থেকে বের হওয়ার দুটি পথ থাকবে। বইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। দুটি স্টল-ওয়ারি একটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপক কর্মী থাকবেন। ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে স্টলের কর্মীদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্বচ্ছন্দে চলাফেরার সুবিধার্থে স্টলের সামনের চলাচল-পথে কমপক্ষে ২০ ফুট করে উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে।বইমেলা চলাকালে বাংলা একাডেমির ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২ ফেব্রুয়ারি সকালের অধিবেশনে সৈয়দ শামসুল হক সাহিত্য সম্মেলনের ‘ধারণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন। এছাড়া সৃষ্টিশীল সাহিত্যের তিনটি বিষয়ে তিন দিনব্যাপী দুটি করে অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন এবং বিকেল আড়াইটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন। প্রতিটি অধিবেশনই অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে।২ ফেব্রুয়ারি কথাসাহিত্য বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ৩ ফেব্রুয়ারি কবিতা বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং ৪ ফেব্রুয়ারি নাটক বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন রামেন্দু মজুমদার।সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইকুয়েডরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ভাষার প্রায় পঞ্চাশজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাহিত্য-সমালোচক অংশগ্রহণ করবেন।এঁদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, হান্স হার্ডার, ফাদার দ্যতিয়েন, মারিয়া বারেরা হেলেনা, তবিয়াস বিয়ানওনে, দাতু ড. আহমেদ কামাল আবদুল­াহ, জার্মেইন ড্রুগেনব্রুট, সিন্ডিলি ব্রাউন, পিটার নাইবার্স, জামি ঝু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেবসেন, উদয় নারায়ণ সিংহ, কবি উৎপলকুমার বসু, কবি সুবোধ সরকার প্রমুখ।উল্লেখ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের পাশাপাশি ত্রিপুরা, আসাম এবং বিহারের মৈথিলি ও ভোজপুরি ভাষার বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকও এ সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিস্মৃতপ্রায় বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান, আবৃত্তি এবং উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৪ বইমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।এছাড়া ২০১৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমবারের মতো ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।এ বারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ১০০টির বেশি নতুন বই পাওয়া যাবে। বইমেলা পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।বিএ/আরআইপি

Advertisement